সিলেট বিভাগ- অধিকাংশ স্কুলে ব্যবহারিক ক্লাস হয় না by সুমনকুমার দাশ

সিলেট বিভাগের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। বেশ কিছু বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগারই নেই। এ কারণে ওই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বিষয় সম্পর্কে কোনো ধরনের জ্ঞান তৈরি হচ্ছে না।


শিক্ষা বোর্ড এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর যথাযথভাবে তদারকি না করায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না বলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন।
সিলেট বিভাগের চার জেলার শতাধিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এগুলোর মধ্যে ৫০-৬০টি বিদ্যালয়েই বিজ্ঞানাগার এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা করার কোনো সরঞ্জাম নেই। তাই এসব বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসও নেওয়া হয় না।
সিলেটে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বিভাগে ২০টি সরকারি এবং ৮৮৫টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৬০০ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগীয় জেলা ও উপজেলা শহরের বিদ্যালয়গুলো ছাড়া কোনো বিদ্যালয়েই নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়গুলোতে ব্যবহারিক ক্লাস না হওয়ায় মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রে ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেক পরীক্ষার্থী সরঞ্জাম চিনতে পারে না।
সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা মোমিন উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম জিলানী জানায়, ব্যবহারিক ক্লাস নিয়মিত হয় না। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সিরাজ উদ্দিন জানান, বিজ্ঞানাগার না থাকায় শ্রেণীকক্ষে মাঝেমধ্যে ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষায় যাতে শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য যন্ত্রপাতিগুলোও চিনিয়ে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলে, ‘বিজ্ঞানের বইয়ে স্লাইড ক্যালিপার্স, কম্পাসসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নাম ও ছবি দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে এ যন্ত্রগুলো কখনো দেখিনি। এমনকি আমাদের বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানগার পর্যন্ত নেই। তাই কোনো দিন ব্যবহারিক ক্লাসও করতে পারিনি।’
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার এক ছাত্রের অভিভাবক রামকৃষ্ণ দাশ জানান, ব্যবহারিক ক্লাস না করেই অনেক শিক্ষার্থী মূল পরীক্ষায় ওই বিষয়ে শতভাগ নম্বর পাচ্ছে। এতে করে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে হাতে-কলমে পাঠ না থাকায় ওই সব শিক্ষার্থীর সঠিক শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘আমার উপজেলায় ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই ঠিকমতো ব্যবহারিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয় না। কিছুদিন আগে আমি উপজেলা সদরের কাসিম আলী উচ্চবিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পাই, ওই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগারটি দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।’
কাসিম আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের একটি উন্নতমানের বিজ্ঞানাগার রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার ব্যবহারিক ক্লাস নিই। কিন্তু যেদিন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছিলেন, সেদিন শিক্ষকদের সঙ্গে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আবদুল মান্নান খান দাবি করেন, ‘আমরা বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত তদারক করি। ভবিষ্যতে ব্যবহারিক ক্লাস যাতে প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে নিয়মিত করা হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনাও পাঠানো হবে।’
গত মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিভাগের চারটি জেলার একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বরত সচিব ও পরীক্ষকেরা জানান, অনেক পরীক্ষার্থী সরঞ্জাম না চেনায় বিপাকে পড়ছে। কোনো ধরনের জ্ঞান না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সাদা খাতা জমা দিয়েছে। এমনকি কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই ব্যবহারিক বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা নেই।
মাধ্যমিক অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহমদ জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের শিগগিরই নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.