পবিত্র কোরআনের আলো-পথভ্রষ্টদের প্রভাবে বিপথগামী মানুষ শুধু আক্ষেপই করবে

১৬৬. ইয্ তাবার্রা আল্লাযীনাত্ তাবিঊ' মিনাল্লাযীনাত্ তাবাঊ ওয়া রাআউল আ'যা-বা ওয়া তাক্বাত্ত্বাআত বিহিমুল আছবা-ব।
১৬৭. ওয়া ক্বা-লাল্লাযীনাত্ তাবাউ' লাও আন্না লানা- কার্রাতান ফানাতাবার্রাআ মিনহুম কামা- তাবার্রাঊ মিন্না-; কাযা-লিকা ইউরি-হিমুল্লা-হু আ'মা-লাহুম হাছা রাতিন আ'লাইহিম; ওয়ামা-হুম বিখা-রিজীনা মিনান্না-র।


১৬৮. ইয়া আয়্যুহান্না-ছু কুলূ মিম্মা ফিল আরদ্বি হালালান ত্বায়্যিবা; ওয়ালা- তাত্তাবিঊ' খুতুওয়া-তিশ্ শাইত্বা-ন; ইন্নাহূ লাকুম আদুয়্যুম্ মুবীন।
১৬৯. ইন্নামা- ইয়া'মুরুকুম বিছ্ ছূয়ি ওয়াল ফাহ্শা-য়ি ওয়াআন তাক্বূলূ আ'লাল্লা-হি মা- লা- তা'লামূন। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৬৬-১৬৯)

অনুবাদ : ১৬৬. শাস্তি যখন নেমে আসবে তখন মাতবররা তাঁবেদারদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যাবে এবং সবাই আজাব প্রত্যক্ষ করবে, আর তাদের যে পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
১৬৭. আর এই তাঁবেদাররা বলবে, যদি আমরা আরেকবার অতীতে ফিরে যেতে পারতাম, তবে আমরাও তাদের থেকে পৃথক হয়ে যেতাম, যেমন তারা আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবনের অপকর্মগুলো তাদের সামনে নিষ্ফল আক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরবেন; তাদের জন্য যে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে আছে এরা সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।
১৬৮. হে মানুষ, তোমরা পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র আছে তা খাও এবং শয়তানের পথ অনুসরণ কোরো না; অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।
১৬৯. সে (শয়তান) তোমাদের পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয় এবং সে চায় যেন আল্লাহর নামে তোমরা এমন সব কথা বলতে শুরু করো, যা তোমরা জানো না।

ব্যাখ্যা : এখানে মূলত দুটি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। প্রথমত পথভ্রষ্ট প্রভাবশালী মানুষ দ্বারা বিপথগামী মানুষের আক্ষেপের কথা। দ্বিতীয়ত পানাহারের ব্যাপারে হালাল ও পবিত্র জিনিস বেছে নেওয়ার দিকনির্দেশনা। ১৬৬-৬৭ নম্বর আয়াতে পথভ্রষ্ট প্রভাবশালীদের দ্বারা বিপথগামীদের বিষয়ে বলা হয়েছে। দুষ্কর্মকারীরা পৃথিবীতে তাদের অনুসারীদের ছত্রচ্ছায়া দিয়ে থাকে। তাদের ছত্রচ্ছায়া পেয়ে অনুগতরা দুষ্কর্ম করে এবং বিপথগামিতার দিকে যায়। কিন্তু এমন একসময় আসে যখন প্রভাবশালী দুষ্কর্মকারীদের আল্লাহর কাছে ধরা পড়তে হয়, মৃত্যু তাদের সামনে আসে অথবা ক্ষমতার বলয় ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এ অবস্থায় তথাকথিত প্রভাবশালীরা তাদের তাঁবেদারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরা তখন তাঁবেদারদের নিয়ে চিন্তা করা তো দূরের কথা, নিজেদেরই বাঁচাতে পারে না। অপকর্মের কঠিন শাস্তি তারা তখন নিজের চোখেই দেখতে পায়। শাস্তি দেখতে পায় তাঁবেদাররাও। কিন্তু তখন তাদের আর কিছু করার থাকে না, শুধু আক্ষেপ করা ছাড়া। তারা তখন আক্ষেপ করে বলে, আহা! যদি আমরা আবার সেই সময়ে ফিরে যেতে পারতাম, তবে পথভ্রষ্ট প্রভাবশালীদের সঙ্গে আগেভাগেই সম্পর্ক ছিন্ন করতাম।
১৬৮-৬৯ নম্বর আয়াতে মানুষকে পানাহারের ব্যাপারে কিছু মৌলিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীতে জন্মানো অনেক কিছুই মানুষের খাওয়ার জন্য জন্মায়। বিচিত্র রকমের স্থলজ-জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ মানুষের আহার্য। কিন্তু এর মধ্যেও হালাল-হারাম আছে, পবিত্র-অপবিত্র আছে। হালাল-হারাম বা পবিত্র-অপবিত্রের আলামত বিষয়ে এখানে তেমন কিছু বলা হয়নি, তবে এ রকম যে আছে, এই মৌলিক কথাটি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে শয়তানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাণিকুল ও উদ্ভিদের মধ্যে এমন কিছু নিষিদ্ধ জিনিস আছে যেগুলো ক্ষতিকর। অথচ শয়তান মানুষকে প্ররোচনা দিতে পারে সেগুলো ভক্ষণ বা পান করতে। কিন্তু মানুষের উচিত, রিপুর প্ররোচনা থেকে মুক্ত হয়ে হারাম ও অপবিত্র বস্তুগুলো গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। এই আয়াতগুলোতে পথভ্রষ্ট প্রভাবশালী মানুষরূপী শয়তান এবং মনের কুরিপুরূপী শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার পথনির্দেশ করা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.