সাক্ষাৎকার-দু'তিন বছরে বিমান লাভের মুখ দেখবে by লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি

সাক্ষাৎকার গ্রহণ :আলতাব হোসেন সমকাল : সম্প্রতি অর্থর্মন্ত্রী বলেছেন, অদক্ষতা এবং অব্যবস্থাপনার জন্য অনেক আগেই বিমানকে বিলুপ্ত করা উচিত ছিল। বিমানের মতো অথর্ব প্রতিষ্ঠান আর একটিও নেই বলেও অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ। সংসদীয় কমিটিও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করেছে। বিমানমন্ত্রী হিসেবে এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?


ফারুক খান : ৪৩ বছরে বিমান মাত্র গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর কিছুটা লাভের মুখ দেখে। সে সময় বিমানের জনবল ছাঁটাইয়ের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক সরকার হয়ে লোকবল ছাঁটাই বা জোর-জবরদস্তি করতে পারি না। তবে বিমানের বর্তমান অবস্থার কারণ দীর্ঘদিনের অবহেলা। পুরনো উড়োজাহাজ দিয়ে লাভ করা সম্ভব নয়। অথচ বিমানে লাভজনক ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যা, প্রবাসী জনশক্তি মিলিয়ে এভিয়েশন ব্যবসায় আমাদের ভালো অবস্থান থাকার কথা। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অত্যন্ত কৌশলগত জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান। দুর্ভাগ্যবশত অতীতে বিমানের এ বিপুল সুযোগকে কাজে লাগাতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে আজকে বিমানের এই নাজুক হাল। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার নতুন বিমান কেনেনি। বর্তমান সরকার দুটি সুপরিসর বোয়িং কিনেছে। আগামী বছর আরও দুটি আসবে। আমার বিশ্বাস, দু'তিন বছরের মধ্যে বিমান লাভের মুখ দেখবে।
সমকাল : গত ৪ বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বিমান। নতুন দুটি উড়োজাহাজে গত ৭ মাসে বিমান লোকসান দিয়েছে ৮২ কোটি টাকা। এভাবে লোকসান হচ্ছে কেন?
ফারুক খান : বর্তমানে আমাদের ১০টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ভাড়া করা। অবশিষ্ট সাতটির মধ্যে দুটি নতুন। অন্যগুলো ৩৫ বছরের পুরনো। এই পুরনো উড়োজাহাজগুলো একদিকে প্রচুর জ্বালানি খরচ করে, অন্যদিকে হঠাৎ বিকল হয়ে ফ্লাইট সিডিউলে বিপর্যয় ঘটায়। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিমানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিমান কোম্পানি ছাড়া প্রায় সব এয়ারলাইন্স লোকসানে চলছে। ভারতের প্রতিটি বিমান কোম্পানি প্রচুর লোকসান দিচ্ছে। কিংফিশার দেউলিয়া হয়ে গেছে। এয়ার ইন্ডিয়া গত বছর ১৪ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। কিছুদিন আগে আমেরিকার ইউনাইটেড এবং কন্টিনেন্টাল কোম্পানি দুটি প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে 'মার্জ' হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সও ফ্লাইট পরিচালনা করে তেমন লাভ করতে পারছে না। গত এক বছরে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সে তুলনায় বিমানের লোকসানের পরিমাণ কম। বিমানের লোকসানের মূল কারণ পুরনো উড়োজাহাজ।
সমকাল : অন্তহীন সমস্যা, লোকসান, অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও মাথাভারি জনবলের কারণে ছোট হয়ে আসছে বিমানের আকাশ। এক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে ১৭টি আন্তর্জাতিক রুট। এ অবস্থায় বিমানকে লাভজনক করতে কী ধরনের পরিকল্পনাগুলো নিয়েছেন?
