মেধাবী মুখপ্রিয়াংকা বড়ুয়া- শিক্ষকতা আমার স্বপ্ন by আলতাফ শাহনেওয়াজ

প্রিয়াংকা বড়ুয়ার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। কিন্তু বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গার নানা স্কুলে পড়েছেন তিনি। মাদারীপুরের কালকিনি কিশলয় বিদ্যানিকেতনে যখন অ-আ-ক-খ শেখার জন্য ভর্তি হয়েছেন, তখন থেকেই ভালো শিক্ষার্থীর তকমাটা বেশ ভালোভাবেই সেঁটে গেল তাঁর গায়ে।


এরপর চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠার সময় কেমন করে যেন ক্রমিক নম্বরটা একটু পিছিয়ে গেল, এক লাফে ১ থেকে ক্রমিক হয়ে গেল ৪, তখন ছোট্ট প্রিয়াংকার সে কী কান্না! মা-বাবা বোঝান, তবু কান্না থামে না।
এমন কান্না জীবনে আরও একবার কেঁদেছেন তিনি, যখন বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ব্যর্থ হওয়ার পর অগত্যা ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। তবে এই ‘অগত্যা প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি’ হওয়া পরবর্তী জীবনে যেন শাপেবর হয়েছে তাঁর জন্য। কেননা এ বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর—উভয় শ্রেণীতে সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়ে প্রথম হয়েছেন তিনি। স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় সুরাইয়া মেহেজাবিনের সঙ্গে যৌথভাবে পেয়েছেন সর্বোচ্চ জিপিএ ৩ দশমিক ৯১ এবং ২০১০ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় জিপিএ ৪-এর মধ্যে ৪ অর্জন করেছেন একাই।
এখন প্রিয়াংকার চোখে নতুন স্বপ্নের ঝালর—ভবিষ্যতে নিজেকে শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান তিনি। বলেন, ‘ভালো কিছু করতে চাই। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের মতো দেশের জন্য আমিও কিছু করতে চাই।’ সম্প্রতি গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন আইসিডিডিআর-বিতে।
বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক—দুই পরীক্ষাতেই পেয়েছেন জিপিএ-৫। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ালেন প্রিয়াংকা। ‘প্রথম বর্ষ পরীক্ষার পর দেখি দ্বিতীয় হয়েছি। এরপর দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় ঘটল সেই অবাক ব্যাপার—৪-এর মধ্যে ৪ পেয়ে প্রথম হলাম আমি!’ বলেন প্রিয়াংকা।
পরের গল্প শুধুই প্রথম হয়ে এগিয়ে যাওয়ার। তবে এ জন্য সব সময় পাঠ্যবইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকেননি তিনি। ফাঁকে ফাঁকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বর্তমানের মুহম্মদ জাফর ইকবালের গল্প-উপন্যাসে ঢুঁ মারা তাঁর নিয়মিত অভ্যাস। আর বিজ্ঞানের বইগুলো?
‘বিজ্ঞানবিষয়ক বই পড়ে মজা পাই খুব। সাহিত্য ও বিজ্ঞানের বই আমার পাঠ্যক্ষেত্রে ভালো ফল অর্জনের ব্যাপারেও সহায়তা করেছে। নিয়মিত পড়ালেখা করেছি, গ্রুপ স্টাডি করেছি, আগে সব বিষয় বুঝে তারপর পরীক্ষার খাতায় লিখেছি।’ নিজের ভালো ফলের কৌশল এভাবেই খোলাসা করলেন প্রিয়াংকা।
প্রিয়াংকার বাবা বাংলাদেশ বনশিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশান্তভূষণ বড়ুয়া। মায়ের নাম শীলা বড়ুয়া। এই ভালো ফলের পেছনে কাদের অবদান সবচেয়ে বেশি? প্রিয়াংকা জানান, তাঁর মা-বাবা ও ছোট বোন অগ্নিলার কথা। সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষকেরা প্র্রতিনিয়ত সাহায্য করেছেন, উৎসাহ জুগিয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া কি এত ভালো ফল সম্ভব ছিল আমার।’
প্রিয়াংকা বড়ুয়ার খেরোখাতায় সফলতার চিহ্ন আছে ঢের। কিন্তু প্রকৌশলী হওয়া হলো না—এ নিয়ে মনে কি কোনো দুঃখ আছে তাঁর? প্রশ্ন শুনে প্রথমে না-না ভঙ্গিতে প্রবল বেগে মাথা নাড়লেন প্রিয়াংকা। এরপর যখন বললেন, ‘সবাইকে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হতে হবে, এমন তো নয়, বিষয় যা-ই হোক না কেন ভালো ফলই আসল,’ তখন মনে হলো, এমন কথা তো কেবল তাঁর মুখেই মানায়।

No comments

Powered by Blogger.