রোজা পালন অত্যাবশ্যকীয় by মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার

পবিত্র মাহে রমজানের রোজা পালন আল্লাহ পাকের বিশেষ নির্দেশ। ত্রিশ রোজা পালন করা বয়স্ক মুসলমান নর-নারীর অবশ্য কর্তব্য। পবিত্র মাহে রমজানের রোজা পালনকারী একজন মুসলমান খাঁটি ইবাদতকারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় যে, তা হলো আমরা মোটামুটিভাবে রোজার তাৎপর্য, মাহাত্ম্য,


বরকত ও মহিমা সম্পর্কে কমবেশি জ্ঞান রাখি বটে। কিন্তু ইসলামী বিধান অনুযায়ী শুদ্ধভাবে রোজা পালন করছি কি না সে দিকটি সম্পর্কে সচেতন নই। অনেক সময় দেখা যায়, রোজা পালনের জরুরি খুঁটিনাটি বিষয় বা মাসয়ালা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকার কারণে হয়তো অজান্তে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। ফলে রোজা সঠিকভাবে আদায় হয় না।
সঠিকভাবে রোজা পালন করার বিশেষ কয়েকটি জরুরি বিষয় বা মাসয়ালা ফিকাহ অনুযায়ী উল্লেখ করছি : প্রথমে একজন মুসলমান সেহরির নিয়ত, ইফতার ও তারাবিহর নামাজ আদায় করার মধ্য দিয়ে রোজা পালন করে থাকেন। যেমন-১. সেহরি : সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ রাতের শেষ ভাগ পর্যন্ত সেহরির ওয়াক্ত বা সময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই রাতের শেষ ভাগেই সেহরি খাওয়া সুন্নত, এতে অনেক বরকত রয়েছে। ২. রোজার নিয়ত : আরবি নিয়ত জানা থাকলে ভালো। নতুবা বাংলায়ও নিয়ত করা চলে। মনে মনে শুধু বলতে হবে-আমি আগামী দিন রমজানের ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। হে আল্লাহ, তুমি কবুল করো। ৩. ইফতার : সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে হবে। ইফতার করার সময় যে দোয়া পড়ে ইফতার করতে হবে, এখানে তা উল্লেখ করা হলো- 'আল্লাহুম্মা ছুমতুলাকা ওয়া তাওয়াক্কালতু আলা রিজকিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন।' ৪. তারাবির নামাজ : এটি সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ, একজন রোজাদারকে রমজান মাসে এশার নামাজের পর বিতরের তিন রাকাত নামাজের আগে দশ সালামে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। তারাবিহর নামাজে পবিত্র কোরআনের খতম তারাবিহ পড়ার অশেষ সওয়াব রয়েছে। একা কিংবা জামাতের সঙ্গে সুরা তারাবিহও পড়া যেতে পারে।
রোজা যে যে কারণে ভঙ্গ হয় : যেমন-১. জ্ঞাতসারে পানাহার বা স্ত্রী সহবাস। ২. কেউ জোরপূর্বক কিছু খাইয়ে দিলে। ৩. নাকে বা কানের ভেতরে ওষুধ দিলে, ৪. অসুখের কারণে পেটের ভেতরে ওষুধ গেলে। ৫ মস্তকে কোনো ওষুধের তেজ গেলে। ৬. কোনো কিছু খেয়ে ফেললে। ৭. মুখভরে বমি করলে। ৮. সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে। ৯. দিনের বেলা কুলি করতে গিয়ে গলার মধ্যে পানি গেলে। ১০. নিয়ত ব্যতীত রোজা রেখে ইচ্ছা করে ভঙ্গ করলে। ১১. হুঁকা, বিড়ি, তামাক ইচ্ছাপূর্বক সেবন করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। এ ছাড়া রমজান মাসে যে যে কারণে রোজা ভঙ্গ করা যাবে (তবে পরে কাজা করতে হবে) : ১. মুসাফির অবস্থায়। ২. রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা হলে (যদি একজন ইমানদার ডাক্তার পরামর্শ দেন)। ৩. গর্ভের সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে। ৪. ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে। ৫. শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে। ৬. কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে। ৭. মেয়েদের হায়েজ-নেফাসকালীন অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করা যায়।
রোজা অবস্থায় যে কারণে রোজা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকে না : ১. ভুলবশত পানাহার করলে। ২. স্বপ্নদোষ হলে। ৩. সুরমা ব্যবহার করলে। ৪. তেল ব্যবহার করলে। ৫. সামান্য বমি হলে। ৬. ধুলা-বালি এবং ধোঁয়া জাতীয় কিছু গলায় প্রবেশ করলে। ৭. কান থেকে ময়লা বের করলে। এ তো গেল রোজার সংক্ষিপ্ত কয়েকটি জরুরি মাসয়ালা। এর সঙ্গে রোজা কাজা ও কাফ্ফারা সম্পর্কে কিছু অবহিত হওয়া দরকার। কঠোর নিষেধ সত্ত্বেও বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে যা কাজা ও কাফ্ফারা উভয় আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি। কাফ্ফারা হলো : ১. একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। ২. রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন মিসকিন-ফকিরকে পেট ভরে দুই বেলা খানা দিতে হবে।
পরিশেষে বলতে হয়, একজন মুমিন রোজাদার যদি মিথ্যা, প্রতারণা, মোনাফেকি, অসাধুতা, দুর্নীতিপরায়ণতা, আত্মকলহ, বিবাদ-বিসম্বাদ_যাবতীয় গর্হিত কর্মকাণ্ড পরিহার করে আত্মসংযমী হন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, রোজার দিনে পবিত্র কোরআন পাঠ ও জিকির-আজকারের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করেন, তাহলে তিনি আল্লাহপাকের একজন খাঁটি আবেদ বান্দা হিসেবে গণ্য হবেন।
আমরা খাঁটিভাবে রোজা পালনের মধ্য দিয়ে যেন নিজেদের সংশোধন করে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপা লাভ করে আলোকিত হতে পারি-এই হোক আমাদের মহান পরম রাব্বুল আলামিনের কাছে কায়মনে ফরিয়াদ।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ সিরাত মিশন।

No comments

Powered by Blogger.