ফারুক খান : আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি তাতে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বিমান লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। বিমান দুটি বোয়িং কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টাকা ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত। ২০১৩ সালের শেষ দিকে বা ২০১৪ সালের প্রথম দিকে দুটি বড় উড়োজাহাজ পেলে ঢাকা-চায়না-জাপান, ঢাকা-সিঙ্গাপুর-অস্ট্রেলিয়া এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ রুটগুলোতে আমরা ভালো যাত্রী পাব। এ ছাড়া শ্রীলংকা-মালদ্বীপ এসব আঞ্চলিক ফ্লাইটও পরিচালনা করতে পারব। সেই সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে লাভজনক রুট মধ্যপ্রাচ্যের সার্ভিসগুলোও ভালো করতে পারব। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি মানের কিছু উড়োজাহাজ কেনা হচ্ছে। পর্যাপ্ত উড়োজাহাজ পেলে বিমানকে লাভজনক করা সম্ভব।
সমকাল : কোম্পানি করার পর ব্যাপক জনবল ছাঁটাই করলেও বর্তমানে জনবল আগের চেয়েও বেশি। গুটিকয়েক উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য এই বিশাল জনবল এখন বিমানের জন্য বড় বোঝা বলে মনে করা হচ্ছে।
ফারুক খান :মাত্র ১০টি উড়োজাহাজের জন্য প্রায় ছয় হাজার জনবল। তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বিমানকর্মীদের বেতন-ভাতায় অনেক টাকা যাচ্ছে। বিমানের ইতিহাসে দুই বছর লাভজনক ছিল। সেই দুই বছর গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল। তারা হাজারখানেক কর্মীকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ছাঁটাই করেছিল। জনগণের কাছে দায়বদ্ধহীন সরকার যেভাবে সহজেই লোকজন ছাঁটাই করতে পারে, একটি গণতান্ত্রিক সরকার সেটি সহজে করতে পারে না। অন্যদিকে উচ্চ আদালত ছাঁটাই করা কর্মীদের পুনর্নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বয়স ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের নেবে। তবে এটা যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে আমরা সেই পরামর্শ দিয়েছি। এ ছাড়া আগামী বছর বিমান বহরে আরও বড় দুটি প্লেন ও ছোট কয়েকটি প্লেন যোগ হবে। তখন জনবল লাগবে। তাই বর্তমান জনবলকে প্রশিক্ষিত করলে দ্রুত অপারেশনে যাওয়া যাবে।
সমকাল :বিমানের এয়ারক্রাফট লিজ নিয়ে প্রায়ই দুর্নীতি হচ্ছে। খোদ সরকারের একটি বাণিজ্যিক নিরীক্ষায় ফুটে উঠেছে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র। বিশেষ করে হজ ফ্লাইট শুরুর আগে উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে দুর্নীতি বেশি হয়ে থাকে। লিজ নিয়ে দুর্নীতি বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কেন?
ফারুক খান : সুস্পষ্ট কোনো দুর্নীতির অভিযোগ এখনও আমি পাইনি। দুর্নীতির কথা শুনছি। তাই আমাদের সতর্ক অবস্থান রয়েছে। যেমন সিঙ্গাপুরে একটা এয়ারবাস সম্পর্কে দুর্নীতির কথা শোনা গেল। পরে দেখলাম এখানে যতটা না দুর্নীতি তার চেয়ে বড় হচ্ছে অব্যবস্থাপনা। যেমন একজন জুনিয়র অফিসার একটি সিদ্ধান্ত দিয়ে দিল কিন্তু এ সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের। একে বিমানের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতাও বলতে পারেন। এ কারণে একজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। উচ্চতর তদন্ত চলছে। তদন্তে আরও কারও নাম এলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার তো হজ ফ্লাইটের জন্য বিমানই পাওয়া যায়নি। ফলে দুর্নীতির সব অভিযোগ সঠিক নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি যে হচ্ছে না তা অস্বীকার করছি না।
সমকাল : অনেকে নিজেরা চলাচলের জন্য হেলিকপ্টারের লাইসেন্স নিয়ে এখন অনুমোদন ছাড়াই বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করছে। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন আইন ও একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সিভিল এভিয়েশন আইনে এসব দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে কঠোর হচ্ছেন না কেন?
