কালান্তরের কড়চা-বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে একটি অভিনব ও অসম যুদ্ধ-২ by আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যদি গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে একটি ভুল বা অসংগত সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকে, সেটা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে যদি একটি বহিঃশক্তি বারবার হস্তক্ষেপ করতে থাকে এবং তাতে দেশের ভেতরেরই একদল লোক সোৎসাহে সমর্থন জোগাতে থাকেন, তা দেশপ্রেম না দেশবিরোধিতার পর্যায়ে পড়ে, তা আজ দেশের মানুষের বিবেচনা করার সময় এসেছে।


গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সরকার যে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে, সে সম্পর্কে বাংলাদেশের ভেতরের একদল লোক ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রক প্রায় একই সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিস্ময়! বিস্ময়!! বাংলাদেশে সরকার একটি ব্যাংক পরিচালনাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিলেও আমেরিকার তাতে আপত্তি! মনে হয়, এরপর মন্ত্রিসভা রদবদলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে আগে তাতে মার্কিন ফরেন অফিসের অনুমোদন নিতে হবে। নইলে তারা গোস্বা করবে এবং সেই সিদ্ধান্ত পাল্টানোর জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করবে। এটা স্পষ্টভাবে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ এবং এই হস্তক্ষেপকে সফল করার জন্য দেশের ভেতরে বসে যেসব মুখচেনা ব্যক্তি ও মিডিয়া হন্যে হয়ে প্রচারযুদ্ধে নেমেছে, তাদের দেশপ্রেমিক বলা হলে দেশের স্বার্থ ও সম্মানবিরোধী লোক কাদের বলা হবে?
ড. ইউনূস বারবার সুপার পাওয়ার আমেরিকার মুখাপেক্ষী হয়ে তাঁর দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করাচ্ছেন, তা কি একটি দেশপ্রেমমূলক কাজ? এই সুপার পাওয়ার মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে অন্যায় হামলা চালিয়ে দেশটি ধ্বংস করেছে। মিত্র দেশ পাকিস্তানকে, একটি মাত্র লোক লাদেন খোঁজার নামে ড্রোন হামলায় নিত্য অসংখ্য নিরীহ নর-নারীকে হত্যা করেছে এবং এখনো করছে। এখন বাংলাদেশ তাদের অন্যায় চাপের কাছে মাথা নত না করলে এ দেশেও কি একজন মাত্র মানুষ ড. ইউনূসকে কেন্দ্র করে ড্রোন হামলা চালানো হবে?
ড. ইউনূসের ইংরেজি মাউথপিসটির কাছে দেশপ্রেমের সংজ্ঞা কী আমি জানি না। এই পত্রিকার সম্পাদক দেশের কোনো বড় সমস্যায়ও যত বড় প্রতিবেদন লেখেন না, তত বড় প্রতিবেদন লিখে ফেলেছেন গত সোমবার (৬ আগস্ট) তাঁর কাগজে ড. ইউনূসের পক্ষে সাফাই গেয়ে। একজন দুর্নীতিবাজ যত দুর্নীতিই করে থাকুন, তিনি দেশপ্রেমিক হতে পারেন। দেশের জন্য প্রাণও দিয়ে থাকেন। লর্ড ক্লাইভ জালিয়াত ও দুর্নীতিবাজ বলে বিচারে সোপর্দ হওয়া সত্ত্বেও আজ পেট্রিয়ট এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলে নন্দিত। কিন্তু যারা ক্ষমতা বা পদের অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষের অর্থ লুট করেছে, তাদের রক্ত শোষণ করেছে, তাদের ব্রিটেন ছেড়ে পালাতে হয়েছে অথবা বিচারে দণ্ডিত হতে হয়েছে। এই সেদিন জন স্টোনহাউসের মতো প্রভাবশালী মন্ত্রীকে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে তার অর্থ আত্মসাতের দায়ে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে এবং ধরা পড়ার পর দণ্ডিত হতে হয়েছে।
ঢাকার ইংরেজি দৈনিকটির সম্পাদক, যিনি শেখ হাসিনা রক্তশোষককে রক্তশোষক বলায় তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছেন, বলবেন কি, যদি গ্রামীণ ব্যাংকের গত তিন দশকের বেশি সময়ের অব্যবস্থা ও অনিয়ম সম্পর্কে সরকার যে তদন্ত কমিশন গঠন করেছে, সেই তদন্তে যদি কোনো রক্তশোষকের গরিবের রক্ত শোষণের নির্মম তথ্য বেরিয়ে আসে, তাহলে এই গলাবাজি বন্ধ করবেন? আসলে এই তদন্ত বন্ধ করা ও থলের বিড়াল যাতে বেরিয়ে না আসে, সে জন্যই কি তাঁরা একাধিক বহিঃশক্তিকে পৃষ্ঠপোষক করে এই অভিনব ও অসম যুদ্ধে নামেননি?
