আজ শুভ জন্মাষ্টমী, বিকেলে শোভাযাত্রা

সনাতন ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি তথা শুভ জন্মাষ্টমী আজ। হিন্দু পুরাণ মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের


বেদনাহত কোলে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সনাতন ধর্মানুসারে, শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অর্থাৎ গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব।
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ জন্মাষ্টমী। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালন করা হবে। বিকেল ৩টায় রাজধানীতে বের হবে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা। এ উপলক্ষে আজ সরকারী ছুটি। রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজ থেকে হানাহানি দূর করে মানুষে-মানুষে অকৃত্রিম ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল শ্রীকৃষ্ণের ভাবধারা ও আদর্শ। তিনি ছিলেন মানব প্রেমের প্রতীক। তিনি মানবতার মুক্তির পথ খুঁজেছেন। সমাজে বিদ্যমান ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তা জাতীয় অগ্রগতিতে ব্যাপকতর করতে সকল সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, শ্রীকৃষ্ণ আজীবন শান্তি, মানবপ্রেম ও ন্যায়ের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন। তাঁর জীবনাচরণ ও কর্মের মধ্য দিয়ে সত্য ও সুন্দরের আরাধনা করেছেন। মানুষে-মানুষে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ যুগ-যুগ ধরে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। আমি আশা করি, শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা বাঙালীর হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে তাঁর ভক্তদের অনুপ্রাণিত করে’। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সকল নাগরিকের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন। শ্রীকৃষ্ণ অন্যায় দমন করে পৃথিবীতে ন্যায়, সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। জন্মাষ্টমীর বাণীতে তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তাদের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন।
তিনি বলেন, সকল ধর্মের মর্মবাণী শান্তি ও মানবকল্যাণ। যুগে যুগে ধর্ম প্রচারকরা সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন এমন একসময়ে যখন সমাজে রাজার নিষ্ঠুর অত্যাচার ও দুঃশাসন কায়েম ছিল। তিনি সেই অন্যায় দমন করে পৃথিবীতে ন্যায়, সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, এখানে সব ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে পারস্পরিক সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। আমরা সব ধর্মের মানুষের সমঅধিকারে বিশ্বাসী। হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, বৈষম্য, অন্যায়-অবিচার দূর করে সমাজকে শান্তিময় করে তুলতে যার যার অবস্থানে থেকে আমাদের সবাইকে অবদান রাখতে হবে।
এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বিবৃতিতে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কানুতোষ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথিতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন, সনাতন ছাত্র ও সমাজকল্যাণ সংঘসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ॥ দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। বুধবার সংগঠনের মহানগর সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্মান্ধরা ৩২টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। নিগৃহীত হয়েছেন মহিলারা। অত্যাচার হয়েছে শিশুদের ওপর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কেউ নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ায়নি। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী। উপস্থিত ছিলেন বাসুদেব ধর, কানুতোষ মজুমদার, মনীন্দ্র কুমার নাথ, মঞ্জু ধর, হীরেন্দ্র নাথ সমাজদার, তাপস কুমার পাল, ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার ও ড. অসীম সরকার।

No comments

Powered by Blogger.