ঈদে বাড়ি ফেরা-অনেকেরই জুটছে না টিকিট-বিআরটিসির টিকিট বিক্রি শুরু

কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল মঙ্গলবার টিকিট বিক্রি শুরুর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই টিকিট কালোবাজারে চলে যাওয়ার অভিযোগ করেছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনালেও এখন 'টিকিট নেই, টিকিট নেই' রব।


গত ভোর থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ভিড় করে টিকিট প্রার্থী শত শত মানুষ। অনেকে রাত থেকেই স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকে। রাত থেকে অপেক্ষায় ছিলেন মোহসীনুল হক। গতকাল সকাল ১১টার দিকে তিনি জানান, সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ১৬ আগস্টের প্রথম শ্রেণীর তিনটি টিকিট কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট শেষ হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশীথার ১৬ আগস্টের একটি টিকিটও পাননি সরাবন বেগম। তাঁর প্রশ্ন, রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেও কেন টিকিট পাওয়া যাবে না? মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সব টিকিট বিক্রি শেষ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মতিনুল বারী বলেন, 'একজনকে টিকিট দিতেই অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। সেখানে মাত্র তিন ঘণ্টাতেই সব টিকেট বিক্রি করা সম্ভব নয়। টিকিট তাহলে যাচ্ছে কোথায়?'
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৪ আগস্ট থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের আন্তনগর ট্রেনে প্রতিদিনের আসন সংখ্যা ১২ হাজার ৯৪৯টি। এর মধ্যে এসএমএস ও ই-টিকেটিংয়ের জন্য তিন হাজার ২৬৪টি, ভিআইপি কোটায় ৬৫৫টি, স্টাফদের জন্য ৬৫৫টি ও রেলওয়ে কোটায় ৬৪২টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সংরক্ষিত আসন বাদ দিলে উন্মুক্ত কাউন্টারের জন্য দিনপ্রতি অবশিষ্ট থাকে মাত্র সাত হাজার ৭৩৩টি আসন। কিন্তু এই আসনের বিপরীতে চার থেকে পাঁচগুন টিকিট প্রার্থী প্রতিদিন স্টেশনে আসছে। এর বিরাট অংশকেই ফিরতে হচ্ছে শূন্য হাতে।
যাত্রীদের অনেকে অভিযোগ করছে, ইন্টারনেটেও টিকিট মিলছে না। গতকাল সকালে স্টেশনে আসা মোবারক আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত সোমবার ইন্টারনেটে ঢুকে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা শ্রেণীর কোনো টিকিট পাইনি।' পাশেই দাঁড়ানো বারিধারার বাসিন্দা ইকবাল পারভেজ চৌধুরী বলেন, 'পর পর দুই নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢুকে খুলনা যাওয়ার সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিকিট পেতে পিন নম্বর নিতে পারিনি। আমাদের ধারণা এসব টিকিট কালোবাজারে চলে গেছে।' গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে চট্টগ্রাম যাওয়ার ১৬ আগস্টের টিকিট স্থানীয় দালাল মনসুর আলীর কাছ থেকে অবশ্য কিনতে পারেন মোবারক আলী। তিনি জানান, টিকিটের দামের চেয়ে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে মনসুরকে।
জানা গেছে, আজ বুধবার কমলাপুর রেলস্টেশনে বিক্রি হবে ১৭ আগস্টের টিকিট। ১৮ আগস্ট যাত্রার টিকিট ৯ আগস্ট বিক্রি করা হবে। তবে ১৮ আগস্ট ঈদের চাঁদ দেখা না গেলে সন্ধ্যার পর থেকে ১৯ আগস্টের টিকিট বিক্রি করা হবে।
এদিকে গতকাল ভোর থেকেই টিকিট প্রত্যাশী মানুষের ভিড় ছিল গাবতলীতে। ঈদের বিশেষ টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে টিকিট না পেয়ে শত শত যাত্রীকে হতাশ হয়ে ফিরতে দেখা গেছে। ১৪ আগস্ট থেকে অনির্ধারিত ছুটি শুরু হওয়ায় ওই দিনের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকলেও গতকাল ১৪ ও ১৫ আগস্টের টিকিট কিনতে পারেনি কেউই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাজুল ইসলাম জানান, নাটোরের ভাড়া ৩৫০ টাকা হলেও হানিফ পরিবহন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে ৫২০ টাকা। জানা গেছে, গাবতলী থেকে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া বাসে পদ্মা ও যমুনা পার হওয়ার পর যে গন্তব্যেই নামুক না কেন টিকিটের দাম নেওয়া হচ্ছে রুটের শেষ গন্তব্যের।
বিআরটিসির সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাদের ঈদসেবা সার্ভিস বহরে ৭৮০টি বাস পরিচালিত হবে। যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ১৫ আগস্ট থেকে ঈদ-পরবর্তী তিন দিন এ সার্ভিস চালু থাকবে। গতকাল থেকে মতিঝিল, জোয়ারসাহারা, কল্যাণপুর, মিরপুর ১২ নম্বর দ্বিতল বাস ডিপো ও ফুলবাড়িয়া কাউন্টারে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিআরটিসি। বিআরটিসি মিরপুর ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. মনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আর বাসসেবা শুরু হবে ১৫ আগস্ট থেকে।

No comments

Powered by Blogger.