তিন ইন্ডাস্ট্রির ইন্দ্রনীল

পরিচালক হিসেবে সময়ের সেরা নায়কের কাছে নতুন ছবির প্রস্তাব নিয়ে গেল এক যুবক। ছবি পরিচালনায় যার নেই কোন অভিজ্ঞতা, নেই কোন প্রযোজক। তাঁর ওপর প্রস্তাবিত ছবিটি হবে সত্যজিৎ রায়ের নায়কের রিমেক। ভীষণ সাহসীই বলতে হবে।


কিছুটা আড়ষ্টতা, আর কিছুটা সাহস ভর করে নায়ককে বলে ফেলল কথাটা। সব শুনে নায়ক ভাবছিলেন যুবকটির সাহস নিয়ে...।
সাহসের সে পরীক্ষায় উতরে যায় যুবকটি। শুধু পর্দায় নয়, বাস্তবেও। ‘অটোগ্রাফ’ মুভিতে শুভ নামের যুবকটি পরিচালনায় লাভ করে সাফল্য, অর্জন করে নাম, খ্যাতি আর অর্থ। আর ‘শুভ’ চরিত্রে অভিনয় করা যুবকটিও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় চলচ্চিত্র জগতে। টালিউডের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নায়ক ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের গল্প এটি। ব্যবসায়িকভাবে দারুণ হিট হওয়া অটোগ্রাফে দুর্দান্ত অভিনয় করে চলে আসেন আলোচনায়। জনপ্রিয় একজন হিসেবে জায়গা করে নেন টালিউডে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যস্ত সুমন মৈত্র পরিচালিত ‘দশমী’ নিয়ে। কলকাতার পুজোর ব্যাকড্রপে বিদেশ ফেরত এক মেয়ের সঙ্গে গড়ে ওঠা প্রেম কাহিনী নিয়ে নির্মিত এ ছবিতে ইন্দ্রনীলের বিপরীতে অভিনয় করছেন রঞ্জিত তনয়া কোয়েল মল্লিক। ছবির একটা বিশেষ দিক হলো নিজ কণ্ঠে গান গেয়েছেন অভিনেতা অভিনেত্রী। আর মজার ব্যাপার হলো, এর আগে কখনই কলকাতার পুজো দেখা হয়নি ইন্দ্রনীলের। সেই ‘অদেখা’ এখন দেখছেন ‘দশমী’র কল্যাণে। টালিউডে তিন বছর ধরে নিয়মিত অভিনয় করলেও জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কলকাতার বাইরে। অসমে জন্ম নেয়া এই অভিনেতা বড় হয়েছেন মুম্বাইয়ে।
মুম্বাই মানেই বলিউড। ইন্দ্রনীলের মতো অভিনেতার গায়ে তার আঁচড় লাগবে এমনটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই, ফিল্ম ক্যারিয়ার-ই শুরু করেছেন বলিউড দিয়ে। ২০০৭ সালে মনোজ তিয়াগির ‘মুম্বাই সালসা’ দিয়ে অভিষেক, এর পরের বছর করেন বিক্রম ভাটের ‘১৯২০’। তবে ফিল্মে জাঁকিয়ে বসেন কলকাতায় এসে। অতনু ঘোষের ‘অংশুমানের ছবি’র মাধ্যমে ভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্রে কাজ করেন প্রথম। সময়টা তখন ২০০৯ সাল। চিত্রনাট্য, গল্প, নির্মাণ আর অভিনয়শৈলীর জন্য নন্দিত চলচ্চিত্রগুলোতে কাজ করে প্রশংসিত হন ইন্দ্রনীল। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তি পায় ‘অটোগ্রাফ’। ছবিটিতে অভিনয়ের সুবাদে ফিল্ম ক্যারিয়ার নতুনভাবে মোড় নেয়; দুরন্ত গতিতে এগোতে থাকে অভিনয়। যদিও ‘একদিন’, ‘উড়োচিঠি’, ‘আর একটি প্রেমের গল্প’র মতো ছবিগুলো তাকে এগিয়ে দেয় অনেকখানি। এর মধ্যে খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে স্বীকার করেন ‘আর একটি প্রেমের গল্প’কে। টালিউড সাফল্যের পর ফাঁকে আরও একবার ঢুঁ মেরে আসেন বলিউডে। সুজেয় ঘোষের ‘কাহানী’তে বিদ্যা বালানের স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করে প্রথমবারের মতো বলিউডেও পেয়ে যান বড় ধরনের সাফল্য। ‘কাহানী’ বক্স অফিসে হিট করে। এখন অবশ্য কলকাতাতেই বেশি ব্যস্ত। তবে নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে চান না ইন্দ্রনীল। আর তাই টালিউড থেকে বলিউডে যাচ্ছেন আবার পা ফেলছেন ঢালিউডেও। ছোট পর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা রেদওয়ান রনির প্রথম চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে কাজ করলেন। জয়া আহসানের বিপরীতে করা ছবিটির নাম ‘চোরাবালি’। এখনও মুক্তি না পাওয়া এই চলচ্চিত্রটির সাফল্যে ব্যাপারে আশাবাদী ইন্দ্রনীলসহ ছবি সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীরা। ‘চোরাবালি’ আর বর্তমানে শূটিং করতে থাকা ‘দশমী’ দুটোই নাচ-গান আর এ্যাকশনধর্মী কর্মাশিয়াল ছবি। কলকাতার প্রথমদিকের ছবিগুলোতে নিজের যে ইমেজ দাঁড় করিয়েছিলেন, সেই ইমেজ ভেঙ্গে পর্দায় হাজির হলেন নতুনভাবে। ভেঙ্গে গড়া আর গড়ে ভাঙ্গার মাঝে নিজেকে নতুন চরিত্রে খুঁজে ফিরছেন। ‘অটোগ্রাফ’ মুভির শুভর মতো চ্যালেঞ্জ নিতে সব সময়ই আগ্রহী। তার আরও একটি প্রমাণ দিলেন এবার। স্বয়ং উত্তম কুমার অভিনীত চরিত্রে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সম্প্রতি। পরিচালক অরিন্দম চক্রবর্তী তৈরি করতে যাচ্ছেন শরৎচন্দ্রের ‘চন্দ্রনাথ’র রিমেক। নামভূমিকায় ইন্দ্রনীলকে কাজ করার প্রস্তাব দিতেই লুফে নিলেন সেটা। উত্তম কুমার বনাম ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তÑ বিশাল এক চ্যালেঞ্জ-ই বটে! তবে এসব নিয়ে খুব বেশি ভাবাভাবিতে সময় কাটাতে রাজি নন। ব্যস্ত থাকছেন নিজের বর্তমান কাজ নিয়ে। সামনের সেপ্টেম্বরে শুরু করবেন ‘গ্লামার’ ছবির কাজ। নায়িকা হিসেবে থাকছেন বাংলাদেশের র‌্যাম্প মডেল রুহী। ছবিটির প্রচারণার কাজে আগামী ১৬ আগস্ট ঢাকা আসছেন ইন্দ্রনীল।
আনোয়ার রহমান

No comments

Powered by Blogger.