ঈদে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ- ভাড়ার তালিকা টাঙানো হয়নি by আনোয়ার হোসেন

আইনে থাকলেও সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না টাঙিয়েই ঈদের টিকিট বিক্রি করছে বাস কোম্পানিগুলো। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন অগ্রিম টিকিট নিতে আসা লোকজন। বাড়তি ভাড়া আদায় রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।


গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার গাবতলী বাস টার্মিনাল, কল্যাণপুর ও শ্যামলী এলাকায় দেখা গেছে, বিভিন্ন বাসে গন্তব্যভেদে রোজার আগে যে ভাড়া নেওয়া হতো, সে তুলনায় জনপ্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
অনেক বাস কোম্পানি অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে দিলেও বাড়তি ভাড়া আদায় এবং টিকিট কালোবাজারি বন্ধে বিআরটিএর কোনো তদারকি দল দেখা যায়নি বাস টার্মিনালগুলোতে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের নালিশ দেওয়ার মতো কর্তৃপক্ষ নেই।
২০১১ সালে ঈদুল ফিতরে টিকিট কালোবাজারি ও বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে টার্মিনালগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গাবতলী টার্মিনালে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কয়েকজনকে সাজাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিবহন-শ্রমিকদের লেলিয়ে দিয়ে বাসমালিকেরা ম্যাজিস্ট্রেটকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখেছিলেন। এরপর আর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়নি।
নামীদামি বাস কোম্পানিগুলো ৩ আগস্ট থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে। কিছু বাস কোম্পানির টিকিট বিক্রি শুরু হয় ১ আগস্ট। ১৪ থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। অধিকাংশ বাস কোম্পানির কর্মীরা জানিয়েছেন, টানা ছুটি থাকায় তুলনামূলকভাবে ১৪, ১৫ ও ১৬ আগস্টের টিকিটের বেশি চাহিদা দেখা গেছে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান আয়ুবুর রহমান খান প্রথম আলোকে জানান, আজ থেকে বিআরটিএর তদারকি দল নামবে। আগে না নামানোর বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য বছর পাঁচ দিন আগে নামে। এবার ঈদের সাত-আট দিন আগে নামছে। বিআরটিএর তালিকা না টাঙিয়ে ভাড়া আদায় করার বিষয়টি তাঁদের তদারকি দল খতিয়ে দেখবে।
নিয়মানুযায়ী, টিকিট বিক্রির সময় বিআরটিএ-নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা বাস কোম্পানির কাউন্টারে টাঙিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু নগরের গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলীসহ বিভিন্ন বাস কোম্পানির টিকিট বিক্রির কাউন্টারে বিআরটিএর তালিকা পাওয়া যায়নি। কিছু কিছু কাউন্টারে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সরবরাহ করা তালিকা দেখা গেছে। তবে সেগুলোতে বিআরটিএর অনুমোদন দেখা যায়নি।
বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা জানান, দূরপাল্লার প্রতিটি পথে (রুটে) সর্বশেষ ভাড়ার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু বাসমালিকেরা সেসব তালিকা সংগ্রহ না করেই মালিক সমিতির তালিকা ব্যবহার করছেন।
গাবতলীতে দেখা গেছে, দিগন্ত পরিবহনে কমবেশি সব দিনেরই টিকিট আছে। তবে দাম বাড়তি। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ৫২ আসনের বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৭০ টাকা করে। আর চেয়ারকোচের ভাড়া ৫২০ টাকা। এই পরিবহনের বাস ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর যায়।
গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে দিগন্ত পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে কথা হয় গোপালগঞ্জের আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ৩৭০ টাকায় একটি টিকিট নিয়েছেন। এই একই বাসের একই গন্তব্যের টিকিট তিনি ঈদের আগে ২৫০ টাকায় নিয়েছিলেন। টিকিট বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা দাবি করেন, তাঁরা সরকার-নির্ধারিত হারে ভাড়া নিচ্ছেন। তালিকা দেখতে চাইলে মালিক সমিতির সরবরাহ করা তালিকা দেখান। বিআরটিএর তালিকা নেই কেন? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা।
এস আর পরিবহনে বগুড়ার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা। সব গন্তব্যেই এই পরিবহনের ভাড়া গড়ে ৫০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
জানতে চাইলে এস আর পরিবহনের কল্যাণপুর টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থাপক আমিন নবী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সরকার-নির্ধারিত ভাড়া ৩৫০ টাকা। এত দিন তাঁরা ৫০ টাকা কম নিতেন। ঈদে কম নেওয়া হচ্ছে না।
শ্যামলী পরিবহনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫২০ টাকা করে। ঈদের আগে এই গন্তব্যে যাত্রীভেদে ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো।

No comments

Powered by Blogger.