মেধাবী মুখ- অনুরাধার চমক by মান কুমারী

স্বপ্ন দেখতে খুব ভালোবাসেন তিনি, আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টাটা তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে তিনি মনে করেন। বলছিলাম পাহাড়ি কন্যা অনুরাধা পুনম চাকমার কথা। একঝাঁক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।


স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণী পেয়েছেন। দুটি পরীক্ষাতেই রয়েছেন শীর্ষ তিনে। তাঁর জিপিএ-৩.৬৩ এবং ৩.৫৭।
অনেকগুলো বিষয় থেকে তিনি বেছে নেন তাঁর পছন্দের বিষয় নৃবিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞান কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তর দেন, ‘আমার এক কাজিনকে এই বিষয়টি নিয়ে পড়তে দেখে আমারও আগ্রহ জন্মায় এই বিষয়টির প্রতি। তাই সিদ্ধান্ত নিই, আমিও এই বিষয়টি নিয়ে পড়ব।’ সেদিনের তাঁর সেই সিদ্ধান্তটি যে ভুল ছিল না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া গেল তাঁর পরিচয়।
একজন আদিবাসী নারী হয়েও তিনি প্রমাণ করলেন, চেষ্টা আর ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব। পড়াশোনার বাইরের সময়টুকুতে কীভাবে অবসর কাটে জানতে চাইলে বলেন ‘আমি বই পড়তে আর গান শুনতে খুব ভালোবাসি। তা ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গেও অনেক আড্ডা দিতে পছন্দ করি। যেকোনো ধরনের বই আমি পড়ি, তবে উপন্যাস পড়তে সবচেয়ে ভালো লাগে। এভাবে বই, গান আর আড্ডা দিয়ে অবসর কাটাই। জানতে পারলাম রবীন্দ্রনাথ ও হুমায়ূন আহমেদ তাঁর খুব প্রিয়।
রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি শেষ করলেও এইচএসসি করেন ঢাকার বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ থেকে। শুধু লেখাপড়াতেই সেরা নন পুনম, ছোটবেলায় গান শিখেছেন আর জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পেয়েছেন পুরস্কারও। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করে সুনাম কুড়িয়েছেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। বাবা প্রকৌশলী ও মা গৃহিণী। পড়াশোনায় সবচেয়ে উৎসাহ পেয়েছেন বাবা-মার কাছ থেকে। এ ছাড়া বিভাগের শিক্ষকদের কাছেও তিনি চিরকৃতজ্ঞ। পুনম বলেন, ‘অনেক উৎসাহ পেয়েছি আমি আমার বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে, যা ভোলার নয়।’
কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করি, এই যে এতটা পথ পাড়ি দিলেন, খুব কি সহজ ছিল? মুচকি হেসে জবাব দেন, ‘খুব যে সহজ ছিল, তা নয়। আমি আদিবাসী নারী হিসেবে হয়তো অনেক জায়গায় বাধা এসেছে, তবে সেগুলোকে আমি কঠিন কিছু মনে না করে আমার কাজ আমি করে গেছি।’
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা জানতে চাইলে বলেন, ‘কিছুদিন পর আমি দেশের বাইরে যাচ্ছি। আপাতত নৃবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই। সেই সঙ্গে শিক্ষকতাকে ভবিষ্যতে পেশা হিসেবে নিতে পারলে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবতী বলে মনে করব।’

No comments

Powered by Blogger.