সড়ক-মহাসড়ক নির্বিঘ্ন করুন- ঈদে বাড়ি যাওয়া

সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভালো নয়। তবে গত ঈদুল ফিতরের আগে যে বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল, এখন ততটা নয়। তবু ঈদের ছুটিতে রাজধানী থেকে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রায় একই সঙ্গে বাড়ি যায়, তারা যে স্বচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্নে যেতে পারবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। সময় থাকতেই এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।


ঈদের ছুটিতে সব মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বেড়ে যায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দু-তিন গুণ বেশি। এ কারণে যানজটের আশঙ্কাও অনেক বেড়ে যায়। আর যখন বিপুলসংখ্যক যানবাহনের সারিতে কোনো একটি স্থানে যানজট বাধে, তখন পুরো মহাসড়কই স্থবির হয়ে পড়ে। অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণে, কখনোবা একটি বা দুটি যান পথে বিকল হয়ে পড়লে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনাকবলিত বা বিকল যানবাহনগুলোকে দ্রুত মহাসড়ক থেকে সরিয়ে না নিলে যানজট প্রলম্বিত হয়। কিন্তু সাধারণত এই কাজ দ্রুত করা হয় না; কখনো কখনো এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তাতে করে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে যায়।
এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা দরকার, যারা মহাসড়কের নিরাপত্তাই শুধু নয়, যান চলাচলে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে। পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধেও তাদের নজরদারি বাড়াতে হবে।
রাজধানীকে কেন্দ্র করে আন্তজেলা বিভিন্ন রুটে ঈদের সময় যাত্রীর ভিড় অনেক বেড়ে যায় বলে বাড়তি যানবাহন চলাচল শুরু করে। যেসব যানবাহন সচরাচর দূরপাল্লায় চলে না, সেগুলোও নেমে পড়ে মহাসড়কে। বাড়তি যানবাহনের প্রয়োজন পড়ে, এটা ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। তা ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষেরও তো ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার উপায় থাকতে হবে। সাভার ও এর আশপাশের পোশাকশিল্প এলাকায় নিম্ন আয়ের যে প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক বাস করেন, ঈদের ছুটিতে সায়শ্রী খরচে তাঁদের বাড়ি যাওয়ার একটা উপায় দেখা যায়: রাজধানীতে চলাচলকারী অনেক মিনিবাস তখন এই কাজে ব্যবহার করা হয়। সমস্যা হলো, এসব মিনিবাসের অধিকাংশেরই ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই, সেগুলো দক্ষ ও বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকেরাও চালান না। এই মিনিবাসগুলো মহাসড়কে বিকল হয়ে পড়লে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই ঈদের সময় এগুলো মহাসড়কে নামানোর আগে প্রয়োজনীয় মেরামত করে নেওয়া উচিত। এ দায়িত্ব এসব মিনিবাসের মালিকদের। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষেরও এ সময় লক্ষ রাখা উচিত, ফিটনেসবিহীন যানবাহন যেন মহাসড়কে চলতে না পারে। আরেকটি প্রস্তুতি নেওয়া খুব জরুরি: সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে বা কোনো যান বিকল হলে দ্রুততার সঙ্গে সেগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক রেকারের ব্যবস্থা করা।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মানুষের বাড়ি যাওয়া শুরু হতে এখনো প্রায় তিন সপ্তাহ সময় রয়েছে। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এটি যথেষ্ট সময়।

No comments

Powered by Blogger.