রনি ও ভিনগ্রহের ইঁদুর by আখতারুল ইসলাম

রনি ক্লাস ফোরে পড়ে। কম্পিউটার নিয়ে তার আগ্রহের শেষ নেই। তার বড় ভাই রাজু ক্লাস নাইনে পড়ে। রাজুর একটা কম্পিউটার আছে। রনি সুযোগ পেলে রাজুর কম্পিউটার নিয়ে বসে। এতে রাজু, বাবা-মা—সবাই রনিকে বকা দেয়। মাঝেমধ্যে সে ভীষণ মন খারাপ করে।
বাবাকে রনি বলে, রাজু ভাইয়ার কম্পিউটার থাকলে আমার কেন থাকবে না? বাবা বলে, দেখো রনি, তুমি অনেক ছোট, বড় হলে তোমাকে ল্যাপটপ কিনে দেব। আর রাজুকে কম্পিউটার দিইনি, এটা আমার ছিল। এখন আমার কম কাজে লাগে বলে তোমার ভাইয়াকে ব্যবহার করতে দিয়েছি। বাবার কথায় রনি আশ্বস্ত হলেও মনে মনে রাগ করে। বাবাকে বলেই ফেলে, আমি কখন বড় হব? আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। আমি ছোট না। রনির এ কথা শুনে রাজুর বাবা হো হো করে হাসে। রনির রাগ এতে আরও বেড়ে যায়। বাবা, তুমি হাসছ কেন? বাবা বলে, না না, হাসব না, ঠিক আছে তুমি বড় হয়েছ?
রনির বড় মামা ইতালিতে থাকে। রনির কম্পিউটারের প্রতি এত আগ্রহ জেনে রনির জন্য একটা ল্যাপটপ পাঠায়। রনি ল্যাপটপ পেয়ে মহাখুশি। ফোনে মামাকে ধন্যবাদ দেয়। বাবা-মা রাজু ভাইয়া সবাইকে সে বলে, আমার ল্যাপটপ কেউ ধরবে না।
স্কুল থেকে ফিরে রনি ল্যাপটপ নিয়ে বসে। ল্যাপটপ ওপেন করে দেখে এটা ছোট হলে কী হবে, এটার ক্ষমতা অনেক বেশি। অনেক কাজ করা যায়। অনেক কিছু জানা যায়। রনি ভাবে, এর একটা নাম দেব। রাজুকে ডেকে বলে, ভাইয়া, আমার ল্যাপটপের নাম হলো ‘আর্থ’। এর অর্থ পৃথিবী, যা দিয়ে সব তথ্য জানা যায় (সেটা আমার পৃথিবী)। রনি টাচ প্যাডে আঙুল দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিলে চোখের পলক না পড়তেই স্বপ্নের একটা জগৎ তার সামনে হাজির করে আর্থ। সেই স্বপ্নের রাজ্যে বাস করে হ্যারিপটার, মিকি মাউস, সিন্ডারেলাসহ মুগ্ধকর অনেক কিছু।
বড় মামার সঙ্গে নেটে রনির প্রায়ই কথা হয়। রনি মামাকে বলে মজার মজার অ্যাডভেঞ্চার, কার্টুন, ছবি, সিনেমা পাঠাতে, গ্রহ-উপগ্রহসহ পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য, সপ্তাচার্য সব খবরাখবর পাঠাতে। মামাও ভাগনের আবদার রক্ষা করে। মামা তার জন্য এমন একটা অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি পাঠায়, সে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করে! কাহিনিটি হলো একটা বিড়াল হাঁটছে। হঠাৎ একটা গাড়ি এসে বিড়ালের সামনে থামে। গাড়ি থেকে একটা কুকুর জিজ্ঞাসা করে ভাই, মহাকাশ স্টেশন উড্ডয়ন হবে। কোন দিকে যাব? বিড়াল একগাল হাসি দিলে বলল, বোকা। ইঁদুর গাড়ির ভেতর থেকে কথাগুলো শুনছিল। মাথা তুলে বলল, মানে? বিড়াল বলে, মানে মহাকাশ স্টেশন উড্ডয়ন হবে। সেখানে যাবে অথচ পথ চিনছে না, এত বোকা প্রাণী এই গ্রহে বাস করে জানতাম না। হ্যাঁ, একটু ডান দিকে! গাড়ি ডান দিকে মোড় নিলে বিড়ালের সঙ্গে কাঠবিড়ালির দেখা হয়। কাঠবিড়ালি বিড়ালকে উদ্দেশ করে বলল, কোথায় যাবে বন্ধু? ওই তো বিগল্যান্ডে যাচ্ছি। তুমি যাবে না, ওখানে ডিমোস উপগ্রহের একটা দল আসবে, আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসবে। দুজনে হাঁটছে...
হঠাৎ রাজু ডাক দেয়—রনি, স্কুলের সময় হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রনি আর্থ বন্ধ করে স্কুলে যেতে তৈরি হয়। রাজুকে কাহিনিটা বলে, এর শেষ দেখতে না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে।
রাতে ঘুমোতে গেলে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। রনির স্বপ্নের রাজ্যে সবকিছু যেন অন্য রকম হয়ে যায়। কুটুর কুটুর ইঁদুর ডাকার মতো একটা শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। সে উঠে বসে বিছানায়। জিরো পাওয়ার বাতির আলোয় সে দেখল, ছায়ার মতো কী যেন তার ঘরের ভেতর নড়াচড়া করছে। হঠাৎ সে ভয় পেয়ে গেল। চোর-টোর নাকি জানালার গ্রিল কাটছে, নাকি ঘরের ভেতর কোথাও হয়তো ঘাপটি মেরে বসে আছে। তার শরীর শিউরে ওঠে। সে দেখতে পেল একটা বড় ধরনের ইঁদুর! ইঁদুর দেখে সে এক নিমেষে ভাবে, এই পাঁচতলার ফ্লোরে ইঁদুর আসবে কোথা থেকে। হঠাৎ তার মনে হলো ল্যাপটপে গাড়িতে যে ইঁদুর দেখেছে, হুবহু তার মতো ইঁদুর। রনি ভাবে, সে তো ল্যাপটপের ছবি, অন্য গ্রহের কাহিনি, সেটা এখানে আসবে কী করে! রনি বলে ফেলে ইঁদুর। ইঁদুরটা বলে, শোনো, আমি ইঁদুর না। আমি ডিমোস উপগ্রহের প্রাণী। ইঁদুরের কথা শুনে সে ভয়ে ইঁদুর! ইঁদুর! বলে চিৎকার শুরু করে। এদিকে ইঁদুরটা কেমন করে যেন জানালা দিয়ে উড়ে চলে যায়। চিৎকার শুনে মা-বাবা, রাজু দৌড়ে আসে রনির রুমে, কী হয়েছে রনি....সবার একই কথা। রনি ভয়ে ঘামছে। পরে বলল, বাবা ইঁদুর। বাবা বলছে কোথায় ইঁদুর। চলে গেছে, পরে সব ঘটনা শুনে বাবা বলে, এটা তোমার স্বপ্ন।
পরদিন ল্যাপটপ ওপেন করে ই-মেইল চেক করে দেখে কে যেন তাকে একটা বার্তা পাঠায়। বার্তায় আছে, ‘আমি এসেছিলাম তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। তোমাকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানাতে। কিন্তু তুমি ভয় পেলে গেলে, ভয় পেলে কিছু হয় না।’—ইতি তোমার ডাকা ইঁদুর, ভিনগ্রহ।
রনি এরপর ভিনগ্রহের প্রাণীদের ঠিকানা খুঁজে বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.