কিউরিওসিটি দর্শন! by হক মুহাম্মদ ইশফাক

৫ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সময় রাত ১০টা ৩১ মিনিটে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ স্পর্শ করবে রোভার কিউরিওসিটি। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই অবস্থিত নাসার এমেস রিসার্চ সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে কিউরিওসিটির ল্যান্ডিং পার্টি। সেখানে থাকব বলে সকাল থেকে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছি! অন্যদের সঙ্গে নাসার এমেস রিসার্চ সেন্টারে পৌঁছালাম সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। প্রধান ফটকে বিশাল গাড়ির সারি, নানা বয়সের মানুষের লাইন।


মাঠের দুই পাশে বিশাল দুটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে নাসার বিজ্ঞানীরা অভিযানটি সম্পর্কে বক্তব্য দিচ্ছেন। এ ছাড়া সবাইকে কিউরিওসিটির বিভিন্ন কারিগরি দিক জানানো হচ্ছিল। রাত নয়টার সময় বিশাল পর্দার মাধ্যমে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা হয় লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসাডেনাতে অবস্থিত নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে, যেখান থেকে পুরো অভিযানটি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিউরিওসিটির অবতরণ মুহূর্ত যতই ঘনিয়ে আসছিল, ততই যেন কন্ট্রোল রুমে অবস্থিত প্রকৌশলীদের মাঝে উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। রাত সোয়া ১০টার দিকে যখন কিউরিওসিটি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করল, তখন সবার মাঝে বাদাম বিতরণ শুরু করা হয়। কথিত আছে, ষাটের দশকে ‘রান্জার’ অভিযানে পরপর ছয়বার ব্যর্থ হওয়ার পর যেবার নাসা এই অভিযানে সফল হয়েছিল, সেবার এক বিজ্ঞানী অভিযানের এই ধাপে বাদাম খাচ্ছিলেন। সেই থেকে বাদামকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় আর সবার মাঝে বাতাম বিতরণ করা হয়! সবাই বাদাম খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘গুডলাক পিনাট’ স্লোগান দিয়ে কিউরিওসিটির জন্য শুভেচ্ছাবার্তা জানাতে থাকে। ১০টা ২০ মিনিটে শুরু হয় রোভারের অবতরণ। মঙ্গলপৃষ্ঠে পৌঁছাতে কিউরিওসিটির সাত মিনিট সময় লাগে এবং এই সময়ের মধ্যে কিউরিওসিটির বেগ ঘণ্টায় এক হাজার ৪৫০ কিলোমিটার থেকে শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। এটি ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। এ ছাড়া অবতরণের পর প্রথম সাত মিনিটে বোঝার কোনো উপায় নেই যে রোবটটি নিরাপদে অবতরণ করেছে কি না। কেননা, মঙ্গল গ্রহ থেকে কিউরিওসিটির প্রথম সিগন্যাল পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় লাগে সাত মিনিট। এমন উৎকণ্ঠার মধ্যে যখন জেট প্রপালসন ল্যাবের কন্ট্রোলরুম থেকে ঘোষণা করা হলো যে কিউরিওসিটির পাঠানো প্রথম ছবি পাওয়া গেছে, তখন পুরো কন্ট্রোলরুম আর সেই সঙ্গে এমেস সেন্টারের পুরো মাঠ আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও করতালিতে ফেটে পড়ে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো কোনো রোভারকে লাল গ্রহ মঙ্গলের মাটিতে সরাসরি নামতে দেখে সবার সঙ্গে আমি নিজেও বেশ আনন্দিত।

No comments

Powered by Blogger.