আমিনুল হত্যা মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়ার দাবি by সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মাহবুব হাসান মেহেদী

শ্রমিক নেতা বাবা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার সিআইডির হাতে দেওয়ার দাবি জানালেন মেয়ে সায়েমা আখতার আঁখি। একই সঙ্গে ডিবির তদন্তের অগ্রগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
কমিটি ফর জাস্টিস ফর আমিনুল ইসলাম নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। আমিনুলের সহকর্মীদের সমন্বয়ে সংগঠনটি গঠন করা হয়েছে।

চার মাসে কয়েক দফা তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি উল্লেখ করে আ‍ঁখি বলেন, “আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার দেখতে চাই। আমার বাবাকে আর ফেরত পাবো না। তবে হত্যাকারীদের বিচার হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারব।”

আয়োজক সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর একেএম নাসিম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আমরা চরম হতাশ। তদন্ত স্থবির হয়ে আছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা আশুলিয়া এলাকায় থাকে। আর মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে টাঙ্গাইল ডিবিকে।”

এতে মামলার তদন্ত কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে উল্লেখ করে একেএম নাসিম বলেন তিনি বলেন, “সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই মামলাটির তদন্তভার সিআইডির কাছে দেওয়া প্রয়োজন।”

“এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে এনএসআইর এক কর্মকর্তা, শান্তা গ্রুপের নাম শোনা যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “সে সময়ে শান্তা গ্রুপের চারটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেটাও হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে বলে আলোচিত হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী যে কোনো কর্মকাণ্ডে আমিনুল প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতেন। ওই এলাকার শ্রমিকের পক্ষের সব মামলা আমিনুল পরিচালনা করতেন। সে কারণেও মালিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিলো না।” আমিনুল মারা যাওয়ার সময়েও তার নামে মালিকদের দায়ের করা ৮টি মামলা ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আমিনুলের ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী কষ্টে দিনাতিপাত করছেন উল্লেখ করে তাদের সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির ( বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার, শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম নিখোঁজ হন। পরদিন তার লাশ পাওয়া যায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানা এলাকায়।  প্রথমে মামলাটি ঘাটাইল থানায় থাকলে পরে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।

শান্তা গ্রুপের রোষানলে নিহত আমিনুল! by সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মাহবুব হাসান মেহেদী

আলোচিত শ্রমিকনেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ডে ঢাকা ইপিজেড এলাকায় পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান শান্তা গ্রুপের ওপর সন্দেহ বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যস্ততা করতে গিয়ে তাদের রোষানলে পড়েই আমিনুল খুন হয়ে থাকতে পারেন-- এমন আশঙ্কা আমিনুলের পরিবার, সহকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
গোয়েন্দা পুলিশও জানিয়েছে, শান্তা গ্রুপের অসন্তোষকে ঘিরেই এই হত্যাকাণ্ড--- এমন ক্লু ধরে মামলার তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে।

শান্তা গ্রুপের কর্ণধার খন্দকার মনিরউদ্দিন আমিনুলকে দেখে নেওয়ার প্রকাশ্যে হুমকিও দিয়েছিলেন অনেকবার। সর্বশেষ দেওয়া হুমকির পরই আমিনুলের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ায় এই গ্রুপ এবং এর মালিকদের প্রতি সন্দেহের তীর সবার।

উল্লেখ্য, আমিনুল হত্যাকাণ্ড দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের খাত হয়ে ওঠা তৈরি-পোশাক-শিল্পকে বড় ধরনের সঙ্কটে ফেলেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে অন্যতম প্রধান আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে বিষয়টিতে তাদের উদ্বেগের কথা স্পষ্ট করেই সরকারকে জানিয়ে গেছেন।

স্থানীয়রা ও আমিনুলের একাধিক সহকর্মী বাংলানিউজকে জানান, গত ২২ মার্চ এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলা দেখা নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। শান্তা গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকরা খেলা দেখার জন্য ওই দিন কারখানা বন্ধের দাবি করলে কর্তৃপক্ষ তাতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে সে সময় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়।

