ইরানের পরমাণু ঘোষণাকেই সমর্থন দিল ন্যাম by টমাস এর্ডব্রিংক

অবশেষে ১২০ জাতির জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্যদেশগুলো সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ ইরানের হাতেই কূটনৈতিক জয় তুলে দিল। সর্বসম্মতিক্রমে তারা ইরানের বিতর্কিত পরমাণু জ্বালানি প্রকল্পের প্রতি সমর্থন দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরানকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ একঘরে করার যে উদ্যোগ রয়েছে, তার সমালোচনা করেছে।


এই গোষ্ঠীর ঘোষিত ইশতেহারে সিরিয়াকে ইরানের দেওয়া সমর্থনের ব্যাপারে কিন্তু কিছুই বলা হয়নি। এটা স্পষ্ট যে সিরিয়া হলো এ অঞ্চলে ইরানের সবচেয়ে বড় মিত্র। অথচ জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অনেক সদস্যদেশই মনে করে, সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার নিজের জনগণের আন্দোলনকে ধূলিসাৎ করতে যে শক্তি প্রয়োগ করছে, তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।
'তেহরান ঘোষণা' থেকে সিরিয়ার বিষয়টি কৌশলে বাদ রাখার এবং এক ধরনের সমর্থন আদায়ের এক দিন পর ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি এবং তাঁর সহযোগীরা সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের পেছন থেকে সাহায্যকারী বিদেশি শক্তির সমালোচনা করেছেন। এর পরও ১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লবের পর সে দেশে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের চূড়ান্ত ফলাফলে সদস্যরা ইরানের পরমাণু জ্বালানি তৈরির অধিকার নিয়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে শোডাউনকেই সমর্থন দিয়েছে। এই সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন দেওয়া ডকুমেন্টে ইরানকে একটি একঘরে জাতি বলে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মতকে অস্বীকার করা হয়েছে।
'তেহরান ঘোষণা' শুধু ইরানকে শান্তিপূর্ণ পরমাণু জ্বালানির অধিকার দেওয়াকেই উৎসাহিত করেনি, পরিপূর্ণভাবে পরমাণু জ্বালানি সাইকেল আয়ত্ত করার অধিকারও দিয়েছে, যার অর্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, যা কিনা গভীর বিতর্কের বিষয়।
ইরান বহুবার বলেছে, তাদের পরমাণু প্রকল্প শান্তিপূর্ণ। তারা দাবি করেছে, নিউক্লিয়ার ননপ্রোলিফারেশন ট্রিটিতে (পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি) স্বাক্ষর করা সব বাধ্যবাধকতা মেনেই চলছে। তারা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এই চুক্তিতে স্বাক্ষর না-করা দেশ ইসরায়েলের রয়েছে পরমাণু অস্ত্র, যে পরমাণু অস্ত্র স্বীকৃত নয়। ইসরায়েল মনে করে, ইরান হলো তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু দেশ এবং ইতিমধ্যেই তারা হুমকি দিয়েছে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ অঞ্চলে হামলা করার।
বুধবার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) প্রকাশিত নতুন একটি রিপোর্ট পরমাণু বিষয়টিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। আইএইএ হলো জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা। তারা তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ইরান সাম্প্রতিক কয়েক মাসে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রথমে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে সিরিয়া কোনো সমর্থন পায়নি। ইরানের প্রথম অনিচ্ছা ছিল এবং পরে চেষ্টা করেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারের জন্য সবার সমর্থন পায়নি। সরকারি কর্মকর্তারাই স্বীকার করেছেন, যতই সম্মেলনের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছিল, ততই ইরানের নেতারা সিরিয়া প্রশ্নে নীরব থেকেছেন মতানৈক্যকে পাশ কাটানোর জন্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হতাশার দৃশ্যটি পরিষ্কার লক্ষ করা গেছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর সালেহির সঙ্গে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ২০ মিনিটের বৈঠকে। কূটনীতিকরা বলেছেন, ওই বৈঠকের পর ওই দিনই দুপুরে ইরানি প্রতিনিধিরা সিরিয়া এবং অস্ত্রবিস্তাররোধ প্রশ্নে একটি অনুচ্ছেদ সংযোজনের জন্য ঠেলে দেন। কিন্তু আরব প্রতিনিধিরা সেটা প্রতিরোধ করেন। ভারত যে নিজে একটি পরমাণু শক্তির দেশ, তারাও অস্ত্রবিস্তার রোধের জন্য ব্যবহৃত ভাষায় ক্ষুব্ধ হয়েছে।

দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধ। ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.