সহজিয়া কড়চা- ক্ষমতা বনাম গণতন্ত্র by সৈয়দ আবুল মকসুদ

চীন দেশের মানুষের হিকমতের জন্য সুখ্যাতি আছে। তাঁরা শুধু বুদ্ধিমান নন, দূরদর্শীও। তাঁদের বিজ্ঞরা উপদেশ দিয়ে গেছেন—তরমুজখেতের মধ্যে বসে বা ঝুঁকে কখনো জুতার ফিতা বাঁধতে যেয়ো না। দূর থেকে খেতের মালিক বা গ্রামবাসী সন্দেহ করবে, তুমি তরমুজ চুরি করছ।


এই উপদেশের তাৎপর্য হলো, তুমি এমন কোনো কাজ কোরো না, যা অন্যের সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। সন্দেহ করা বা কোনো ব্যাপারে কারও সম্পর্কে অনুমান করা মানুষের আদিম অভ্যাস।
সাবেক সেনাশাসক ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দিল্লিতে প্রায়-রাষ্ট্রীয় সফর করে এলেন। তিনি সেখানে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রতিবেশী দেশের নেতাদের সঙ্গে সব দলের নেতাদেরই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকা উচিত। বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপের মানুষও একালে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রেখে চলতে পারে না। ভারতের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের হাজার হাজার বছরের আত্মীয়তা ও অভিন্ন ঐতিহ্যের সম্পর্ক। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না রাখাটা নির্বুদ্ধিতা। একশ্রেণীর সাম্প্রদায়িক নেতা দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব অটুট থাকুক, তা চান না। তাতে কোনো দেশেরই লাভ নেই। ভোটের রাজনীতিতে তাঁরা নিজেরা সাময়িক লাভবান হন মাত্র। এরশাদ সাহেবের এবারের সফরটি নিয়ে এবং সে সম্পর্কে ভারতের প্রচারমাধ্যমের প্রতিবেদন পড়ে বাংলাদেশের মানুষ যদি নানা রকম
সন্দেহ ও অনুমান করে, তা হলে তাদের দোষ দেওয়া যায় না।
সেই সন্দেহটার মূল প্রতিপাদ্য কী? এককথায় তা হলো: গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতির খেল শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে সেই খেল পরিপূর্ণ নাটকে পরিণত হবে। সেই খেলার মুখ্য খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করলেন জাতীয় পার্টির নেতা।
আমাদের প্রজাতন্ত্রে গণতন্ত্রের চেয়ে নির্বাচন মুখ্য। নির্বাচনের চেয়ে ক্ষমতা মুখ্য। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভোটাররা মুখ্য নন—বৈদেশিক বন্ধুরা মুখ্য। নেতাদের নির্বাচিত হওয়ার জন্য জনগণের কাছে যাওয়ার দরকার নেই, বিদেশি বন্ধুদের কাছে ধরনা দেওয়াটা জরুরি। ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এরশাদ সাহেব সফর করে এলেন দিল্লি। বিরোধীদলীয় নেতাও যাবেন শিগগিরই। শুধু দিল্লি নয়, তিনি বেইজিংও যাবেন। পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা তো ঢাকায় অনবরত চলছেই। নেতাদের সৌদি আরবে যাতায়াতের মাত্রাও বেড়ে গেছে। ওখানে চিকিৎসাও হয়, ওমরাহও হয়, আলোচনাও হয় বাংলাদেশের রাজনীতির নাড়িনক্ষত্র নিয়ে। নেতারা বিদেশিদের মন জয় করার জন্য অতি উতলা—এদিকে ভূরুঙ্গামারী বা কেশবপুর বা উল্লাপাড়ার ভোটারের অভাব-অভিযোগ, আবেগ-অনুভূতি জেনে তাঁদের মন জয় করার প্রয়োজন মনে করেন না।
একাত্তরে জনগণের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। সে সময়টিতে জনগণের মনমানসিকতা এমন ছিল যে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম না করে নেতাদের আর বিকল্প ছিল না। স্বাধীনতা ছাড়া কোনো কিছুর কথা বললে নেতারা শুধু যে তাঁদের নেতৃত্ব হারাতেন তা-ই নয়, চিরকালের জন্য তাঁরা নিজেরাই হারিয়ে যেতেন। তাঁদের দশা হতো গোলাম আযম, ফজলুল কাদের চৌধুরী, খান এ সবুর খানের মতো। যা হোক, একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো, একটি সংবিধানও রচিত হলো, কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজটি কেউ করলেন না। সামরিক শাসকদের কাছে তা আশা করাই বোকামি; রাজনৈতিক নেতাদের কাছেই তা প্রত্যাশিত ছিল। তাঁরা সে পথে না গিয়ে ক্ষমতার জন্য তাঁদের ঘোষিত নীতি-আদর্শকে বিসর্জন দিতে দ্বিধা করলেন না। জাতি গঠনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলো না। একটি নামমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা হলো। এ ধরনের রাষ্ট্রে জনগণের উপকার হয় না, অকল্পনীয় উপকার হয় শাসকশ্রেণী ও তাঁদের তাঁবেদারদের।
নির্বাচন নিয়ে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল প্রশ্নে প্রতিদিন নেতারা কথা বলছেন। তাতে জনগণের লাভটা কী? ওসব তো ক্ষমতায় যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়। বর্তমান অবস্থায় পাতানো নির্বাচন নয়, একটি অতি সুষ্ঠু নির্বাচনও বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। কিন্তু নির্বাচন ছাড়াও সমস্যার সমাধান হবে না। একটি নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে আরেকটি নির্বাচিত সরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারবে না। তা যদি পারত, তা হলে ১৯৯১ সালের পরে ’৯৬-এর নির্বাচনেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। ২০০১-এর নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডে পরিণত হতো। তা না হওয়ার কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজটি নেতারা করেননি গত ৪১ বছরে। গণতন্ত্র বলতে তাঁরা বুঝেছেন ভোটাভুটি করে কোনো রকমে ক্ষমতায় যাওয়া।
