ক্ষমতাসীন দলের রক্তক্ষয়ী অন্তর্দ্বন্দ্ব- রূপগঞ্জে নৃশংস খুন

রাজধানীর অদূরে, রূপগঞ্জে, রাতে সন্ত্রাসীরা বাসায় ঢুকে মায়ের সামনে তাঁর প্রিয় সন্তানকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। এ নৃশংস ঘটনাটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এক খণ্ডচিত্র। একজন নাগরিকের শান্তিতে বসবাসের অধিকার দেশে কতটুকু আছে, সে প্রশ্নটি এখানে প্রধান হয়ে ওঠে।


আপাতদৃষ্টিতে এটি নিছক খুনোখুনির ব্যাপার মনে হলেও, এর পেছনের ঘটনাগুলো ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে। যিনি খুন হয়েছেন, তিনি ছাত্রলীগের কর্মী। সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে আহত হলেন তাঁর মা, তিনি পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। খুনের অভিযোগে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হলো, তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। খুনের অভিযোগে যাঁর বাসায় আগুন দেওয়া হলো, তিনি পৌরসভা ছাত্রলীগের নেতা। এসব ঘটনা যে ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের করুণ পরিণতি, তাতে সন্দেহ নেই। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা নিজেরাই যদি সশস্ত্র হানাহানিতে লিপ্ত হন, তাহলে নাগরিকদের শান্তি ও নিরাপত্তা দেবে কে?
রূপগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তা লুকোনো বিষয় নয়। কয়েক মাস আগে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির সভায় এলাকার সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হলে তার জের ধরে দুই পক্ষের সমর্থক নেতা-কর্মীরা সভাকক্ষের বাইরে জড়ো হয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও উপজেলা কমপ্লেক্সের ক্ষতিসাধন করেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্যই এই অন্তর্দ্বন্দ্ব। এর পেছনে অবৈধ টাকা অর্জন ও লুটপাটের স্বার্থ সরাসরি যুক্ত। জলাভূমিসমৃদ্ধ ওই উপজেলায় দুর্বৃত্তরা বালুর ব্যবসা, জমি ভরাট ও অন্যান্য অপকর্মে লিপ্ত। এসবের কারণেই এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্ব যদি আগে থেকেই সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে দলীয় পরিচয় নির্বিশেষে ব্যবস্থা নিত, তা হলে হয়তো আজ একজন টগবগে তরুণকে খুন হতে হতো না।
অভিযুক্ত খুনিদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। কিন্তু যদি দলীয় মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে হয়তো সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক প্রাণ ঝরবে। এ রকম বিয়োগান্ত ঘটনা যেন না ঘটে, সেটা দেখা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.