আমিনুলের সহকর্মী ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কর্মী লাবনী আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ৪ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়ার আগে আমিনুল ওই দিন বিকেলে তাদের অফিসে বসেই ওই কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সে সময় আমিনুল শ্রমিকদের সঙ্গে বসেই ইপিজেডের এক কর্মকর্তার সঙ্গে সেল ফোনে কথা বলেন। পরে শ্রমিকদের বলেন, আগামীকাল কারখানা খুলে দিতে পারে। কোনো সমস্যা করবে না। কারখানা চলুক আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা হবে।

ঘটনার বর্ণনায় লাবনী আক্তার আরও জানান, শান্তা গ্রুপের শ্রমিকরা চলে গেলে কুইন্স সাউথ নামে অপর একটি কারখানার শ্রমিক মোস্তাফিজ বোরকা পরা একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলেন, ‘ও পালিয়ে এসেছে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোস্তাফিজের অনুরোধের কারণেই জিরানী বাজার কাজী অফিসে গিয়ে বিয়েতে সহায়তা করতে রাজি হন আমিনুল। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা দু’টি রিক্সায় করে রওয়ানা হন। এরপরই নিখোঁজ হন আমিনুল। 

এরপর যখন লাশ উদ্ধার হল তারপর থেকে মোস্তাফিজকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে, বলেন লাবনী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শান্তা গ্রুপের একাধিক কর্মী জানান, কারখানার মধ্যম পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার উস্কাকানিতেই ওই শ্রমিক অসন্তোষ হয়। শ্রীলংকা, ভারত ও মালয়েশিয়ার যৌথ মালিকানার ওই প্রতিষ্ঠানটি মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছিলো। এ কারণে কিছু কর্মকর্তা তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করেছিলেন। এক্ষেত্রে আমিনুল তাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।

শিল্প পুলিশের এসপি গোলাম রউফ খান বাংলানিউজকে জানান, শান্তা গ্রুপের ওই প্রতিষ্ঠানটির ঘটনার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। যেদিন ওই গার্মেন্টসে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে, সেদিনই আমিনুল নিখোঁজ হন।

এদিকে মামলার তদন্তের দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথম দিকে তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ডিবি’র এসআই দুলাল। এখন তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। মামলাটিও প্রথমে ঘাটাইল থানা পুলিশের কাছে থাকলেও ১৮ এপ্রিল টাঙ্গাইল ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।

বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন যথেষ্ট দায়িত্বের সঙ্গেই বাংলানিউজকে বললেন, ‘মোস্তাফিজকে ধরা গেলেই খুনের রহস্য উদ্ধার হবে।’

দায়িত্ব পাওয়ার পর মোস্তাফিজকে ধরার জন্য ৭দিন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

গত ৪ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়ার পরদিন লাশ উদ্ধার হয় আমিনুলের। কিন্তু এখন পযর্ন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এতে চরমভাবে হতাশ পরিবারের লোকজন। তারা বলছেন, বিচারের আশা তারা ছেড়ে দিয়েছেন।

নিহত আমিনুলের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ফাহিমার দাবি, যে বা যারাই আমিনুলকে হত্যা করুক না কেন, অবশ্যই পুলিশ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

মামলার সবর্শেষ অবস্থা জানতে চাইলে ফাহিমা জানান অনেক ঘুরে হতাশ হয়েছি। এখন আর খোঁজ নেই না।পুলিশও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে না। 

এদিকে, আমিনুলের পরিবারের সন্দেহের তালিকায় একটি গোয়েন্দা সংস্থাও রয়েছে। ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি ২০১০ সালে ১৮ জুন বিজয়নগর থেকে আমিনুলকে তুলে তাদের অফিসে নিয়ে গিয়েছিলো।

সেবারও আমিনুলের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল থেঁতলে দেওয়া হয়েছিলো ও ডান কানে আঘাত করা হয়েছিল। পরে আমিনুলকে ময়মনসিংহগামী একটি বাসে তুলে দেওয়া হয়। ওই বাস থেকে নেমে কৌশলে পালিয়ে আসেন আমিনুল।

আমিনুলের লাশ উদ্ধারের পর তার শরীরে যেসব স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে তার সঙ্গে ২০১০ সালের ১৮ জুনের নির্যাতনের সাদৃশ্য রয়েছে। বাড়তি আঘাত ছিলো তার হাঁটুর নিচে ফুটো। এ থেকেই বুঝা যায়, যারা আগে আমিনুলকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো তারাই পরের বার আমিনুলকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে থাকতে পারে, এমনটাই দাবি আমিনুলের স্ত্রীর।

