এবিসি রেডিও-প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’- সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করার মানসিকতা দরকার

এবিসি রেডিওর স্টুডিওতে প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’ অনুষ্ঠানে গত ২৪ জুলাই এসেছিলেন ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের প্রোগ্রাম হেড অর্থাৎ অনুষ্ঠানপ্রধান নাজরা মাহজাবীন। তিনি কথা বলেছেন কথাবন্ধু ব্রতীর সঙ্গে। সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ বা সামাজিক ব্যবসায়ের উদ্যোক্তা হওয়া এবং এ পেশার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।


কথাবন্ধু: সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ মূলত কী? এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলুন।
নাজরা মাহজাবীন: সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠান, যেটি ব্যবসাও করে, আবার মানুষ ও পরিবেশের সার্বিক উন্নয়নেও কাজ করে। এই ব্যবসায়ে যে লাভ হয়, তা পুনরায় সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেই ব্যয় করা হয়। আর ব্র্যাকেরই কোনো না কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতি থেকেই জন্ম হয়েছে ব্র্যাকের সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ। যার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেকোনো সামাজিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন।
কথাবন্ধু: এই খাতে কাজের ব্যাপ্তি কতটুকু বা কোথায় কোথায় কাজের সুযোগ রয়েছে?
নাজরা মাহজাবীন: এই সেক্টরে বা খাতে কাজের ব্যাপ্তি অনেক। ব্র্যাকের প্রায় ১৮টি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ আছে। এর মধ্যে ডেইরি, সোলার বা সৌরশক্তি, ফিশারিজ, পোলট্রি এবং কৃত্রিম প্রজনন এন্টারপ্রাইজ আছে। আর ব্র্যাকের সবচেয়ে বড় যে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ রয়েছে, সেটা হচ্ছে আড়ং। তাই এ ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ অনেক বেশি। বাংলাদেশের গ্রাম বা শহরের যেকোনো মানুষেরই এ ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
কথাবন্ধু: যারা মূলত গ্রামে বাস করে, যারা শহরের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাদের জন্য কীভাবে কাজ করা সম্ভব?
নাজরা মাহজাবীন: ব্র্যাকের কৃত্রিম প্রজনন এন্টারপ্রাইজ রয়েছে। সেখানে যারা কৃত্রিম প্রজননকর্মী হতে চায়, তাদের দুই মাসের জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এ জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা হচ্ছে এসএসসি বা মাধ্যমিক পাস। গ্রামের যেকোনো ছেলে বা মেয়েই এ সুযোগ নিতে পারে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের পর কৃত্রিম প্রজননের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি দরকার হয়, তা-ও আমরা ঋণের মাধ্যমে দিয়ে থাকি। যাতে তারা কাজ করে এই ঋণ শোধ করতে পারে। এ ছাড়া আড়ংয়ের সাত শতাধিক শাখাকেন্দ্র আছে, যেখানে প্রধানত গ্রামের নারীরাই বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ করে।
কথাবন্ধু: আমাদের দেশে যুবকদের বড় একটি অংশ বেকার। তাদের জন্য এই ক্ষেত্রটিতে কী ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে? উদ্যোক্তা হতে পারবে কি না?
নাজরা মাহজাবীন: আমরা কিন্তু বিভিন্ন ধরনের উদ্যোক্তা তৈরি করি। যেমন—কৃত্রিম প্রজননকর্মী যাঁরা আছেন, তাঁরাও কিন্তু একেকজন উদ্যোক্তা। এ ছাড়া ব্র্যাকের প্রায় ৯০ হাজার স্বাস্থ্য সেবিকা আছেন। তাঁরা একেকজন উদ্যোক্তা। তাঁদের ব্র্যাক থেকে প্রাথমিক কিছু রোগের চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের কিছু পণ্য সঙ্গে রাখার জন্য একটি ব্যাগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডেলিভারি কিট রাখা হয়। এ ছাড়া তাঁদের কাছে ব্যথার বা কৃমির ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন ইত্যাদি থাকে। এই স্বাস্থ্য সেবিকারা (ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা) বাড়ি বাড়ি গিয়ে পণ্যগুলো বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ জন্য ব্র্যাক ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থাও করে থাকে।
কথাবন্ধু: যদি কেউ এই খাতকে ব্যবসা হিসেবে নিতে চায়, তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
নাজরা মাহজাবীন: বাংলাদেশ বিশাল সম্ভাবনার দেশ। যেখানে মানুষ বাড়ার সুবাদে চাহিদাও বাড়ছে। তাই বিশাল সম্ভাবনাও আছে। এ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। তবে এ জন্য আগ্রহ, দক্ষতা ও উদ্যম থাকতে হবে। যাঁরা সফলভাবে কাজ করছেন, তাঁরা কিন্তু ভালোই উপার্জন করতে পারছেন।
কথাবন্ধু: ব্যক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে আপনারা তাঁদের কীভাবে সহায়তা করে থাকেন?
নাজরা মাহজাবীন: আমরা বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠীকেই আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই। আমরা যে শুধু কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছি, তা কিন্তু নয়। আমরা তাদের গবাদি পশু পালন, নার্সারি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ঋণ পাওয়ার ব্যাপারেও সহায়তা করে থাকি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে ব্র্যাক সহায়তা করছে।
কথাবন্ধু: আপনারা পণ্য বিপণন ও বাজারজাতকরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
নাজরা মাহজাবীন: ব্র্যাকের বড় একটি সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ হচ্ছে ব্র্যাক ডেইরি। আমরা সারা দেশ থেকে প্রতিদিনই সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করি। একই সঙ্গে দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত পণ্য বাজারজাত করে থাকি। আমরা পোলট্রি মিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে কৃষকদের কাছ থেকে মুরগিও কিনে থাকি। এর পরে তা আমাদের নিজস্ব বিক্রয়কর্মীর পাশাপাশি ডিলারদের মাধ্যমেও বাজারজাত করছি।
কথাবন্ধু: এ ক্ষেত্রে কাজ করতে কী ধরনের মানসিকতা থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
নাজরা মাহজাবীন: যাঁরা সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউর বা সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে চান, তাঁদের কিন্তু একটাই উদ্দেশ্য, অর্থাৎ সামাজিক পরিবর্তন আনে এ ধরনের কোনো কাজকে পেশা হিসেবে নেওয়া। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থ বা নিজের উন্নয়নের কথা না ভেবে সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করার মানসিকতা থাকা উচিত। এখানে কাজ করলে একটা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।
গ্রন্থনা: সুদীপ দে

No comments

Powered by Blogger.