আসল কারণটা এখানেই। সরকার এত দিন গ্রামীণ ব্যাংকে ৩০ বছরের বেশি ড. ইউনূসের একাধিপত্য এবং একটি হাতেগড়া পরিচালনা পর্ষদ সামনে খাড়া করে যা খুশি করা সম্পর্কে কোনো তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। সরকার ব্যাংকটির ভেতরে জমে ওঠা অনিয়ম ও অব্যবস্থা দূর করার জন্য এ সম্পর্কে তদন্ত ও সুপারিশ জানানোর জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই তদন্ত কমিটি গঠনের খবর যেদিন প্রচারিত হয়, সেদিনই ড. ইউনূস তীব্র ভাষায় তাতে আপত্তি জানান এবং 'স্বচ্ছ রাজনীতির' প্রবক্তা ড. কামাল হোসেন ও ইউনূস-বলয়ের বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্টরা একযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই বলে প্রচারযুদ্ধে নামেন যে তিনি ড. ইউনূসের প্রতি আক্রোশ ও বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে এই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন শাকের ওপর বোঝার আঁটি! নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের বৈঠকে মন্ত্রিসভা ড. ইউনূসের দীর্ঘকাল ধরে নেওয়া বেতন-ভাতা ও আয়কর দেওয়া ইত্যাদি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আর যায় কোথায়? ভীমরুলের চাকে যেন ঘা পড়েছে! ইউনূসপন্থী অক্ষশক্তি রীতিমতো গর্জে উঠেছে।
এই অ্যাকসিসের বাংলা মুখপত্রটি গত ৪ আগস্ট, শনিবার এক প্রতিবেদনে লিখেছে, '...সরকার স্বেচ্ছাচারীভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের আইন পরিবর্তন করল, এ ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন-ভাতা নেওয়ার বৈধতা এবং তাঁর অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আয়কর খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিসভা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতেও ব্যক্তিবিশেষের প্রতি আক্রোশ প্রকাশিত হয়েছে। সরকার দীর্ঘ সময় ধরে দেশ-বিদেশে গ্রামীণ ব্যাংক ও তার প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যে বৈরিতাপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত তারই ধারাবাহিকতা।' (প্রথম আলো, ৪.৮.২০১২)
এই প্রতিবেদনটি পড়ে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারিনি। একজন ব্যক্তি যত উচ্চপদ ও সম্মানের অধিকারী হন না কেন, তিনি আইনের ঊধর্ে্ব নন। সম্প্রতি আইএমএফের মতো বিশ্ব সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ড. ইউনূস দীর্ঘকাল যাবৎ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদ আঁকড়ে আছেন। এই পদে থাকার বয়ঃসীমা অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি পদটি ছাড়েননি। তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যাংক পরিচালনার ব্যাপারে বহু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেগুলো হাসিনা সরকার তোলেনি। বিদেশি সূত্র থেকেও উঠেছিল।
ড. ইউনূসের উচিত ছিল, বয়ঃসীমা পার হওয়ায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় যোগ্য সহযোগীদের হাতে এর পরিচালনার ভার ছেড়ে দিয়ে নিজেরই এমডি পদ থেকে সরে যাওয়া। তাতে ব্যাংক এবং তার নিজের সুনাম বাঁচত। তিনি তা করেননি। তাঁকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সরকার কোনো মামলা করেনি। তিনি নিজেই সরকারের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দেশের উচ্চ আদালতে গেছেন। দেশের সবচেয়ে নামকরা আইনজীবীদের নিজের পক্ষে নিযুক্ত করেছেন। তার পরও তিনি মামলায় হেরে গেছেন। এখন তিনি উচ্চ আদালতের রায়ও মানবেন না। বলছেন, সালিস মানি, তালগাছটা আমার।
