দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক- রেলওয়েগেট কেলেঙ্কারি

দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাবেক এপিএসের গাড়িচালক আজম খানের বক্তব্য সাক্ষ্য আইনের দোহাই দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান যেভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করেছেন, তা সচেতন মহলকে অবাক করেছে।


একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিখোঁজ থাকা আজম খান দাবি করেছেন, পিলখানায় উদ্ধার হওয়া টাকার থলে রেলমন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিল। এই বক্তব্যকে বানোয়াট বলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যেভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তা বোধগম্য। কিন্তু তদন্ত কিংবা ন্যূনতম যাচাই-বাছাই ছাড়াই খোদ দুদক চেয়ারম্যান যেভাবে অভিযোগের সত্যতা নাকচ করে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন, তা নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। কারণ, তিনি যে জায়গায় রয়েছেন, সেখান থেকে ‘টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্য’কে সাক্ষ্য আইনের আলোকে বিচার করার কথা নয়। প্রাথমিক তথ্য বা অভিযোগকে তাৎক্ষণিকভাবে সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী আজমের বক্তব্য আদালত বিবেচনায় নেবেন না, এই যুক্তিতে দুদকের কাছেও তা যাচাইযোগ্য নয় বলে দুদক চেয়ারম্যান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে রেলওয়েগেট কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে তাঁর সংস্থার দেওয়া আগের সাফাই বক্তব্য আরও প্রশ্নবিদ্ধ হলো।
উপরন্তু, দুদক চেয়ারম্যানের আরও একটি অসতর্ক মন্তব্য অনেকের কাছে বৈষম্যমূলক বা জাতপাতের নিরিখে বিচার্য হতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘মুখের কথায় যদি সব হতো, তা হলে ড্রাইভার, চাপরাশির কথায় দেশের সব চলত।’ আমরা অবশ্য তাঁর এই অভিমতের সঙ্গে একমত হতে পারি যে ‘ওই ড্রাইভারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কাউকে দোষী বলতে পারি না।’ অর্থাৎ দুদক চেয়ারম্যান স্বীকার করলেন, যে কারও এ ধরনের বক্তব্যের ভিত্তিতে কাউকে যেমন দোষী সাব্যস্ত করা যায় না, তেমনি কাউকে নির্দোষ বিবেচনা করাও চলে না। আজমের বক্তব্য বা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের উচিত হবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আন্তরিক হওয়া এবং জনগণের কাছেও স্পষ্টভাবে মনোভাব প্রকাশ করা। গত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় সরকারের প্রভাবশালী মহল-সংশ্লিষ্ট কিংবা ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থের সংঘাত রয়েছে—এমন সব ক্ষেত্রের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুদক স্বাধীন ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত অনুষ্ঠানে তাকে বারবার ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একই তালে পা ফেলতে দেখা গেছে। নখদন্তহীন দুদকের কমিশনাররা নখদন্ত অর্জনে সচেষ্ট হয়েছেন বলেও প্রতীয়মান হয় না।
দুদকের উচিত হবে, রেলওয়ে কেলেঙ্কারির সত্য উদ্ঘাটনে গাড়িচালক আজমের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মন্ত্রীর অবস্থানকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ না করেও সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে গাড়িচালককে ২০১১ সালের তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইনে রক্ষাকবচ দেওয়ার দায়িত্ব দুদকের। দুদক চেয়ারম্যান সাক্ষ্য আইনের বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এমনকি তিনি যেভাবে আজমের অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, সেটা দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর অনুসরণীয় আচরণবিধি এবং একাধিক প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.