ফারুক খান :দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও স্বার্থের বিষয়টি সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে। এ জন্য গত এপ্রিলে দেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানি জিএমজি এয়ারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো উড়োজাহাজ চালাতে দিচ্ছি না। যারা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজের জন্য উড়োজাহাজ এনে ব্যবসা করছে, এটা তাদের ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এ নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। আমরা দেখব উড়োজাহাজটি ক্রটিপূর্ণ কি-না এবং তারা যাত্রীদের সঙ্গে কোনো প্রতারণা করছে কি-না। এ বিষয়ে কোনো ছাড়ের সুযোগ নেই।
সমকাল : উড়োজাহাজ ব্যবসার নামে মূলত চলছে বিমানবন্দরের সোনার টুকরো জমি দখলের মহোৎসব। নামমাত্র মূল্যে জমি লিজ নিয়ে ডিসকো ক্লাব, নাইট ক্লাব বসানোরও পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ফারুক খান :বর্তমান সরকার সিভিল এভিয়েশনের কোনো জমি বেহাত হতে দেবে না। বিমানবন্দরে কোনো নাইট ক্লাব বা ডিসকো হবে না। আমরা শুধু হোটেল নির্মাণের জন্য জমি লিজ দেব। ফ্লাইং ক্লাবসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জমি লিজ নিতে চাইলেও তা বাতিল করা হয়েছে।
সমকাল : বিমানের পরিচালনা পর্ষদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে কিছু বলুন।
ফারুক খান : সরকার ব্যবসায়ী, বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সেক্টরের লোকজন দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে। সরকার পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে পারে। বিমানের খারাপ অবস্থার জন্য চারটি কারণ চিহ্নিত করা যায়। পরিচালনা পর্ষদকে আরও গতিশীল করতে হবে। বিমানকে সঠিক অবস্থ্থানে ফিরিয়ে আনতে শুধু পরিচালনা পর্ষদকে পুনর্গঠন করলে হবে না। দরকার সব সমস্যার সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ। নতুন পরিচালনা পর্ষদ করলেই যদি সমাধান হতো তাহলে আমাদের কাজ সহজ হয়ে যেত। এ ছাড়া কারও সঙ্গে কারও মতবিরোধ থাকতেই পারে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের। তারা সম্পূর্ণ নতুন উড়োজাহাজ নিয়ে আসে, জ্বালানি তেল পায় কম দামে, নতুন ইঞ্জিনে তেল খরচও হয় কম। অন্যদিকে আমরা তিন যুগ আগের উড়োজাহাজ নিয়ে কাজ করছি। এগুলোও তো বিবেচনায় নিতে হবে। বিমান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সুপারিশকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সমকাল : শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ঘিরে চোরাচালান ও আদম পাচার হচ্ছে। কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র প্রতিদিন বিমানবন্দর দিয়ে মূল্যবান সামগ্রী চুরি করছে।
ফারুক খান :বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ চুরি হচ্ছে এটা ঠিক। তবে আগের চেয়ে অনেক কমেছে। বিমানবন্দরে আমরা নতুন স্ক্যানিং মেশিন বসিয়েছি। ফলে এখন কচ্ছপ, সোনাসহ নানা জিনিস ধরা পড়ছে। আমরা চুরি রোধে আরও পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সমকাল : হজ ফ্লাইটের কী অবস্থা বলুন?
ফারুক খান : ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ হজযাত্রী ভালোভাবেই পেঁৗছেছেন। এবারই প্রথম সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি হজ ফ্লাইট চালানো হয়েছে। আশা করছি, বাকিদেরও কোনো সমস্যা হবে না। তবে হজ ফ্লাইট চালাতে গিয়ে অন্য কয়েকটি রুট বন্ধ করতে হয়েছে। বিমানকে লাভজনক করতেই এটা করা হয়েছে। অনেকেই বলেন, থার্ড ক্যারিয়ার ওপেন করলে এ সমস্যা হতো না; এটা ঠিক নয়। কারণ যেখানে আমাদের পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানের লাভের সুযোগ আছে, সেটা কেন আমরা করব না। এ নিয়ে আটাব ও হজ এজেন্সিগুলো ব্যবসা করার জন্য অহেতুক চাপ দিয়েছে। আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি, হজ নিয়ে তারা যেন কোনো অনৈতিক বাণিজ্য না করেন।
সমকাল : বিমান নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
ফারুক খান : আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিমান কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিচ্ছি। কাজ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব বিমান কর্তৃপক্ষের। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিমানকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়েছে। তাই তাদের কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে বিমান ক্রয়ে সরকার গ্যারান্টার হবে, যা কাজ তাদেরই করতে হবে। যে রুটে লস হচ্ছে সেগুলো কমিয়ে বা বন্ধ করে দিতে হবে। লাভজনক রুটগুলোয় যাত্রীসেবা বাড়িয়ে ঠিক সময়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বিমান পরিচালনা পর্ষদকে আরও গতিশীল হতে হবে। আমরা রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট হচ্ছে। সিলেট বিমানবন্দরের মান বাড়ানো হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিলেট-লন্ডন রুটে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। খুব শিগগির ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমান চলাচল শুরু হবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার জন্য সমীক্ষা করা হচ্ছে। গত বছর প্রায় ৪৫ লাখ যাত্রী ওঠানামা করেছে ঢাকায়।
সমকাল : আপনাকে ধন্যবাদ।
ফারুক খান :সমকালের পাঠকদের ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.