গণতন্ত্র অন্য জিনিস। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর সংগ্রাম ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম ছিল না। একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্রকে তিনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেন। সে জন্যই তিনি শ্রদ্ধেয়। শুধু তাঁর নিজের দেশে নয়, বিশ্বব্যাপী। ক্ষমতায় থাকতে চাইলে তিনি এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাকতেন। ২৭ বছর জেল খাটার জন্য তিনি শ্রদ্ধেয় নন, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনে তাঁর ভূমিকার জন্য তিনি চিরকাল স্মরণীয় ও শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন।
এরশাদ সাহেব দিল্লি ঘুরে আসায় আমাদের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা নানা রকম পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আমি একটি প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারিনি। তাঁর সফরে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হলো? তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে থাকবেন তাতে সন্দেহ নেই। তাঁর রাজনীতি কি লাভবান হয়েছে? তাঁর জাতীয় পার্টি কি লাভবান হয়েছে? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট কি লাভবান হয়েছে? তাঁর সফর এবং পরপরই ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার ২৯ আগস্টের ‘ইন্ডিয়া স ওয়ারিশ কুড মাউন্ট উইথ খালেদা জিয়া’স এক্সপেকটেড রিটার্ন টু পাওয়ার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মনে হচ্ছে, এরশাদের সফরে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন খালেদা জিয়া ও তাঁর দল বিএনপি।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নীতি-আদর্শে কিছুমাত্র পার্থক্য নেই। দুটি দলই মুসলিম জাতীয়তাবাদী। এরশাদ সাহেব দিল্লিতে গিয়ে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে অনেক বিষয়েই আলোচনা করে থাকবেন, শুধু একটি বিষয় ছাড়া। একটি কথা চেপে গেছেন, তা হলো তিনি সগর্বে বলেননি যে তিনি বাংলাদেশের মুসলমানদের তারা না চাইতেই ‘রাষ্ট্রধর্ম’ উপহার দিয়েছেন এবং সংবিধান সংশোধনের সময় এবার যখন রাষ্ট্রধর্ম তুলে দেওয়ার দাবি ওঠে নাগরিক সমাজ থেকে, তখন তিনি ওটা রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করার ঘোষণা দেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁর জীবন রক্ষায় এই প্রশ্নে সমর্থন দিয়ে সবার আগে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন খালেদা জিয়া।
গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে যত রকম কাঁটা পুঁতে রাখা সম্ভব, আমাদের নেতারা তা পুঁতেছেন। নেলসন ম্যান্ডেলার মতো নেতা ছাড়া ওসব বিষাক্ত কাঁটা উৎপাটন করা কোনো নেতৃত্বের পক্ষেই সম্ভব নয়। এমন নেতৃত্ব আজ দরকার, যে নেতৃত্ব ঘোষণা করবেন—আমি ক্ষমতা চাই না, প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি চাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে।
এরশাদ সাহেব প্রধানমন্ত্রিত্ব পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর, তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলে দিয়েছেন। গণতন্ত্র নয়, প্রধানমন্ত্রিত্বই তাঁর কাছে প্রধান। ওদিকে খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চাইছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তৃতীয়বারের জন্য হতে চাইছেন। গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একমাত্র পথ—নির্বাচনে এককভাবে হোক বা জোটগতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করা। সে জন্য নির্বাচনের কথা বারবার আসছে।
নির্বাচন করে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন নিয়ে জেনারেল এরশাদ প্রধানমন্ত্রী হলে কারও কিছু বলার থাকবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমাদের কোনো নেতার চেয়ে তাঁর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কম নয়। কোনো পরিকল্পিত নির্বাচনের মাধ্যমে এভাবে ক্ষমতার হাতবদল হলে মানুষ একটি করে ‘নির্বাচিত সরকার’ পাবে—গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পাবে না।
