হত্যার দায় স্বীকার করেছেন কাইলাই

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পদচ্যুত নেতা বো শিলাইয়ের স্ত্রী গু কাইলাই ব্রিটিশ ব্যবসায়ী নেইল হেইউডকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এই কাজ করেছেন বলে জানান তিনি। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো গত শুক্রবার রাতে এ কথা জানায়।
গত বৃহস্পতিবার চীনের পূর্বাঞ্চলীয় হেফেই শহরের একটি নিম্ন আদালতে কাইলাইয়ের বিচার শুরু হয়। হেইউডকে বিষ দিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে কাইলাইয়ের (৫৩) বিরুদ্ধে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর চংকিংয়ের একটি হোটেল কক্ষ থেকে গত নভেম্বরে হেইউডের (৪১) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় বো শিলাই চংকিংয়ের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে অতিরিক্ত মদ্যপানকেই হেইউডের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে পরে জানানো হয়, বিষক্রিয়ায়ই মারা গেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, হেইউড হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বছরের শুরুতে বো শিলাইকে চংকিংয়ের আঞ্চলিক প্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
কাইলাই আত্মপক্ষ সমর্থন না করায় গত বৃহস্পতিবার শুনানির প্রথম দিনেই বিচার শেষ হয়ে যায়। তবে রায়ের তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। গত শুক্রবার রাতে সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, হেইউডকে হত্যার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন কাইলাই। ২৪ বছর বয়সী ছেলে বো গুয়াগুয়ার জীবন হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে আশঙ্কায় হেইউডকে হত্যা করেছেন বলে জানান তিনি। সাবেক আইনজীবী কাইলাই আরো জানিয়েছেন, আদালতের যেকোনো রায় শান্তভাবে মেনে নেবেন তিনি।
চীনের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ২০০৫ সালে হেইউডের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় কাইলাইয়ের। বো গুয়াগুয়া তখন ব্রিটেনে পড়াশোনা করছিলেন। পরে বোর পরিবারের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিষয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন হেইউড।
বিরোধের জের ধরে হেউইড গুয়াগুয়ার ক্ষতি করার হুমকি দেন। এর পরই হেইউডকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন কাইলাই। ২০১১ সালের ১২ নভেম্বর কাইলাইয়ের নির্দেশে তাঁর স্বামীর সাবেক দেহরক্ষী ঝ্যাং জিয়াওজুন হেইউডকে চংকিংয়ে আমন্ত্রণ জানান। পরের দিন চংকিংয়ের একটি হোটেলে পেঁৗছান হেইউড। সেদিন রাতে কাইলাই ও জিয়াওজুনের সঙ্গে বসে চা ও মদ পান শুরু করেন তিনি। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হেইউড অসুস্থ বোধ করেন এবং বমি করতে শুরু করেন। হেইউড পানি পান করতে চাইলে কাইলাই পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেন। এই ঘটনাকে ওষুধের ওভারডোজ প্রমাণের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন ঘরের ভেতর ছুড়ে ফেলে বের হয়ে আসেন কাইলাই ও জিয়াওজুন। দুই দিন পরে হেইউডের লাশ ওই রুম থেকেই উদ্ধার করা হয়।
কাইলাই দাবি করেছেন, লাগাতার অনিদ্রা, উদ্বেগ, হতাশা ও বিপদের ভয়ে বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ছেলের প্রতি হুমকির ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমার কাছে এটা হুমকির চেয়েও বেশি ছিল। এ জন্য কার্যকর কিছু একটা করার দরকার ছিল। জীবন বাজি রেখে হেইউডের পাগলামি থামাতে চেয়েছিলাম আমি।' সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.