দেশের সরকারের সিদ্ধান্ত, সর্বোচ্চ আদালতের রায়- সব কিছু অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা করে তিনি বহিঃশক্তির দ্বারস্থ হয়েছেন এবং তাদের দ্বারা অবৈধ ও অন্যায় চাপ সৃষ্টি করে গ্রামীণ ব্যাংকে কর্তৃত্ব ফিরে পেতে চাইছেন। তিনি ও তাঁর চাঁইরাও বলছেন, তেমন লেখাপড়া না জানা যে নারী-পুরুষের বাহিনী দ্বারা তিনি একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছিলেন, সরকার ব্যাংকের নতুন এমডি নিয়োগে তাদের অধিকার নাকি খর্ব করেছে। এই পরিচালনা পর্ষদ যদি একটি ব্যাংক পরিচালনায় সক্ষম হয়, তাহলে সরকারের সঙ্গে লড়াই করে তারা নিশ্চয়ই নিজেদের অধিকার রক্ষায় অবশ্যই সফল হবে। সেখানে উপযাচক হয়ে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণে ড. ইউনূসের এত আগ্রহ কেন?
আসলে ব্যাপারটি কী এই নয় যে ড. ইউনূস তাঁর হাতে গড়া যে পরিচালনা পর্ষদ (১০০ টাকা করে ব্যাংকের শেয়ার গছিয়ে দিয়ে) ব্যাংকটির মাথায় চাপিয়ে রেখে এসেছেন, তারা ব্যাংকটির সংস্কার ও একজন যোগ্য এমডি নিয়োগে ক্রমাগত বাধা সৃষ্টি করে আসছে। এই বাধাটি সৃষ্টি করছেন ড. ইউনূস। তিনি নিজে এই পদে বহিঃশক্তির সহায়তায় ফিরে যেতে চান অথবা নিজের পছন্দমতো এমন ব্যক্তিকে বসাতে চান, যিনি তাঁর হুকুমমতো চলবেন এবং গ্রামীণ ব্যাংকের গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাগুলো ঢাকা দিয়ে রাখবেন। ড. ইউনূসের বর্তমান তৎপরতায় আসল উদ্দেশ্য এটাই বলে অনেকে সন্দেহ করছেন।
নইলে একটি সাধারণ তদন্তের নির্দেশে তাঁর এত আপত্তি কেন? তিনি যদি সততা ও সুনীতির মডেল হয়ে থাকেন এবং অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার কোনো কালি তাঁর গায়ে না লেগে থাকে, তাহলে এই তদন্তে তাঁর এত আপত্তি কেন? তদন্ত বন্ধ করার জন্য বহিঃশক্তি ও দেশের ভেতরের অক্ষৌহিণী বাহিনী নিয়ে যুদ্ধে নামা কেন? তিনি ও তাঁর 'হিজ মাস্টার্স ভয়েস' থেকে বলা হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের আক্রোশ ও বিদ্বেষ রয়েছে। দেশ-বিদেশে সরকার তাঁর বিরুদ্ধে বৈরিতাপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
শেখ হাসিনা তাঁর কোনো কোনো কথার দু-একটি কঠোর জবাব দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে কনসার্টেড প্রোপাগান্ডা চালিয়েছেন, তার প্রমাণ কোথায়? বরং ড. ইউনূসের মুখপত্র ও মুখপাত্রেরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে বেরিয়েছেন, ড. ইউনূস নোবেল প্রাইজ পাওয়ায় শেখ হাসিনা ঈর্ষাকাতর হয়েছেন এবং তাঁর জনপ্রিয়তা(?) দেখে ভীত হয়ে তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করছেন। সরকারের বর্তমান অধ্যাদেশের খসড়াটি নিয়েও এই অপপ্রচারের দামামাটিই বাজানো হচ্ছে।
