দক্ষিণ চীন সাগরে সৈন্য পাঠাচ্ছে বেজিং

চীন দক্ষিণ চীন সাগরে বিতর্কিত দ্বীপগুলোয় পাহারা দেয়ার জন্য এক গ্যারিসন সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সামরিক সংস্থা কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দ্বীপগুলোর মালিকানা চীন ও ভিয়েতনাম উভয় দেশই দাবি করে থাকে। এগুলো হলো স্পাটলি, প্যারাসেন ও ম্যাকলেস ফিল্ড ব্যাঙ্ক।


এই তিনটি দ্বীপমালায় মাত্র ১১শ’ লোকের বাস। এদের শাসন করার জন্য সম্প্রতি ৪৫ জন আইনসভা সদস্য নির্বাচিত করা হয়। মাত্র ক’দিন আগে এই নির্বাচিত সদস্যদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে চীনের ভূখ-গত বিরোধ বিস্তারের নতুন মাত্রা যোগ হলো। নতুন আইনসভা সদস্যরা শুধু এই দ্বীপগুলোই নয়, উপরন্তু প্রায় ৭ লাখ ৭২ হাজার বর্গমাইলের দক্ষিণ চীন সাগরও শাসন করবে। দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর চীন তার একক এখতিয়ার দাবি করে থাকে। আর যে তিনটি দ্বীপমালার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই শিলাপাথর ও প্রবালের তৈরি।
নির্বাচক ও সৈন্য মোতায়েনের উদ্দেশ্য বাহ্যত দক্ষিণ চীন সাগর ও এর সম্পদরাজির ওপর চীনের দাবি নতুন করে জোর দিয়ে ঘোষণা করা। সম্পদরাজির মধ্যে জ্বালানিসম্পদ থাকার সমূহ সম্ভাবনা আছে। কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে আশিয়ান দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনের এক সপ্তাহ পর চীন সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল। জানা গেছে, যে ১০ জাতির এই সংস্থা দক্ষিণ চীন সাগর প্রশ্নে সামান্যতম ইশতেহারও যাতে প্রকাশ না করে তার জন্য চীন নিজ প্রভাবকে কাজে লাগিয়েছে।
তিনটি দ্বীপমালার ওপর ভিয়েতনামেরও সমান দাবি আছে। কাজেই সেসব দ্বীপে চীনা সৈন্য মোতায়েনে ভিয়েতনামের অবশ্যই বিগড়ে যাওয়ার কথা। উল্লেখ্য, সত্তরের দশকে এই তিনটি দ্বীপ নিয়ে চীন-ভিয়েতনা যুদ্ধ হয়েছে। গত মাসে ভিয়েতনাম প্যারাসেন ও স্পাটলি দ্বীপমালার ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে একটি আইন পাস করেছে। অন্যদিকে চীন বলে এগুলো তার ভূখ- যা নিয়ে কোন বিতর্ক চলতে পারে না।
এদিকে ফিলিপিন্সের উপকূলের অদূরে স্ক্যারবরো মগ্নচরা নিয়ে ফিলিপিন্স ও চীনের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলছে। ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট বেনিগনো একুইনো বলেছেন, এই বিরোধে তার দেশ পিছু হটবে না বরং মগ্নচরা রক্ষার জন্য সামরিক বাহিনীর হাতে নতুন কিছু বিমান ও জাহাজ দেয়া হবে।
দক্ষিণ চীন সাগরে তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইয়েরও পরস্পরবিরোধী দাবি আছে যার ফলে এলাকাটি সামরিক শক্তি প্রদর্শনের নতুন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। স্পাটলি, প্যারাসেন ও ম্যাকলেসফিল্ড দ্বীপের ক্ষেত্রে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ গত মাসে সানশা সিটি নামে প্রিফেক্ট পর্যায়ের প্রশাসন কায়েম অনুমোদন করে। এরপর আইনসভা নির্বাচন ও গণকংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সেই আইনসভা সদস্যদের বৈঠক থেকে বোঝা যায় যে, চীন দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অংশ নিজের এখতিয়ারে নেয়ার ব্যাপারে সিরিয়াস। এখন ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সও নিজ নিজ দাবি জানিয়ে বসায় চীনও অতিদ্রুত তার পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে। গণমুক্তি ফৌজের যে গ্যারিসনটি পাঠানোর কথা, খুব সম্ভব সেটা স্পাটলি দ্বীপে অবস্থান নেবে। কারণ এই দ্বীপটি চীনের সবচেয়ে কাছের এবং এর স্থাপনাগুলোও অপেক্ষাকৃত ভাল।

ওকিনাওয়া দাবি করতে পারে চীন
ওদিকে পূর্ব চীন সাগরে প্রত্যন্ত ও জনমানবহীন কতিপয় দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চীন-জাপান বিরোধ যেভাবে বাড়ছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক বলে মনে করেন কিছু কিছু পর্যবেক্ষক। কোন কোন প্রভাবশালী চীনা জাতীয়তাবাদী ভাষ্যকারের বক্তব্য থেকে মনে হয়, জাপান নিয়ন্ত্রিত সেনকাকু দ্বীপমালা (চীনাদের ভাষায় দিয়াওইউ) নিয়ে দু’দেশের যেভাবে কথা চালাচালি হচ্ছে সেটাকে কেন্দ্র করে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ নিয়েও বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে এবং সেটি হলো ওকিনাওয়া। এ মাসে গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে ওকিনাওয়ার ওপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ করার জন্য বেজিং সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পত্রিকাটি কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত।
এ ব্যাপারে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন চীনের ন্যাশনাল ডিকেন্স ইউনিভার্সিটির স্ট্র্যাটেজি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান মেজর জেনারেল জিন ইমান। তিনি বলেছেন, চীনের উচিত গোটা রাইয়ুকিউ দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যার অর্থ শুধু ওকিনাওয়া নয়, ওকিনাওয়াকে ছাড়িয়েও আরও বিস্তৃত এলাকার মালিকানা দাবি করা।
চীন সরকার অবশ্য এখনও পর্যন্ত এই দাবি অনুমোদন করেনি। তবে সিনিয়র ভাষ্যকারদের এমন র‌্যাডিকেল দাবি তুলে ধরতে যেভাবে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে তাতে জাপান ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ নিদারুণ অস্বস্তিবোধ করতে পারে।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট ও অন্যান্য

No comments

Powered by Blogger.