শুভ জন্মাষ্টমী

আজ শুভ জন্মাষ্টমী। সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে আজকের এইদিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানবদেহ ধারণ করে এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। হিন্দু শাস্ত্রমতে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মানবরূপে মর্তে আবির্ভাব ঘটে।


ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় ৯০০-১০০ খ্রিস্টপূর্বে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় এই বিশ্ব ব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতাপূর্ণ ছিল। তাই মানবকল্যাণে ভগবানের আবির্ভাব ছিল অনিবার্য। সে কারণেই মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবানের আগমন ঘটে। মূলত দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালনের লক্ষ্য নিয়ে তিনি মর্তে আসেন।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় উল্লেখ আছে, যখনই পৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাবে ভক্ত ও সর্বসাধারণের জীবন দুর্বিষহ ও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দুরাচারীর অত্যাচার ও নিপীড়ন বৃদ্ধি পায় তখন ধর্ম সংস্থাপনের জন্য কৃপাবশত ঈশ্বর ‘অবতার’ রূপে এই নশ্বর পৃথিবীতে আগমন করে থাকেন। আর তখন তিনি ষড়গুণ ঐশ্বর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন পুণ্যাবতারূপে প্রকাশিত হন। তাঁর এই জন্মলীলাই জন্মাষ্টমী হিসেবে অভিহিত। কেননা তিনি অষ্টমী তিথিতে দৈবকীর গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন। কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধে এই পরমাত্মার মুখ নিঃসৃত বাণী পরবর্তী সময়ে শ্রীমদ্ভগবদগীতায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সেখানেই মানব জীবনের জীবনাচার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। গীতা পাঠ করে যে কেউ জানতে পারবেন কোন পথে মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ করা যায় এবং কোন পথে মানবকল্যাণ নিহিত। হাজার বছর ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই সত্যে বিশ্বাস করে আসছে। সকল ধর্মের মানুষ গভীর আগ্রহ ও ধৈর্যের সঙ্গে জীবনাচার উন্নতকরণের লক্ষ্যে শ্রীকৃষ্ণের প্রদর্শিত পথে পরিভ্রমণ করেছে। শ্রীকৃষ্ণ সুদূর অতীত অর্থাৎ পৌরাণিক যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, তিনি একজন ঐতিহাসিক মানুষ। সৃজনশীল প্রতিভার প্রস্ফুটন ঘটিয়ে তিনি বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য সাধারণ এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। পবিত্র গীতায় তিনি বৈদিক উপনিষদ পৌরাণিক যুগের সনাতন ধর্মবোধকে কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তির পথে ঈশ্বর আরাধনার পদ্ধতিতে এক সুসমন্বিত রূপ দেন। বর্তমানে দুঃখ, হানাহানি, সংঘর্ষ ও অন্যায়, অরাজকতা আমাদের পরাভূত করে ফেলেছে। বিশ্ব পরিস্থিতিতে মানুষে মানুষে বিভেদ ক্রমাগত বাড়ছে। দেশে দেশে শান্তি হরণকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এ জন্য ন্যায়, মানবতা ও সত্যের পক্ষে অবস্থান নিতে শ্রীকৃষ্ণের দেখানো পথেই অগ্রসর হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সকল অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করতে হবে। জন্মাষ্টমী উদযাপন সুন্দর, সার্থক হোক। সবাইকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা।

No comments

Powered by Blogger.