সাবেক মন্ত্রীর মোবাইল কোম্পানিকে ॥ টেলিটকের অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন কাজ গোপনে অনুমোদন! -০ বিটিআরসির ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নেয়নি টেলিটক- ০ ১০ কোটি টাকা নয়-ছয়ের পাঁয়তারা? by ফিরোজ মান্না

বিটিআরসির গাইডলাইন না মেনে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটক নেশনওয়াইড ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) স্থাপনের কাজ দিয়েছে বিএনপির এক সাবেক মন্ত্রীর মোবাইল কোম্পানিকে। এ জন্য টেলিটক বিটিআরসির কোন অনুমোদন নেয়নি। আর যে কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়েছে তার কোন এনটিটিএন লাইসেন্স নেই।


বিটিআরসি থেকে ওই কোম্পানিকে কোন ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ও দেয়নি। এর পরও টেলিটক নিয়ম ভেঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-বগুড়া-রাজশাহী-কুষ্টিয়া-খুলনা দুই জোড়া অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের কাজটি অনেকটা গোপনে দিয়েছে। ১৫ বছরের জন্য বিএনপি নেতার ওই ফোন কোম্পানি ফাইবারের লিজ নিচ্ছে সরকারী প্রতিষ্ঠান টেলিটক থেকে। অথচ সারাদেশে দু’টি এনটিটিএন কোম্পানি ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের লাইসেন্স পেয়েছে। তাদের কাজ না দিয়ে কেন ‘নন লাইসেন্সি কোম্পানিকে’ কাজ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, এখান থেকে ১০ কোটি টাকার বেশি টাকা নয় ছয় করার পাঁয়তারা চলছে।
বিষয়টি জানার জন্য টেলিটকের এমডি মজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন, আমরা ফাইবার নেটওয়ার্ক লিজের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেব। বিটিআরসির গাইডলাইন অনুযায়ীই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করব। বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করা হয়েছে। বিটিআরসির নির্দেশনা মানা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, এনটিটিএন লাইসেন্সপ্রাপ্তরা টেলিটকের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভয়েজ অপারেটর লাইসেন্সধারীকে ( এনটিটিএন লাইসেন্সবিহীন) কাজ দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী। তাছাড়া টেলিটকের টেন্ডার কোন পত্রপত্রিকায় না দিয়ে ৪ দিনের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ ছিল। নিয়ম অনুযায়ী একটি টেন্ডার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলে কম করে হলেও ২৭ দিন রাখতে হবে। রহস্যজনকভাবে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার ৪ দিনের মাথায় টেলিটক তুলে নেয়। এটা একটা বড় ধরনের অনিয়ম। এখানে বিরাট অংকের দুর্নীতি হয়েছে বলেও ওই কর্মকর্তা বলেন। বিষয়টি নিয়ে কমিশন বৈঠকেও অবৈধ হিসেবে সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, টেলিটকের টেন্ডারে বিটিআরসির গাইডলাইন মানা হয়নি-বিষয়টি ৭ দিনের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য বিটিআরসি টেলিটককে শোকজ নোটিস দিয়েছিল। শোকজের জবাব হিসেবে টেলিটক গত ২৮ মে একটি চিঠি বিটিআরসিকে দিয়েছে। তাদের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তারা বিটিআরসির গাইডলাইন অমান্য করেনি। বাজার মূল্য নির্ধারণ করার জন্য প্রাথমিক টেন্ডার করেছিল। পরবর্তীতে বিটিআরসি থেকে ‘নো অবজেকশন সাটিফিকেট’ বা এনওসি নেবে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার আহ্বান করার আগেই এনওসি নেয়ার কথা। কারণ টেলিটকের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিটিআরসি। কিন্তু টেলিটক বিটিআরসিকে অমান্য করে মন্ত্রণালয়ের দোহাই দিয়ে টেন্ডারটি বলবত রাখে।
সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়-‘টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক অপটিক্যাল ফাইবার লিজ সংক্রান্ত বিষয়টি বিদ্যমান ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইন’ ও এনটিটিএন লাইসেন্সিং গাইডলাইনের বিধি বিধানের আলোকে বিস্তারিত বর্ণনাপূর্বক একটি প্রতিবেদন সিদ্ধান্তের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ কমিশন সভায় লাইসেন্সধারী এনটিটিএন কোম্পানি একই রুটে তাদের ফাইবারও রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। কমিশনের এই সিদ্ধান্তের পর উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড অপারেশন) স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে সরকারী রাজস্ব সাশ্রয়ার্থে সিটিসেলকে এনওসি প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এই চিঠি বিটিআরসির উক্ত বিষয়ে কমিশন সভার সিদ্ধান্ত এবং প্রতিষ্ঠানটির গাইডলাইন পরিপন্থী। এমন চিঠি বিটিআরসি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারে না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক ব্যক্তি বিটিআরসির বেআইনী ওই চিঠিকে ভিত্তি করে বিএনপি নেতা মোর্শেদ খানের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার চাপ সৃষ্টি করেন।

No comments

Powered by Blogger.