ভিসিকে রক্ত উপহার!

বুয়েটে এবার রক্ত ঝরালেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শরীরের তাজা রক্ত ঢেলে দিলেন। সেই রক্তে লাল হলো পদে থাকতে অনড় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশের সিঁড়িপথ।


গতকাল সোমবার বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ সবাইকে নাড়া দিয়ে যায়।
ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, শতাধিক ছাত্রছাত্রী স্বেচ্ছায় তাঁদের রক্ত দিচ্ছেন। সিরিঞ্জ দিয়ে একজনের পর একজনের শরীর থেকে রক্ত টেনে নিয়ে বোতলে রাখা হচ্ছে। পরে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী পুরো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনের সিঁড়িতে বোতলের রক্ত ঢেলে দেন তাঁরা। দাবি অনুযায়ী গতকাল সকাল ১১টার মধ্যে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা দুপুর পৌনে ১টায় ব্যতিক্রমী এই প্রতিবাদের উদ্যোগ নেন।
এদিকে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে বুয়েট কর্তৃপক্ষের করা মামলা প্রত্যাহার এবং সংকট নিরসনে শিক্ষাসচিবের আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত স্থগিত করেছেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তীব্রতর হলেও উপাচার্য ড. এস এম নজরুল ইসলাম গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, নিজের ইচ্ছায় তিনি পদত্যাগ করবেন না। সরকার তাঁকে নিয়োগ দিয়েছে। সরকার বললে তিনি পদত্যাগ করবেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে উপাচার্য তাঁর কার্যালয়ে যান এবং কিছুক্ষণ থেকে বাসায় চলে যান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, বুয়েট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল বিকেলে শিক্ষাসচিব বুয়েট শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সন্ধ্যায় ওই বৈঠক শেষ হয়। বুয়েট শিক্ষক সমিতি রাত ৮টায় নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসে।
ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ
গতকাল সকাল ১১টার মধ্যে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে তাঁরা পদত্যাগ করেননি। এর আগে রবিবার রাতে ১৯৫ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে আসামি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ মামলা করে। সব মিলিয়ে গতকাল সকাল ১১টার পরই বুয়েট ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুপুর সোয়া ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল ভবনের সামনে সমবেত হয়ে শিক্ষার্থীরা সিরিঞ্জ দিয়ে নিজেদের শরীর থেকে রক্ত বের করতে শুরু করেন। এরপর এই রক্তসহ তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনের সিঁড়িতে সেই রক্ত ঢেলে দেন। শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির নাম দেন 'স্বেচ্ছায় রক্তপাত'। কয়েকজন শিক্ষকও নিজেদের রক্ত দিয়ে এই কর্মসূচিতে শরিক হন।
এ সময় কম্পিউটার বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, 'রক্তপাত ছাড়া উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য যাবেন না। এ কারণে শিক্ষার্থীরা তাঁদের রক্ত উপহার দিচ্ছে।' কেমিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানুল কবির সুমন বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলেও এখনো উপাচার্যের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা জানতে পেরেছি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তপাতের পর তিনি সেখান থেকে সরে এসেছিলেন। আপনি কি আমাদেরও রক্ত চান? আমাদের রক্ত চাইলে আপনার ক্যাডার বাহিনী পাঠানোর দরকার নেই। আমরা নিজেদের শরীর থেকে রক্ত দিচ্ছি- আপনি বুয়েট ছেড়ে বিদায় হন।'
বুয়েট উপাচার্যের কক্ষে হামলা, ভাঙচুর ও চুরির অভিযোগ এনে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলাও প্রত্যাহারের দাবি জানান সুমন। তিনি বলেন, আন্দোলন বন্ধ করতে ষড়যন্ত্রমূলক ওই মামলা করা হয়েছে। অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
রবিবার রাতে শাহবাগ থানায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের করা দুই মামলায় মোট ২৪ জন শিক্ষক ও ৪৯ জন ছাত্রের নাম উল্লেখ করে ১৯৫ জনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়। মামলায় বলা হয়, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের কক্ষ ভাঙচুর, টাকা আত্মসাৎ ও অনুপ্রবেশ করা হয়েছে। এর জবাবে শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ড. আতাউর রহমান বলেন, 'বুয়েট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এমন নৈতিক অবক্ষয় হয়নি যে উপাচার্যের টাকা চুরি করবে।' তিনি বলেন, 'উপাচার্য মামলায় উল্লেখ করেছেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাঁর দপ্তরে রাখা তিন লাখ টাকা নিয়ে গেছে। উপাচার্যের কাছে তিন লাখ টাকা এলো কোথা থেকে, এর তদন্ত হওয়া দরকার।' এদিকে মামলা হওয়ার পর একদল পুলিশ রবিবার রাতেই ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনকারীদের কিছু সময় ঘিরে রাখে। ওই সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে সোমবার ভোরে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শিক্ষার্থীরা গতকাল আন্দোলন করেছেন পুরকৌশল ভবনের সামনে।

No comments

Powered by Blogger.