প্রথম দিকে দায়িত্ব পাওয়া তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দুলাল বাংলানিউজকে পা থেতলে দেওয়া ও হাটুর নিচে ফুটো থাকার কথা নিশ্চিত করেন।

আমিনুলের সহকর্মীদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন তাদেরই দীর্ঘদিনের পরিচিত মোস্তাফিজ। এই মোস্তাফিজও গোয়েন্দা সংস্থার লোক ছিলেন বলেও দাবি তাদের।  

সন্দেহের তালিকায় থাকা এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে মোস্তাফিজের প্রায় ১০০ মিনিটের মতো ফোনে কথা হয়েছে মর্মে তাদের কাছে নিশ্চিত তথ্য রয়েছে বলেও দাবি তাদের। আমিনুলের সহকর্মী ফাহিমা জানান, গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মকর্তা তাকে প্রায়ই হুমকি-ধমকি দিতেন। 

ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কি নিয়ে আমিনুলের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল সে বিষয়ে আমিনুলের সহকর্মীরা জানান, ২০১০ সালে কনভয় গ্রুপের জামগড়া ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক আসন্তোষ দেখা দেয়। তখন আমিনুল আলোচনায় বসার উদ্যোগ নিলে ওই কর্মকর্তা তাকে নাক না গলানোর জন্য হুমকি দেন। এরপরেও রাজধানীর বিজয়নগরে বৈঠকে বসার জন্য শ্রম পরিচালকের অফিসে যান আমিনুল। ওইদিন অফিসের গেট থেকেই আমিনুলকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা সংস্থাটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমিনুলের এক সহকর্মী বাংলানিউজকে জানান, ডিবি পুলিশ ৪ জন হত্যাকারীকে চিহ্নিত করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু তাদেরকে ধরার মতো ক্ষমতা ডিবির নেই।

পলাতক মোস্তাফিজ ওই গোয়েন্দা সংস্থাটির পেইড সোর্স ছিলেন এবং এখন তাদের আশ্রয়েই রয়েছেন বলে দাবি করেছেন আমিনুলের এক সহকর্মী। তবে ডিবি’র তদন্তকারী কর্মকর্তার দাবি, মোস্তাফিজকে তারাও খুঁজছেন। 

এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১ জুলাই মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাঞ্চল্যকর মনিটরিং সেলে নেওয়া হয়েছে।

 ডিবিতে স্থানান্তর হলেও মামলায় গতি নেই বলে দাবি করেছেন আমিনুলের মেয়ে সায়মা আক্তার আঁখি। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের আইজিপিসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ২ মে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ।এরপর আর কেউ সেখানে যাননি।

আঁখির দাবি, তারা আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

মোস্তাফিজ সম্পর্কিত আরও তথ্য

মোস্তাফিজ সম্পর্কে শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তিনি আগে শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও অনেক দিন ধরেই ইপিজেড এলাকার গোয়েন্দা পুলিশের চর (সোর্স) হিসেবে কাজ করেছেন। 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের অর্গানাইজার লাবনী বাংলানিউজকে জানান, তার চলাফেরা সন্দেহজনক ছিলো। প্রায় সময়েই তার তাদের অফিসে আসা-যাওয়া ছিলো।

লাবনী বলেন, “তাকে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, সারাদিন এখানে থাকেন, কাজ করেন কখন। তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তিনি নাকি রাতে ডিউটি করেন। কিন্তু তার চেহারায় রাতে ডিউটি করার কোনো ছাপ দেখা যেতো না।”
অন্য একটি সূত্র দাবি করেছে, আশুলিয়া-আব্দুলাহপুর রুটে মোস্তাফিজের একটি ম্যাক্সি চলাচল করে। 

