মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব অনুমোদন-এসইসির ক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্য ফাঁস করলে দণ্ড

শেয়ারবাজারের অনিয়ম ও কারসাজি ঠেকাতে এবং বাজারকে শক্তিশালী করতে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করলে জেল-জরিমানারও বিধান করা হচ্ছে।


স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদকে প্রশাসনিক কাঠামো থেকে আলাদা করার বহুল প্রত্যাশিত বিষয়টিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ-সংক্রান্ত তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে আছে- 'সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১২' এবং 'দি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (সংশোধন) আইন-২০১২। এ ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদকে প্রশাসনিক কাঠামো থেকে আলাদা করার লক্ষ্যে 'দি এক্সচেঞ্জেস (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) অ্যাক্ট-২০১২' নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০১২ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর বিশেষ এ আইনটি প্রণয়ন করা হয় এবং এ আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ১২ অক্টোবর। এই আইনের অধীনেই দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপিত হয়েছিল। আইনটি অনুমোদনের ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ দ্রুত বাড়ানোর স্বার্থে এই আইনের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ল।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, এসব প্রস্তাব সংসদে পাস হলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নতুন নাম হবে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বাংলাদেশ।
১৯৯৩ সালের সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন সংশোধন হলে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদ তিন বছর থেকে বেড়ে হবে চার বছর এবং পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালত (ট্রাইব্যুনাল) গঠন করা যাবে। খসড়া আইনে কমিশন প্রয়োজনে যেকোনো ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য চাওয়ার অধিকার দেওয়ার পাশাপাশি অন্য কোনো দেশের সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি করারও অধিকার দেওয়া হয়েছে। আইন সংশোধন হলে কমিশন প্রয়োজনে উপদেষ্টা বা পরামর্শক এবং অনুমোদিত জনবল নিয়োগ দিতে পারবে।
মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুঁইয়া বলেন, দ্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০১২-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ায় এসইসির কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে সাবেক বা বর্তমান কোনো কমিশনার বা চেয়ারম্যান কোনো গোপনীয়তা প্রকাশ করতে পারবেন না। গোপন তথ্য প্রকাশ করলে বা গোপনীয়তা নষ্ট করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পুঁজিবাজারের দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী আইন। বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে এ ধরনের আইন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে এরপর মন্ত্রিসভায় এ আইনটি উত্থাপিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথক করাই এই আইনের মূল কথা। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পরে স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচালক স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হবেন। স্টক এক্সচেঞ্জগুলো আইপিওর মাধ্যমে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে পুঁজি উত্তোলন করতে পারবে। এ ছাড়া একই স্টক এক্সচেঞ্জ বা অন্য স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান সদস্য যারা আছে তারা কোনো ইস্যুকৃত শেয়ারের ৪০ ভাগের বেশি ধারণ করতে পারবে না। খসড়ায় স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টরদের কাছে শেয়ার বিক্রয় করতে না পারার বিধান রাখা হয়েছে।
এ ছাড়াও সড়ক তহবিল গঠনের বিধান রেখে সড়ক তহবিল বোর্ড আইন ২০১২-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।

No comments

Powered by Blogger.