খেতে বসে বাবার দায়ের কোপে প্রাণ গেল দুই শিশুর

বেসরকারি সংস্থার ঋণে জর্জরিত হয়ে জাকির হোসেন হাওলাদার (৩৮) নামের এক ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তাঁর নিষ্পাপ দুই শিশু সন্তানকে। সেই সময় পাষণ্ড জাকিরের ধারালো দায়ের কোপে তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের আরো তিনজন গুরুতর জখম হয়।


হত্যাকাণ্ডের সময় নিহত দুই শিশুর মা লিপি আক্তার তাঁর তিন সন্তানকে দুপুরের ভাত খাওয়ানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার নলকাটা গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাবা কর্তৃক এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। পুলিশ নিহত দুই শিশু সুলতানা আক্তার (৬) ও এমরান হোসেনের (৮) লাশ ভাণ্ডারিয়া হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে আহত গৃহবধূ লিপি আক্তার ও তাঁর ১২ বছর বয়সী আরেক ছেলে সোহাগকে সংকটজনক অবস্থায় বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, নিজের ভাগ্য বদলাতে কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন জাকির হোসেন। কিন্তু পাঁচ সদস্যের পরিবারের পেছনে নিত্যদিনের ব্যয়সহ নানান কারণে ভাগ্যের চাকা বদলায়নি। দারিদ্র্য ঘোচেনি তাঁর। ঋণ পরিশোধের চাপে থাকায় টানা পাঁচ বছর ফেরার হয়েও থাকেন তিনি। এরপর বাড়ি ফিরতেই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের লোকেরা চেপে ধরে তাঁকে। সুদে-আসলে এবার তাঁকে দিতে হবে আরো অনেক বেশি টাকা। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরিবারটাকেই বোঝা মনে হলো তাঁর কাছে। গতকাল তাঁর সন্তানরা যখন ভাত খেতে বসে, তখনই বাড়ি ফিরে দা নিয়ে স্ত্রী ও ভাইসহ সন্তানদের ওপর হামলা চালান তিনি। এলোপাতাড়িভাবে সন্তানদের কুপিয়ে নিজেও মরার জন্য মাথায় করছিলেন ইটের আঘাত। প্রতিবেশীরা সে অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় আহত সবাইকে। আর হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখতে পান, পাষণ্ড বাবার দায়ের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে দুই শিশু সন্তান সুলতানা ও এমরানের। পুলিশ সন্তান হন্তারক জাকির হোসেনকে হাসপাতালে গ্রেপ্তার করেছে। জাকির ও তাঁর আহত ভাই আবুল হোসেন ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে বাবার হাতে নিষ্পাপ দুই শিশুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নলকাটা গ্রামের মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে। হত্যাকারী জাকিরের প্রতি ধিক্কার আর নিষ্পাপ দুই শিশুর লাশ দেখতে দিনভর কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েভিড় করে।
পুলিশ জানায়, নিহত দুই শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মঠবাড়িয়া-ভাণ্ডারিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় ভাণ্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

No comments

Powered by Blogger.