চট্টগ্রাম বন্দর-কনটেইনার টার্মিনাল দ্রুত চালু হোক

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের পরিস্থিতি বোধকরি রূপকথার গল্পের সুয়োরানীর অবর্ণনীয় দুর্ভাগ্যকেও হার মানাবে। পাঁচ বছর আগে পাঁচ বার্থের এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হয় ৫৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি বার্থ চালু করা সম্ভব হয়েছে।
এটাও মনে রাখতে হবে যে, পাঁচ বছর আগে নির্মাণকাজ সময়মতো নয়, বরং শেষ হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের তিন বছর পর এবং এজন্য ব্যয় বেড়েছিল ২২২ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরও কেন সবগুলো বার্থ চালু হয়নি? কারণ অপারেটর নিয়োগ হয়নি। অপারেটর নিয়োগের জন্য ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়। কিন্তু পরের বছর নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হয় এবং এ সময়ে বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য বিবেচিত করার উদ্দেশ্যে শর্ত শিথিল করা হয় বলে একটি মহলের অভিযোগ। এ সময়ে ১০টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়। এরপর ২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও বার্থ অপারেটর নিয়োগ করা হয়নি। গত পাঁচ বছরের অন্য একটি চিত্রও আমরা লক্ষ্য করি_ কনটেইনার টার্মিনাল পুরোপুরি চালু না হতেই বন্দরে জাহাজের অবস্থানকালীন সময় ৫ দিন থেকে কমে আড়াই দিন হয়েছে। এর ফলে বন্দর ব্যবহারকারীদের ব্যয় কমেছে। বর্তমান সরকারের আমলে বন্দরে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে_ শ্রমিক অসন্তোষ কমে আসা। শ্রমিকদের আর্থিক এবং অন্য কিছু সুবিধা বৃদ্ধির কারণেই এ স্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। কথায় বলে, 'সুখে থাকলে ভূতে কিলায়।' চট্টগ্রাম বন্দরেও কি এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে? এক সময় ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো চট্টগ্রাম বন্দরকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সম্প্রতি এ বদনামের অবসান ঘটেছে। কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে_ পণ্য নিয়ে জাহাজের গড় অবস্থানকালীন সময় কমে আসবে ২৪ ঘণ্টায়। জাহাজপ্রতি পণ্যে ব্যবসায়ীদের ব্যয় কমবে। জেটি সংখ্যা বাড়ার কারণে বাড়তি কনটেইনার হ্যান্ডেল করা যাবে বছরে ১০ লাখ টিইইউএস। এতে বন্দরের আয় বাড়বে অন্তত ২০০ কোটি টাকা। বাড়তি কাজের সুযোগও সৃষ্টি হবে বন্দরে এবং বাইরে। এমন একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্প 'শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার নামে' সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন নেতা কেন গলাটিপে হত্যা করতে চাইছেন? একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রকল্প মালামাল খালাসের জন্য বর্ধিত ও অত্যাধুনিক সুবিধা নিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকার পরও যে তা চালু করা যাচ্ছে না, সে দায় কার? সংশ্লিষ্টদের এটাও তো জানা আছে, এখনই যদি কোনো প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় তাহলেও কনটেইনার টার্মিনাল চালু হতে দেড় থেকে দুই বছর প্রয়োজন পড়বে। অর্থনীতির অ আ ক খ যারা জানেন তারাও বলবেন_ এটা শুধু অপচয় নয়, গুরুতর অর্থনৈতিক অপরাধও। অপারেটর নিয়োগে স্বচ্ছতা অবশ্যই থাকতে হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দ্বিতীয়বার টেন্ডার আহ্বান করার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করে থাকলে তার তদন্ত হোক এবং এজন্য বিলম্ব গ্রহণযোগ্য হবে না। বন্দর ব্যবহারকারীরা চাইছেন যাবতীয় জটিলতার নিরসন করে দ্রুত কনটেইনার টার্মিনালটি চালু হোক। এ দাবি যথার্থ এবং তা পূরণে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে উদ্যোগী হবেন বলে তাদের প্রত্যাশা। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃত্বও ব্যবসায়ীদের এ মনোভাব নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন।

No comments

Powered by Blogger.