বাংলানিউজের মাগুরা প্রতিনিধি রূপক আইচ খোঁজ নেন মোস্তাফিজের গ্রামের বাড়ির। জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া গ্রামের শমসের মল্লিকের ছেলে মোস্তাফিজ। সাংসারিক অনটনের কারণে এইচএসসিতে পড়ার সময়ে ঢাকায় চলে আসেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, দেড় বছর আগে তিনি কাউকে না জানিয়ে কুষ্টিয়ায় বিয়ে করেন। কিন্তু কখনও স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে নেননি। সবর্শেষ মোস্তাফিজ আড়াই মাস আগে বাড়িতে গিয়েছিলেন।

মোস্তাফিজের মা রিমা আক্তার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ৬ ভাই ২ বোনের মধ্যে মোস্তাফিজ ষষ্ঠ। তার বাবা কৃষিকাজ করেন, দুই ভাই একটি বাহিনীতে কর্মরত। অন্য ৩ ভাই কৃষিকাজ করেন।

মামলা নিতে গরিমসি!

চলতি বছরের ৪এপ্রিল সন্ধায় নিখোঁজ হন শ্রমিক নেতা আমিনুল। পরদিন আশুলিয়া থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করতে গেলে জিডি নেওয়া হয়নি। ২৪ ঘণ্টা পরে আসতে বলা হয়। পরে ৬ এপ্রিল আশুলিয়া থানায় জিডি (নং-৩৫৭) করেন আমিনুলের স্ত্রী। 

তবে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম বদরুল আলম তা অস্বীকার করেছেন।


লাশ উদ্ধার-বৃত্তান্ত
৪এপ্রিল সন্ধ্যায় নিখোঁজ হন শ্রমিক নেতা আমিনুল। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার ব্রাহ্মণশাসন কলেজপাড়ায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পাশে ৫ এপ্রিল লাশ উদ্ধার করে অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করে পুলিশ।
৬ এপ্রিল দুপুরে পত্রিকায় ছবি দেখে আমিনুলকে চিহ্নিত করে পরিবারের লোকজন। পরে কোর্টে আবেদন করে লাশ তুলে কালিয়াকৈর উপজেলার হিজলহাটি গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে বাবার কবরের পাশে দ্বিতীয় দফা দাফন করা হয়।

লাশ উদ্ধারের পর ঘাটাইল থানার এসআই শাহীন মিয়ার দায়ের করা মামলাটিকে মূল এজাহার ধরে এবং আমিনুলের ভাই রফিকুলের দেওয়া অভিযোগকে সম্পূরক ধরে তদন্ত চলছে।

আমিনুলের কথা

শেরপুর জেলার সদর থানার বালাইচর গ্রামে মফিজ উদ্দিনের পুত্র আমিনুল ইসলাম এক যুগ আগে স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ফাহিমা, একমাত্র কন্যা সায়মা আক্তার আঁখি, দুই যমজ সন্তান আব্দুল হাই সাকিব ও আব্দুল কাইয়ুম রাকিবকে নিয়ে হিজলহাটি গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সঙ্গে আসেন তার ভাই রফিকুলের পরিবার ও বাবা। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই।

আমিনুল প্রথম জীবনে আশুলিয়ার চক্রবর্তী বেক্সিমকোতে শ্রমিক হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন। পরে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন ট্রেড ইউনিয়নের সংগঠক পদে যোগদান করেন।

আমিনুল ইসলাম সংগঠনটির সাভার ও আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সংগঠক হিসেবে নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ শর্শা ডেনিম নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন আমিনুল। কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করলে ২০০৬ সালে মামলা করেন। পরে হাইকোর্ট তাকে বেসিক দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় ও বরখাস্তকে বেআইনি উল্লেখ করে স্থগিতাদেশ দেন। 

তখন থেকে মালিকপক্ষ তাকে জানিয়ে দেয়, ``তোমার কাজ করার প্রয়োজন নেই। তুমি প্রতি মাসে বেসিক ২৪শ’ টাকা করে নিয়ে যেও।`` শেষ দিন পর্যন্ত ২৪শ’ করে বেতন পেতেন, বলে পারিবারিক সূত্রের দাবি।

শর্শা ডেনিমের মালিকপক্ষকেও সন্দেহের বাইরে রাখছেন না স্থানীয়রা। আমিনুলের সহকর্মী ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বাবুল আখতার বাংলানিউজকে জানান, কুইন্স গার্মেন্টসের মালিকপক্ষও এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.