আই এ্যাম বন্ড... জেমস বন্ড

কোড ০০৭... হাতে প্রিয় অস্ত্র ওয়ালথার পিপিকে... লক্ষ্যভেদী শিকারি চোখ... অপেক্ষা শত্রু বধের... হ্যাঁ পাঠক আপনি ঠিকই ধরেছেন। দুর্ধর্ষ স্পাই জেমস বন্ডের কথাই বলা হচ্ছে । হালের সিনেমা পর্দার জেমস বন্ড চরিত্রে রূপদানকারী জনপ্রিয় এই অভিনেতার পুরো নাম ড্যানিয়েল রাফটন ক্রেইগ। জন্ম ১৯৬৮ সালের ২ মার্চ ইংল্যান্ডের চেস্টারে।


ধনী বাবা এবং অঙ্কন শিক্ষিকা মায়ের একমাত্র ছেলে তিনি। বেড়ে উঠেছেন লিভারপুলে। ড্যানিয়েল ক্রেইগের জেমস বন্ড হয়ে ওঠা কিন্তু একদিনেই সম্ভব হয়নি। খুব ছোটবেলাতেই তার অভিনয়ে হাতেখড়ি। মাত্র ছয় বছর বয়সে হিলবার হাই স্কুলের অভিনয় দিয়ে তার শুরু। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে তিনি পালিয়ে যান। চলে আসেন লন্ডন শহরে। এরপরের ঘটনা অন্য রকম। যোগ দেন ন্যাশনাল ইউথ থিয়েটারে। পাশাপাশি ভর্তি হন গিল্ডহিল স্কুল অব মিউজিক এ্যান্ড ড্রামায়। এ সময়ে মঞ্চের অভিনয় দিয়ে লন্ডনকে নিজের জাত চিনিয়ে দেন। তার অভিনীত ‘এঞ্জেলস অব আমেরিকা’ পুলিৎজার পুরস্কার পায়। এরপর সামনের দিকে এগিয়ে চলা । দি পাওয়ার অব ওয়ান ছবিতে তার প্রথম অভিনয় ১৯৯২ সালে। ওই বছরই বিয়ে করেন অভিনেত্রী ফিয়োনা লন্ডনকে। সেখানে এলা নামের একটি মেয়ের বাবা হন তিনি। কিন্তু সেটি বেশিদিন টেকেনি। দু’বছর পর তারা আলাদা হয়ে যান। মাঝখানে কিছু সময় একাকী সময় পার। ১৯৯৭ সালে এসে তার প্রেম শুরু হয় হেইকি মাকাটস্কের সঙ্গে। ২০০১ সালে তিনি অভিনয় করলেন এঞ্জেলিনা জলির লারা ক্রফট : টম্ব রাইডারে। ছবিটি হলিউডে ব্লকবাস্টার হিট করে। কিন্তু এ ছবিটিতে ড্যানিয়েলের অভিজ্ঞতা ছিল অন্যরকম। সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে ড্যানিয়েল বলেন, আমি এতটাই একঘেয়েমি বোধ করেছিলাম যে, এই সময়টাকে জীবনের ভয়ঙ্কর সময়গুলোর একটা বলে মনে হয়েছে। কিন্তু পরের বছরটি ছিল অন্যরকম। লিজেন্ডরি অভিনেতা পল নিউম্যান ও টম হ্যাংকস্ এবং জ্যুড লর সঙ্গে রোড টু প্রেডিশন ছবিতে ক্রেইগ অভিনয় করেন। পিপল ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আপনি যদি টম হ্যাংকসের সঙ্গে ডিনারে যান তবে নিজেকে আপনার পাগল বলে মনে হতে পারে। কারণ হ্যাংকস ডিনার টেবিলটাকে রান্নাঘর বানিয়ে ফেলতে পারে। যাই হোক ২০০৪ সালে এসে হেইকি মাকাটস্কের সঙ্গে ক্রেইগ সম্পর্কের ইতি টানেন। এ সময় তিনি চুটিয়ে প্রেম করেন ব্রিটিশ সুপার মডেল কেট মসের সঙ্গে। কিন্তু ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোর পীড়াপীড়িতে সেটি এক বছরের বেশি এগোয়নি। