জুলাইয়ে বিদেশে চাকরি হয়েছে ৬২,৭১৩ জনের by মেহেদী হাসান

বিদেশে জনশক্তি প্রেরণে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সরকারি হিসাবে গত জুলাই মাসে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬২ হাজার ৭১৩ জনের। ফলে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল চার লাখ ৩৭ হাজার ৫৫০ জনে।


বছর শেষে এ সংখ্যা গত বছরের সংখ্যাকেও (পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ৬২ জন) ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আরেক হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার পরিমাণ ১২ শতাংশ বেড়ে ৬৫ হাজার ৫৩২ কোটি ২৮ লাখে উন্নীত হয়েছে।
সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এ সংখ্যা এক লাখ ৯৬ হাজার ২২০ জন। গন্তব্যে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে আছে ওমান। ওই দেশে এ বছর এক লাখ ৯ হাজার ২৫৩ জন বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। তৃতীয় শীর্ষ গন্তব্য সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩৪ হাজার ২০ জনের। এ ছাড়া লিবিয়ায় ১৪ হাজার ৩৬৩ জন, কাতারে ১৪ হাজার ২৩৩ জন, বাহরাইরে ১২ হাজার ৪৩৪ জন, সৌদি আরবে ১২ হাজার ২১৬ জন, লেবাননে ৯ হাজার ১৫৩ জন, মিসরে ছয় হাজার ৩৫১ জন, ইতালিতে পাঁচ হাজার ৯৯৭ জন, জর্দানে চার হাজার ১১৯ জন, মরিশাসে তিন হাজার ৭২৫ জন, ব্রুনাইয়ে তিন হাজার ১৭৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, গত জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের হার ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, চলতি বছর বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর সংখ্যা গত তিন বছরের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের প্রথম বছর ২০০৯ সালে চার লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন, ২০১০ সালে তিন লাখ ৯০ হাজার ৭০২ জন এবং গত বছর পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ৬২ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের অর্থ পাঠানোর হারও বেড়েছে। ২০০৯ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার ৯৮১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১০ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৭৬ হাজার ৬৩৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং গত বছর ৮৯ হাজার ৮৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশিদের শ্রমবাজারকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন নতুন মিশন খোলা হচ্ছে। পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি বৈধতা পাচ্ছেন। এগুলো অত্যন্ত ইতিবাচক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ কারণে প্রতারণার শিকার হয়ে কর্মীদের ফিরে আসার সংখ্যা এখন বেশ কম। অভিবাসন ব্যয় কমাতে সরকারি উদ্যোগে কর্মী পাঠানোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখন শ্রমবাজারগুলো নিয়ন্ত্রিত। এর অনেক ইতিবাচক দিক আছে। হয়রানি অনেক কমেছে। আমরা অনেক ভালো করছি।'
সচিব আরো বলেন, 'জনশক্তি পাঠানোর সঙ্গে জড়িত বেসরকারি খাতগুলো হয়তো মনে করতে পারে, এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারতো। এটি ঠিক নয়। বরং আমাদের নিয়ন্ত্রণের কারণেই জনশক্তি পাঠানোর সংখ্যা ও ব্যবস্থাপনা ভালো হয়েছে।
সম্ভাব্য নতুন শ্রমবাজার সম্পর্কে জাফর আহমেদ বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য যেকোনো সময় খুলে যাবে। থাইল্যান্ডেও জনশক্তি পাঠানোর ভালো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। হংকং, ম্যাকাওয়ের সঙ্গেও এ ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এসবকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে প্রবাসীকল্যাণ সচিব আশা করেন, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের পরিস্থিতি আরো ভালো হবে।

No comments

Powered by Blogger.