টে নি স- আক্ষেপ ঘুচবে ফেদেরারের?

উইম্বলডনের কোর্টেই অলিম্পিক টেনিস। সোনা জেতার সুবর্ণ সুযোগ উইম্বলডনের রাজা রজার ফেদেরারের। লিখেছেন খলিলুর রহমান প্রাপ্তির খাতায় কী নেই! সদ্যই উইম্বলডনের শিরোপা জিতে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডটা উন্নতি করেছেন ১৭-তে। উইম্বলডন জয়ের মধ্য দিয়ে আশৈশব-আদর্শ পিট সাম্প্রাসকে পেছনে ফেলে নিজের করে নিয়েছেন


সবচেয়ে বেশি সপ্তাহ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকার রেকর্ডটাও। অনানুষ্ঠানিকভাবে সর্বকালের সেরা টেনিস তারকার ‘খেতাব’টাও নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে অনেক আগেই। তবু তাঁর অর্জনের খাতার একটা পাতা ফাঁকা! ফেদেরারের মনে একটা খচখচানি। অলিম্পিকের সোনার পদক যে জেতা হয়নি তাঁর।
এমন নয় যে চেষ্টাই করেননি; সিডনি, এথেন্স, বেইজিং—তিন অলিম্পিকেই ছিলেন। লক্ষ্যও ছিল গলায় সোনার পদক ঝুলিয়ে দেশে ফেরা। কিন্তু তিনবারই ব্যর্থ। অবশ্য চার বছর আগে বেইজিংয়ে সোনার পদকে চুমু দেওয়ার সৌভাগ্য হলেও সেটি এসেছিল পুরুষ দ্বৈতে। এককের আক্ষেপ কি আর দ্বৈতের সাফল্যে মেটে! এবার এককের সোনাটি চাই-ই চাই—এমনই পণ করে সুইস তারকা পা রেখেছেন লন্ডনের মাটিতে। গতকাল থেকে শুরুও হয়ে গেছে কোর্টের লড়াই।
সিডনিতে ফেদেরারের অলিম্পিক অভিষেক হয়েছিল ১৮ বছর বয়সে। এখন তাঁর বয়স ৩০। আরেকটা অলিম্পিক আসতে আসতে তাঁর বয়স হবে ৩৪। ফেদেরার বুঝতে পারছেন, এটাই হয়তো তাঁর শেষ অলিম্পিক, সুযোগও। ‘কোনো সন্দেহ নেই, এটা আমার অন্যতম বড় লক্ষ্য। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো অলিম্পিকে খেলছি আমি। এই যুগে চারটি অলিম্পিক খেলার সুযোগ অন্য কারও হবে বলে মনে হয় না আমার। তাই আরেকটি অলিম্পিক খেলতে পেরে খুবই খুশি আমি।’ বললেন ফেদেরার।
খুশি হওয়ার কারণ আরও আছে সুইস তারকার। ১৯০৮ অলিম্পিকে লন্ডনের এই অল ইংল্যান্ড ক্লাবেই হয়েছিল টেনিস। ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এবার আবার লন্ডনের অল ইংল্যান্ড টেনিস ক্লাবের গ্রাস কোর্টে ফিরেছে অলিম্পিক টেনিস। যেখানে মাত্রই সপ্তাহ তিনেক আগে জিতেছেন গ্র্যান্ড স্লাম, যেটি তাঁর সপ্তম উইম্বলডন। এবারের অলিম্পিককেও মনে করা হচ্ছে আরেকটা ‘উইম্বলডন’। এটা জিতলে অলিম্পিক সোনা জেতার আজন্ম হাহাকার তো দূর হবেই, সঙ্গে ইতিহাসের তৃতীয় পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে পূর্ণ করবেন ‘ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্লাম’ (চারটি গ্র্যান্ড স্লামের সঙ্গে অলিম্পিক সোনা), যে কীর্তি আছে শুধু আন্দ্রে আগাসি ও রাফায়েল নাদালের।
বেইজিং অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন নাদাল। এবারও সোনার অন্যতম দাবিদার ছিলেন স্প্যানিশ তারকা। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর, চোটের কাছে হেরে শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। মহিলা এককেও নেই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এলেনা দেমেন্তিয়েভা। বেইজিংয়ে সোনা জেতা রুশ দেমেন্তিয়েভা অবসর নিয়েছেন আগেই। তবে নাদাল-দেমেন্তিয়েভারা না থাকলেও অলিম্পিকের আকর্ষণ ম্লান হচ্ছে না। পুরুষ এককে যেমন নাদাল ছাড়া র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশের বাকি সবাই আছেন। নোভাক জোকোভিচ, অ্যান্ডি মারেরাও সোনা জয়ের দাবি নিয়েই নামবেন কোর্টে। আশা জাগিয়েও উইম্বলডনে ব্রিটিশদের ৭৬ বছরের অপেক্ষা মুছে দিতে পারেননি মারে। ঘরের কোর্টে অলিম্পিক তাই তাঁর জন্য আরেকটি সুযোগ।
মহিলা এককে লড়াইটা আরও বেশি উন্মুক্ত। সদ্যই উইম্বলডন জেতা সেরেনা উইলিয়ামস অলিম্পিক সোনার বড় দাবিদার। সেরেনার বড় বোন ভেনাস, মারিয়া শারাপোভা, ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা, পেত্রা কেভিতোভাদের চোখেও সোনার স্বপ্ন।
ফেদেরারের মতো সেরেনারও আফসোস, এখনো অলিম্পিকে এককের সোনা জেতা হয়নি। অবশ্য বড় বোন ভেনাসকে নিয়ে দুবার (২০০০ ও ২০০৮ অলিম্পিক) সোনা জিতেছেন দ্বৈতে। ভেনাসের ঝুলিতে আছে এককের সোনাও, যেটা তিনি জিতেছিলেন সিডনি অলিম্পিকে। এবারও দ্বৈতে উইলিয়ামস বোনেরা ফেবারিট। সপ্তাহ তিনেক আগে উইম্বলডনে মহিলা এককের শিরোপার সঙ্গে সেরেনা বড় বোনকে নিয়ে জিতেছেন দ্বৈতের শিরোপাও। তবে এককে ভেনাসের সেই ফর্ম আর নেই। কিন্তু সেরেনা আছেন সেরা ছন্দে। সম্ভাবনার দরজা খোলা রাশিয়ার শারাপোভার জন্যও।

No comments

Powered by Blogger.