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে লেয়ার কেকে অভিনয় করতে গিয়ে সহঅভিনেত্রী সিয়েনা মিলারের সঙ্গে তিনি আবারও প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু এ সম্পর্কও বেশিদিন যায়নি। তার জীবনের একাকিত্ব ঘোচাতেই যেন ছবি প্রযোজক সাটসুকি মিশেল তার প্রেমে ক্রেইগের পাণি প্রার্থনা করেন। আবারও চুটিয়ে প্রেম। ঠিক এই সময়টাতে জেমস বন্ড ছবির প্রযোজক কোম্পানি তাদের এই ধারাবাহিক সিরিজটির পরবর্তী ছবির মূল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। লেয়ার কেকে ক্রেইগকে দেখে তাদের পছন্দ হয়ে যায়। এবং পিয়ার্স ব্রসনানের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হন। ২০০৬ সাল, ক্রেইগের জীবনের এক ঐতিহাসিক বছর। তার অভিনীত জেমস বন্ড সিরিজের ছবি ক্যাসিনো রয়্যাল মুক্তি পায়। ছবি ব্লকবাস্টার হিট। ছবিটি সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল বন্ড মুভিতে পরিণত হয়। রাতারাতি বনে যান মেগাস্টার এবং চুক্তিবদ্ধ হন পরবর্তী ছবি কোয়ান্টাম অব সোলাসে, যেটি মুক্তি পায় ২০০৮ সালে। আবারও হলিউড বক্স অফিসে ঝড় ওঠে।
আরেকটি হিট তার ক্যারিয়ারে যোগ হয়। এ ছবির আগে ২০০৭ সালে নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে তার ‘ইনভেশন’ ছবিটি মুক্তি পায়। এ ছবিতেও তিনি দর্শকদের অভিনয়শৈলী দিয়ে মুগ্ধ করেন। ২০০৫ সালে সেই যে সাটসুকি মিশেলের সঙ্গে ক্রেইগের প্রেমের শুরু হয় তার ইতি ঘটে ২০১০-এ এসে। এতদিনের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় ক্রেইগ কিছুটা মুষড়ে পড়েন। তিনি এবার আর প্রেম নয়, হার্টথ্রুব অভিনেত্রী র‌্যাচেল ওয়েজকে বিয়ে করে স্থায়ী সম্পর্কে থিতু হন। এ বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে লন্ডনের অনুষ্ঠিত বিশ্ব অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বন্ড ভূমিকায় আবির্ভূত হয়ে সবাইকে অবাক করে দেন। আর দর্শকরা অবাক হবেনই না কেন। তার সঙ্গে যে অভিনয় করেছিলেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এত কিছুর পরও নামী এই অভিনেতা কিন্তু খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। ক্রেইগের প্রিয় অভিনেতার তালিকায় আছেন বন্ড নায়ক শন কনোরি, যাকে তিনি তার আদর্শ হিসেবে মানেন। ভালবাসেন রাশিয়ান সালাড, ফ্রাইড মিট বল এবং ফ্রুট ইউগার্ট খেতে। পোশাক হিসেবে পছন্দ সবসময় টি-শার্ট ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট। প্রিয় খেলা ফুটবল। আর লিভারপুল ক্লাবের খেলা হলে তো কথাই নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও ছুটে চলে যান খেলা দেখতে। যাই হোক দর্শকরা নিশ্চয় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন প্রিয় এই অভিনেতার পরবর্তী ছবির জন্য । কেননা তার অভিনীত বন্ড সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘স্কাই ফল’ এ বছরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
নাজিম খালেদ

No comments

Powered by Blogger.