৩৩ বছর পর ব্লু হাউসে

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন 'ব্লু হাউসে' আবারও ফিরছেন সদ্য নির্বাচিত পার্ক জিউন-হাই। তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবনের শুরুটা কেটেছে এ বাড়িতেই। দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত বুধবার নির্বাচনে জয়লাভের পর ব্লু হাউসের দরজা আবারও তাঁর জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে।
বিশ্বে জেন্ডার বৈষম্যের দিক থেকে উপরের দিকে অবস্থানকারী একটি দেশে জিউন-হাইয়ের জয় অনেককেই বিস্মিত করেছে।
মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবা পার্ক চুং হির হাত ধরে ব্লু হাউসে প্রথম পা রাখেন জিউন-হাই। সেটা ১৯৬১ সালের কথা। সে বছরই এক সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন চুং হি। এর পরের ১৮ বছর দেশের একচ্ছত্র ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন তিনি। অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়াকে এগিয়ে নিতে তাঁর নেতৃত্বগুণ কাজ করলেও একই সঙ্গে পেয়ে যান স্বৈরাচারীর তকমাও। বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করতে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে ১৯৭৪ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন চুং হির স্ত্রী। এরপর থেকে বাবা ক্ষমতায় থাকার বাকিটা সময় ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জিউন-হাই। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২২। ১৯৭৯ সালে গোয়েন্দা প্রধানের গুলিতে নিহত হন চুং হি।
কঠোর বাস্তবতার মধ্যে পড়েন জিউন-হাই। বিয়ে করেননি। সিউলের সোগাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশলে ডিগ্রি নেন। রাজনীতি শুরু করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পরিষদে তিনি প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৯৮ সালে। তাঁর দল রক্ষণশীল ঘরানার সেনুরি পার্টি গঠিত হয় এর আগের বছর। ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। তবে দল তাঁর পরিবর্তে মনোনয়ন দেয় বর্তমান প্রেসিডেন্ট লি মিয়ুং বাককে।
এ দফায় অবশ্য তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দল মনোনয়ন দিলেও তিক্ত অতীতও তাঁর পিছু ছাড়েনি। বাবার পরিচয় ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা সুবিধা দিলেও বেশির ভাগ সময়ই তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কালি ঢেলেছে। এই সংকট উৎরাতে গত সেপ্টেম্বরে বিবৃতি দিয়ে বাবার আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান তিনি। নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট, অতীত ভুলে জনগণও জিউন-হাইয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছে।
জিউন-হাইয়ের রোল মডেল হলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবীখ্যাত মার্গারেট থ্যাচার ও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল। তবে ব্রিটেন বা জার্মানির মতো স্বাধীনতা ভোগ করে না দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা। জেন্ডার সাম্যবিষয়ক এক সূচকে ১৩৫ দেশের মধ্যে তাদের অবস্থান ১০৮তম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো রক্ষণশীল দেশেরও পেছনে তারা। সূত্র : টেলিগ্রাফ, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.