'ভয়েস অব ড. ইউনূস' নামে পরিচিত হওয়া উচিত ইংরেজি ও বাংলা দৈনিক দুটির প্রচারণা দেখলে মনে হয়, ড. ইউনূস যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী খ্যাতনামা ব্যক্তি, সুতরাং তাঁর ও গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে সরকার কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারে না। এই দুই সম্পর্কেরই 'এলেমের মাত্রা' কতখানি তা আমার জানা নেই।
বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় সরকারি অর্থ ও সহযোগিতা ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কোনো সরকারি অর্থ ছিল না। তদুপরি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন নোবেল পুরস্কার জয়ী বিশ্বখ্যাত কবি। তার পরও কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান কর্মকর্তা, তখন এর পরিচালনা ব্যবস্থায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তখন ভারত স্বাধীন। ভারত সরকার রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিশ্বভারতীর প্রধান কর্মকর্তার (সম্ভবত চ্যান্সেলরও ছিলেন) পদ থেকে অপসারণ করে, পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় এবং পরিচালনার ভার গ্রহণ করে। তা নিয়ে কোনো বিদেশি সরকার কোনো প্রতিবাদ জানাতে আসেনি এবং দেশের ভেতরেও 'সব শিয়ালের এক রা' শোনা যায়নি। বহু পরে জানা গিয়েছিল, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীর কোনো অনিয়মের জন্য দায়ী ছিলেন না। তা সত্ত্বেও এই অপপ্রচার কেউ চালাননি যে ভারত সরকার বা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রকার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য বা ব্যক্তিবিশেষের প্রতি বিদ্বেষ থেকে বিশ্বভারতী সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
ড. ইউনূস ও তাঁর 'কোহর্টরা' বহিঃশক্তির সঙ্গে মিলে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিনব ও অসম যুদ্ধ শুরু করেছেন, তা সফল হলে দেশ ও জাতির ভয়ানক ক্ষতি হবে। এটা একটা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, একটা দেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এ জন্যই এই যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্য ও চরিত্র নিয়ে একটি বিশদ আলোচনা প্রয়োজন।
হাসিনা সরকার ও ড. ইউনূসের এই বিরোধের আসল কারণ কী? সত্যই কি ড. ইউনূস সম্পর্কে হাসিনা বিদ্বেষ ও ঈর্ষা পোষণ করেন, তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন? নাকি ড. ইউনূসেরই হাসিনা ও আওয়ামী লীগবিরোধী একটা গ্রান্ড ডিজাইন রয়েছে? এই বিরোধ প্রথম কে উসকিয়েছেন, হাসিনা, না ড. ইউনূস? ড. ইউনূসকে সমর্থন জানিয়ে যাঁরা তাঁর চারপাশে জড়ো হয়েছেন, তাঁরাই বা কারা এবং তাঁদের উদ্দেশ্য কী? ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বহিঃশক্তির এত শিরঃপীড়ার কারণ কী? ড. ইউনূস কি গরিবের বন্ধু, না গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের এজেন্ট? তিনি কি ব্যবসায়ী-রাজনীতিক, না রাজনীতিক-ব্যবসায়ী? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। তাহলেই এই অভিনব ও অসম যুদ্ধের কারণ জানা যাবে। বর্তমান প্রবন্ধে এই দীর্ঘ আলোচনা সম্ভব নয়। আগামী সপ্তাহেই আমার একটি কলামে এ সম্পর্কে আলোচনাটি শুরু করব বলে আশা রাখি।
লন্ডন, ৭ আগস্ট, মঙ্গলবার ২০১২

No comments

Powered by Blogger.