সাহায্য সংস্থার হুঁশিয়ারি-দ্রুত পদক্ষেপ, নয় তো ভয়াবহ রূপ নেবে খাদ্য সংকট

সেনেগালের কেদাওগাও গ্রামের বাসিন্দা আসান আদামান। গেল বছর ফসল উৎপাদন ভালোই হয়েছিল। চলতি বছর তাতে ভাটা পড়েছে। উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। এ দিয়ে কিভাবে পরিবার ও সন্তানের ভরন-পোষণ করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আদামান।


ক্রমাগতভাবে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়া শুধু সেনেগালেরই নয় সারা বিশ্বের দৃশ্য। এর ফলে কোটি কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
দাতব্য সংস্থাগুলো বলেছে, খাদ্য ঘাটতির কারণে চলতি বছর অনাহারে ভুগবে চার কোটি ৩০ লাখ মানুষ। আর চরম অপুষ্টির মুখে পড়বে কয়েক লাখ শিশু। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। 'হাঙ্গার সামিট (খাদ্যনিরাপত্তা সম্মেলন)' শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে এ কথা জানাল তারা। আগামী ১২ আগস্ট থেকে লন্ডনে এ সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। সম্মেলনটি চলবে অলিম্পিক গেমস শেষ হওয়ার দিন পর্যন্ত।
লন্ডনভিত্তিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছর ধরে পশ্চিম আফ্রিকা, ইয়েমেন ও পূর্ব আফ্রিকায় তীব্র খাদ্য সংকট চলছে। যার ফলে ওই এলাকায় প্রায় ১০০ কোটি লোক অনাহারে রয়েছে। আর গত এক দশকের মধ্যে শিশুদের পুষ্টিহীনতায় ভোগার হারও রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসে এই প্রথম একসঙ্গে তিনটি এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকট চলছে। ইতিমধ্যে দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সোমালিয়াকে। দুর্ভিক্ষে এ অঞ্চলের এক লাখ মানুষ মারা গেছে এবং এক কোটি ২০ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে।
সংস্থাটির অভিযোগ, এই দুর্যোগের ব্যাপারে আগাম সতর্ক করার পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন অতিরিক্ত লাখ লাখ ডলার ব্যয় করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি, কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যাওয়া, উচ্চ জন্মহার, পরিবেশ ও মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়কেই খাদ্য সংকটের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি দুর্ভিক্ষপীড়িত সেনেগালের পশ্চিমাঞ্চলীয় সাহেল এলাকা ঘুরে এসেছেন হ্যারি পটার সিরিজের অভিনেত্রী বনি রাইট। ওই এলাকায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে রয়েছে। গত রবিবার তিনি বলেন, 'আমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছি সেখান থেকেই দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।' সাহায্য সংস্থাগুলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রতি আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া 'হাঙ্গার সামিট'-এ খাদ্য সংকট দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার আহবান জানিয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতা, এনজিও এবং ব্যবসায়িক নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অক্সফামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বারবারা স্টকিং এ সম্মেলনকে 'ইতিবাচক পদক্ষেপ' বলে অভিহিত করেছেন। তবে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, 'প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। যা হবে আমাদের ধারণার থেকেও অনেক ব্যাপক।' সূত্র : ইন্ডিপেনডেন্ট।

No comments

Powered by Blogger.