আমানত শাহ্ লুঙ্গি অলিম্পিক আপডেট-ব্রোঞ্জই এখন ইসিনবায়েভার কাছে সোনার সমান! by মাসুদ পারভেজ

ইংরেজিতে একদম সাবলীল নন। তাই মাঝেমধ্যেই আটকে যান। ছুটতে সংবাদ সম্মেলনেই এক রাশিয়ান সাংবাদিকের শরণাপন্ন হলেন ইয়েলেনা ইসিনবায়েভা! ছিঁড়ে যাওয়া মাংসপেশির ইংরেজি জেনে নিলেন প্রথমে। এরপর যখন জানতে চাওয়া হলো ইনজুরিটা কোথায়, তখন 'পোলভল্টের রানি' দাঁড়িয়েই গেলেন। এবার দেখালেন তাঁর বাম ঊরু।


এ ঊরুর ইনজুরি তাঁকে লন্ডন অলিম্পিকের আগে শুধুই যন্ত্রণাকাতর সময় উপহার দিয়ে গেছে। এমনই তার প্রকোপ যে টানা দুবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন এবার কত অল্পতেই সন্তুষ্ট! ২০০৯ সালের আগস্টে জুরিখে ৫.০৬ মিটার লাফিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়া এ রাশিয়ান কিনা পরশু স্ট্র্যাটফোর্ডের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে লাফালেন এর চেয়ে ৩৬ সেন্টিমিটার কম (৪.৭০)! যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার সুর ও কিউবার ইয়ারিসলে সিলভারা তাঁর চেয়ে বেশি লাফিয়ে জিতে নিলেন সোনা ও রুপা। অথচ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের কোনো ইভেন্টে টানা তৃতীয় অলিম্পিক সোনা জিতে নতুন ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল যাঁর সামনে, সেই ইসিনবায়েভা ব্রোঞ্জ জিতেই হাসিতে উচ্ছ্বল!
অলিম্পিক ব্রোঞ্জের স্বাদ তাঁর কাছে তিক্তই হওয়ার কথা, কিন্তু ইসিনবায়েভার কথা শুনে মনে হলো অমৃতসুধা। না হলে কেন 'ভেরি টেস্টফুল' বলে হাসিতে গড়িয়ে পড়বেন! ২০০৫ সালে মেয়েদের পোলভল্টে ইতিহাসে প্রথমবার পাঁচ মিটার পেরোনো ইসিনবায়েভার কাছে এ ব্রোঞ্জের মর্যাদাও তো আগের দুই অলিম্পিক সোনার চেয়ে কম বলে মনে হলো না, 'সত্যি কথা বলতে এ ব্রোঞ্জটা আমার কাছে সোনারই সমান।' কারণ সেই ইনজুরি, যা তাঁকে তৃতীয় অলিম্পিক সোনা জেতার জন্য প্রস্তুতিই নিতে দেয়নি, 'দুই মাস আমি দৌড়াতে তো বা লাফাতেও পারছিলাম না। এ জন্যই লন্ডনে আসার আগে কোনো প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেওয়া হয়নি। ইনজুরিটা যত দিনে সেরেছে, তত দিনে আর লন্ডনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়ই ছিল না। মোটে ১০ দিন পেয়েছিলাম। ১০ দিনে এত বড় আসরের জন্য নিজেকে তৈরি করাটা অসম্ভবই।'
অথচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও ইসিনবায়েভা ছিলেন সেই আগের মতো। ৫.০১ মিটার লাফিয়ে গড়েছিলেন ইনডোরের নতুন বিশ্বরেকর্ড, যেটি তাঁর ২৮তম বিশ্বরেকর্ডও। এত এত বিশ্বরেকর্ড যাঁর পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়েছে, তাঁর এবার এভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ার অন্তর্দহন না হয়ে পারেই না। অবসরের সিদ্ধান্ত হয়তো সে কারণেই আরো পিছিয়ে দেওয়া। সেটা এমনকি ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিক পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে চান, 'আমার ইচ্ছে ছিল লন্ডনে সোনা জিতে অবসর নেব। কিন্তু এখন আমি ব্রোঞ্জ নিয়ে অবসরে যেতে চাই না। সুতরাং আমি এখন রিওতে যাওয়া নিয়ে ভাবব, যাতে অন্তত সোনাটা জিতে অবসরে যেতে পারি।'
হাসতে হাসতে অবশ্য এটাও জানিয়ে রাখলেন যে তাঁর সিদ্ধান্তের কোনো গ্যারান্টি নেই! এখন যা মনে হয়, একটু পরেই হয়তো অন্য রকম। এখন 'হ্যাঁ' বলার কিছুদিন পর সেটা 'না'ও হয়ে যেতে পারে, ''আমি আসলে খুব দোটানায় থাকি। আজ হয়তো বললাম যে 'নাহ, আর নয়।' কিন্তু কাল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই হয়তো আবার খেলে যেতে ইচ্ছে করবে।'' অবশ্য এমন নয় যে এবারই প্রথম ক্যারিয়ারে খারাপ সময় এলো তাঁর। রীতিমতো 'অজেয়' হয়ে ওঠা এ রাশিয়ান বেইজিং অলিম্পিকের পর থেকেই ছন্দ হারাতে হারাতে নিজের ওপর এমনই বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছিলেন যে স্বেচ্ছাবিরতিও নিয়ে ফেলেছিলেন। ১১ মাসের সে বিরতির পর গত বছরই আবার ফেরা ইসিনবায়েভা মাঝের দুঃসহ সময়টা বোঝাতেই বলছিলেন, 'বেইজিং আর লন্ডন অলিম্পিকের মাঝখানে আমার জীবনে বড় কঠিন সময় গেছে। কত কত মানসিক আর শারীরিক সমস্যার মধ্যে দিয়েই না যেতে হয়েছে আমাকে।'
যাচ্ছিলেন এ অলিম্পিকের সময়ও। না হলে ব্রোঞ্জ জিতেই সন্তুষ্ট ইসিনবায়েভার মুখে কেন শোভা পাবে 'যাক বাবা, বাঁচা গেল' ধরনের স্বস্তি, 'অলিম্পিকটা শেষ হয়েছে বলেও আমি খুশি, কারণ এটা খুব কষ্টকরও ছিল।' কষ্টকর ছিল বলেই চ্যাম্পিয়ন ইসিনবায়েভার কাছে ব্রোঞ্জই এখন সোনার সমান!

No comments

Powered by Blogger.