মরিয়ার, হিচকক, মনিরত্নম আর ঐশ্বরিয়া

এতদিনে মনের মতন একখান চিত্রনাট্য পেয়েছিলেন নায়িকা; ক্ষণিক বিরতির পর তাই অনেকটা নিজের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়- এমন কাহিনি নিয়েই রুপোলি পর্দায় ফেরার ফন্দি ভাঁজছিলেন তিনি! তাও কপালে সইল না?

আসলে নিন্দুকদের মুখে আচ্ছাসে ঝামা ঘষে আবার ছায়াছবির রুপোলি পর্দায় ফিরে আসছেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন- এটা একদম পাকা খবর হয়েই ছিল। মোটের ওপর নেহাতই একখান মামুলি খবর; ঐশ্বরিয়া পেশায় অভিনেত্রী- তিনি তার তিলে তিলে তৈরি করা জায়গা খামোখা ছেড়ে দেবেনই বা কেন? মা হওয়ার সময় সব মেয়েরাই কাজেকম্মে ছুটি নেয়; ঐশ্বরিয়াও নিয়েছিলেন। কাজেই খবরটা নিয়ে ঢাকঢোল পেটানোর মতো কিছু আছে কি?
আলবাত আছে। যে ছবিতে দেখা যাবে মাদার বচ্চনকে এতদিন পর, সেই ছবির গল্পের নায়িকার পরিস্থিতির সঙ্গে ভালই মিল ছিল ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে বাজার গরম করা গুজগুজ-ফুসফুসের! তা, ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে বাজার কী বলে? কী বলে না- সেটা বলাই বোধহয় ভাল হবে। সবাই বলে, যোগ্যতার চেয়ে কিছু বেশিই পেয়ে গিয়েছেন ঐশ্বরিয়া; এতটাও সাফল্যের হকদার তিনি নন! এও রটে পাঁচকানে যে, বচ্চন-পরিবারের বধূ হওয়ার মতো ব্যক্তিত্বও তার নেই; ওটা নেহাতই পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা সুযোগ! পাশাপাশি, ইদানিং আরও একটা অভিযোগ আছে নায়িকার বিরুদ্ধে। এই ঐশ্বরিয়া আগের ঐশ্বরিয়ার মতো অতটাও গ্লাম্যারাস নন!

এইসব উড়ো খই আঁচল পেতে ধরাটা যে কোনও কাজের কথা নয়, তা তো সবাই জানে! লোকে কী না বলে- সে কথায় কান দিতে নেই। তা বলে কি একটু-আধটু মাথা গরম হয় না, নাকি ভাল করে ঠুকে দিতে সাধ যায় না নিন্দুকদের? অনেক দিন এসব সহ্য করেছেন ঐশ্বরিয়া; এবার মুখ খুলেছিলেন তিনি। তবে প্রেস কনফারেন্স ডেকে নয়; আগামী ছবির গল্প দিয়ে! কী সেই ছবি?

ছবির গল্পটা পরিচালকের নিজস্ব নয়; ১৯৩৮ সালের জনপ্রিয় ফরাসি লেখিকা দ্যু মরিয়ার-এর ‘রেবেকা’ থেকে অনুপ্রাণিত। আর পরিচালকের নাম মনি রত্নম। সেই গল্প বলছে, রেবেকা নামে এক মধ্যবিত্ত মেয়ে কপাল  জোরে বিয়ে হয়ে উঠেছিল এক অভিজাত পরিবারে। আর সেখান থেকেই শুরু হল বিপত্তি! ম্যাক্স-এর নববিবাহিতা বউকে নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকলেও গভর্নেস মিসেস ডেনভার্স দু’ চক্ষে দেখতে পারতেন না বধূটিকে। কথায় কথায় তিনি মনে করিয়ে দিতেন, এই মেয়েটি ম্যাক্সের আগের বউ রেবেকার মতো সুন্দরী নয়, এই মেয়েটি অভিজাত পরিবারের বধূ হওয়ার যোগ্যই নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। রেবেকার ছায়ার তলায় থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে কীভাবে রেবেকা-রহস্যের সমাধান করল নববিবাহিতা, সেটাই ‘রেবেকা’ উপন্যাসের মজা! এবার বোঝা যাচ্ছে তো, কেন এই চিত্রনাট্য কিছুটা হলেও খাপ খেয়ে যায় ঐশ্বরিয়ার পরিস্থিতির সঙ্গে?

অবশ্য ঐশ্বরিয়া আছেন, আর কোনো বিতর্ক নেই তার অভিনীত ছবি নিয়ে-তাও কি হতে পারে? কখনই পারে না। তা, এবারের বিতর্কটা কী? না, দু'-দুটো বিতর্ক ইতিমধ্যেই জমে উঠেছে তৈরি না-হওয়া এই ছবিটাকে ঘিরে। প্রথমত, মনি রত্নম-এর এই ‘রেবেকা’ নাকি হতে চলেছে আলফ্রেড হিচকক-এর ১৯৪০ সালের ওই একই নামের ছবির টুকলি! সেই ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ছিপছিপে সুন্দরী জোন ফন্টেন; সেই ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস মেনেই বেছে নেওয়া হয়েছে ঐশ্বরিয়াকে। অবশ্য, ছবির শেষটা মূল উপন্যাসে যা ছিল, তা প্রযোজকদের দাবি মেনে ছবিতে রাখতে পারেননি হিচকক। ম্যাক্স রেবেকাকে খুন করলেও হিচককের ছবিতে সেই মৃত্যুকে দেখানো হয়েছিল আকস্মিক এবং সুখী দাম্পত্যে ফিরে গিয়েছিল নায়ক-নায়িকা। তা, মনির ছবিতে শেষটা কেমন হবে? এই জায়গা থেকেই শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় বিতর্ক- ছবিটা আদৌ হচ্ছে কিনা!

সে কী? ছবি হচ্ছে না? গুজব যাই রটুক না কেন, মনি কিন্তু ঝেড়ে অস্বীকার করছেন আগামী এই ছবির কথা! 'এখনও কদল ছবি নিয়ে ভীষণই ব্যস্ত হয়ে আছে মনি, অন্য ছবি নিয়ে ভাবার সময় কোথায়', জানাচ্ছেন মনিজায়া সুহাসিনী! 'কদল' ছবি এখন পোস্ট-প্রোডাকশনের মুখে; সেটা শেষ হবে, তার সাফল্য উপভোগ করবেন, খানিক বিশ্রাম নেবেন- তার পরে না নতুন ছবির পরিকল্পনা! তাহলে এখন কী করবেন ঐশ্বরিয়া?

সে যাই হোক, ঐশ্বরিয়ার পক্ষে যে এই ছবি লাভজনক হতো-তাতে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। নায়িকার প্রথম ছবি ‘ইরুভর’-ও মনি রত্নমের হাত ধরেই; এবং যখনই প্রয়োজন পড়েছে, নায়িকার ডুবন্ত কেরিয়ারকে ‘গুরু’, ‘রাবণ’ প্রভৃতি একের পর এক হিট ছবি দিয়ে টেনে তুলেছেন মনি। এবারেও যে তার ব্যতিক্রম হত না- এমনটা আশা করাই যায়। কিন্তু ছবির ভবিষ্যত তো ঝুলে আছে শূন্যে! কী পরিণতি হবে নায়িকা এবং তার এই ছবির-সময়ই কেবল সেটার জবাব দেবে। সূত্র: ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.