বিএনপির নেতারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন যতটুকু না করছেন, কথা বলছেন তার চেয়ে ঢের বেশি। তাঁদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় নীতি-আদর্শ বোঝা মুশকিল। মুখে মুখে কারণে-অকারণে ভারতের সমালোচনা করতে দেখা ছাড়া তাঁদের বৈদেশিক নীতিও বোঝার সাধ্য সাধারণ মানুষের নেই। এর আগে তাঁরা ক্ষমতায় স্থায়ী হওয়ার জন্য যা খুশি তা-ই করেছেন—গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য উদ্যোগ নেননি। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয়বারের শাসনামলে মনে হয়েছিল, সম্রাট বাবর যেমন মোগল সাম্রাজ্যের পত্তন করে যান, তেমনি তিনিও রহমানিয়া রাজত্বের পত্তন করে যাবেন। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজটি তিনি করতে পারতেন। কিন্তু সে পথে যাননি। না যাওয়ার খেসারত এ দেশে তাঁকেই সবচেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের মাটিতে ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে শেখ হাসিনার সরকার সফলভাবে দখল করতে পেরেছে। এ ব্যাপারে ভারত সরকারের উদ্বেগ রয়েছে। খালেদা জিয়া ভারত সফরে আমন্ত্রিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় এবং তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। তখন ভারতের উগ্রবাদীরা তাঁর সরকারের প্রশ্রয় পাবে কি না, সে কথা তাকে পরিষ্কার করতে হবে। ভারত একটি টেকসই গণতন্ত্র। আমার ধারণা, বাংলাদেশের যেকোনো দলই যদি ভারতবিরোধী উগ্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রশ্রয় না দেয়, ভারত তাকে সমর্থন দেবে। এখানকার হিন্দুসম্প্রদায়ের প্রতি কোন সরকারের আচরণ ও মনোভাব কী, সে বিষয়টিও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের বিবেচনার বিষয়। আমরা দেখেছি, ২০০১ সালেও বিএনপি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছিল ভারত। বিএনপি সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।
এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। অন্যান্য দলও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। বাংলাদেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়ার ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। ষাটের দশকে আইয়ুব খানের আমলে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে যত নির্বাচন হয়েছে, তাতে আইয়ুবের কনভেনশন মুসলিম লীগই বিজয়ী হয়েছে। বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও হেরে গেছে।
ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার ছিল একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সত্তরের নির্বাচনে তাঁর সরকারের কোনো প্রার্থী ছিল না। থাকলে আওয়ামী লীগের বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও কিছু আসন তাঁরা পেতেন। তাঁরা ভুট্টোর সঙ্গে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্র করে কেন্দ্রে একটি সরকার গঠন করে ফেললে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যেত, বলা মুশকিল।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন ১৯৭৩ সালে দলীয় সরকারের অধীনে হয়। নির্বাচনী ময়দানটি সমতল হলে বিভিন্ন বিরোধী দল ৫০-৬০টি আসন পেত। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলকে দেশ থেকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেয়। তাতে গণতন্ত্রচর্চার দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরিণামে একের পর এক ট্র্যাজেডি ঘটতে থাকে।
অব্যবহিত পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীন দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে দোষের কিছু নেই। আগামী দিনে কোনো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়লাভ করে মহাজোট যে আবার সরকার গঠন করতে পারবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং আওয়ামী লীগের নেতারা যে বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে’ কথাটি বিরোধী দলের জন্য শঙ্কার।
আমি আবারও বলছি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র শর্ত নয়—প্রথম শর্ত। আরও শর্ত আছে। সেগুলো পূরণ না হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন সম্ভব নয়। ১৯৯০-তে এবং ’৯৬-তে যে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল, তা ছিল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক চুক্তি। সেই চুক্তির প্রধান দুই পক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। উদ্যোক্তা ছিল আওয়ামী লীগ। আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ওই চুক্তি থেকে সরে আসা আওয়ামী লীগের জন্য সুবিবেচনার কাজ হচ্ছে না।
বাংলাদেশের মানুষের মাথা গরম। এক ঘণ্টার মধ্যে বাঙালি মালকোঁচা মেরে রাস্তায় নামতে পারে। তারা কোনো নেতার ডাকের পরোয়া করে না। কোনো ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত বুমেরাং হতে পারে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে দুই পক্ষই অনমনীয় না থেকে কীভাবে ওই ব্যবস্থার সংস্কার করে আরও গ্রহণযোগ্য ও উন্নত করা যায়, তা নিয়েই সরকার ও বিরোধী দলের নীতিনির্ধারকদের কাজ শুরু করা উচিত। ইতিহাস তাঁদেরকেই মাথায় করে রাখবে, যাঁরা ক্ষমতাকে প্রাধান্য না দিয়ে গণতন্ত্র সুসংহত করাকে প্রাধান্য দেবেন।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.