অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে ঈদের পর মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ

সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে সারাদেশে জনমত সৃষ্টি এবং এবং তৃণমূলে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে ঈদের পর মাঠে নামবে শাসক দল আওয়ামী লীগ। সারাবিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বাংলাদেশেও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব এ বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরবে দলটির শীর্ষ নেতারা।


এছাড়া তৃণমূলে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন এই দলটি অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেবে। এ দুটি টার্গেট পূরণে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে ১২টি টিম গঠন করা হয়েছে। সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদককে ১২টি টিমের সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়ে তাদের পুরোদমে মাঠে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন প্রস্তুতি গ্রহণের ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এই চিঠি প্রেরণের কথা জনকণ্ঠের কাছে স্বীকার করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। তৃণমূল নেতাদের কাছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছেÑ ‘ইতোপূর্বে আপনাদের জেলা ও জেলাধীন উপজেলা/থানা শাখা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্পন্ন করার লক্ষে দুটি সার্কুলার প্রেরণ করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে অধিকাংশ জেলা আওয়ামী লীগ তাদের জেলাধীন উপজেলা/থানা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে আমরা অবহিত হয়েছি। উপজেলা/থানা ও জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্তের আলোকে ১২টি টিম গঠন করা হয়েছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত উল্লিখিত টিমের সদস্যবৃন্দ কাউন্সিলসমূহ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান এবং অংশগ্রহণ করবেন। দেশের প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকগণ স্ব স্ব বিভাগীয় কার্যক্রমের সমন্বয়সাধন করবেন। আমরা আশা করি অতি সত্বর সদস্য সংগ্রহ, তৃণমূল পর্যায় থেকে উপজেলা/থানা ও জেলা কাউন্সিলসমূহ সুচারুরূপে সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি ও কাঠামোকে আরও সুদৃঢ় করবেন। তরুণ প্রজন্মসহ সর্বস্তরের জনগণকে দলের পতাকাতলে সংগঠিত করে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম সংগঠন গড়ে তুলবেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে দলের বিজয় সুনিশ্চিত করার লক্ষে সর্বস্তরের দলীয় সংগঠনকে প্রস্তুত করার জন্য গ্রহণ করবেন সর্বাত্মক উদ্যোগ।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ জানান, বিরোধী দলের অংশীদারিত্ব রাখার সুযোগ রেখে প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তী সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছে তা সর্বজন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। জনগণ এ প্রস্তাবে সমর্থন জানালেও বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হবে। অসাংবিধানিক কোন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না।
তিনি জানান, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬০ ভাগ সম্মেলন শেষ হয়েছে। তৃণমূলে সম্মেলন শেষ করতে ১২টি টিম গঠন করা হয়েছে। এখন শোকাবহ আগস্টে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। ঈদের পর তৃণমূলে সম্মেলনের কাজ শুরু হবে। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে উপ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউপিসহ প্রায় ৫ হাজার ২২৬টি নির্বাচন সম্পন্ন করেছে স্বাধীন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। একটি নির্বাচন নিয়েও কোন প্রশ্ন ওঠেনি। আগামী নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে।
জানা গেছে, ঈদের পর নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের তৃণমূলে সম্মেলন সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করার টার্গেট নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে মেয়াদোত্তীর্ণ ৪৫৬টি উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। এরপর জেলা কমিটির সম্মেলন হবে। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তৃণমূলের এসব সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ১২টি টিম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবেন।
তৃণমূলে সুষ্ঠুভাবে সম্মেলন শেষ করতে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে জনমত গঠনে সাত বিভাগের সাত সাংগঠনিক সম্পাদককে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ১২টি টিমের মধ্যে প্রথম টিমে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, কাজী জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম মোজাম্মেল হক এমপি, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সৈয়দ আবুল হোসেন এমপি, আলহাজ এ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কর্নেল (অব) ফারুক খান এমপি, হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রী বিপুল ঘোষ, আব্দুর রহমান এমপি, একেএম এনামুল হক শামীম। এরা ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার দায়িত্ব পালন করবেন।
দ্বিতীয় টিমে রয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, কাজী জাফর উল্লাহ, এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান এমপি, নূহ-উল-আলম লেনিন, আক্তারুজ্জামান, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, ডা. বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু, একেএম রহমত উল্লাহ এমপি, মৃণাল কান্তি দাস। এরা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলায় দায়িত্ব পালন করবেন।
তৃতীয় টিমে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এমপি, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আখতারুজ্জামান, অসীম কুমার উকিল, মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। এরা নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর জেলার দায়িত্বে।
চতুর্থ টিমে রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এমপি, মীর্জা আজম এমপি। এরা দায়িত্ব পালন করবেন ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, জামালপুর জেলার।
পঞ্চম টিমে রয়েছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি, আসাদুজ্জামান নূর এমপি, আশিকুর রহমান এমপি, ফজলে রাব্বী এমপি, টিপু মুন্সী এমপি। এরা রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় দায়িত্ব পালন করবেন।
৬ষ্ঠ টিমে রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আখতারুজ্জামান, খায়রুজ্জামান লিটন, মজিবুর রহমান মজনু, আকতার জাহান। এরা জয়পুরহাট, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলার দায়িত্বে।
সপ্তম টিমে রয়েছেন কাজী জাফর উল্লাহ, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আলতাফ হোসেন, শেখ হারুন অর রশিদ, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মোস্তফা মোহাম্মদ ফারুখ এমপি। এরা মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা মহানগর, খুলনা জেলা ও বাগেরহাট জেলার দায়িত্বে।
অষ্টম টিমে রয়েছেন আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ এমপি, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ওবায়দুল কাদের এমপি, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবীর নানক এমপি, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। এরা বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল জেলা, বরিশাল মহানগর, ঝালকাঠি, পিরোজপুর জেলায় দায়িত্ব পালন করবেন।
নবম টিমে রয়েছেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপি, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, ড. হাসান মাহমুদ এমপি, আমিনুল ইসলাম আমিন। এরা চট্টগ্রাম (উত্তর), চট্টগ্রাম (দক্ষিণ), চট্টগ্রাম মহানগর, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলায় দায়িত্ব পালন করবেন।
দশম টিমে রয়েছেন তোফায়েল আহমেদ এমপি, সতীশ চন্দ্র রায়, ওবায়দুল কাদের এমপি, ফরিদুন নাহার লাইলী এমপি, ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী এমপি। এরা নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার দায়িত্ব পালন করবেন।
এগারো নম্বর টিমে রয়েছেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি, ডা. দীপু মনি এমপি, ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম এমপি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আ.হ.ম মোস্তফা কামাল লোটাস কামাল এমপি, আব্দুল মতিন খসরু এমপি, সুজিত রায় নন্দী। এরা কুমিল্লা (উত্তর), কুমিল্লা (দক্ষিণ), চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দায়িত্ব পালন করবেন।
১২ নস্বর টিমে রয়েছেন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এমপি, নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, আব্দুল মান্নান এমপি, জেবুন্নেসা হক এমপি। এরা দায়িত্ব পালন করবেন সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট মহানগর ও সিলেট জেলার।

No comments

Powered by Blogger.