বোরো ধান :কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায় by কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম

এ বছর এখনও পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে ঝলকের মতো হাইব্রিড ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কথা বাদ দিলে কৃষকরা বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে সরকার থেকে শুরু করে শহুরে ভোক্তাদের জন্য এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার নিরিখে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক কথা।


কিন্তু যে কৃষক এই কৃতিত্বের প্রকৃত দাবিদার তারা কি সত্যিই আশায় বুক বাঁধতে পারবে? তারা কি পাবে তাদের দিবারাত্রি ঘাম ঝরানো শ্রমে উৎপাদিত এই ধানের ন্যায্যমূল্য? বর্তমানে বাজারে ধানের মূল্যের অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। প্রতিনিয়ত কমছে ধানের দাম, যা দেখে কৃষকদের মাঝে আশঙ্কা ও হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমান সরকার উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষকদের বিভিন্নভাবে যে প্রণোদনা দিয়েছে ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তা কি অব্যাহত রাখবে? যদি আশা করা যায় যে, কৃষকবান্ধব হিসেবে পরিচিতি লাভ করা বর্তমান সরকার সেটা করতে শতভাগ আন্তরিক; কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার সেটা কীভাবে করবে? এক্ষেত্রে সরকারের একমাত্র করণীয় যেটা আছে তা হলো সরকারকে একজন বড় ক্রেতা হিসেবে বাজারে নামতে হবে এবং ন্যায্যমূল্যে প্রচুর পরিমাণ ধান ক্রয় করতে হবে এবং তা করতে হবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে, যদিও সরকার তা করতে বিগত দিনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এবার হতাশার আরও কারণ হলো, যতদূর জানা যায় সরকারের গুদামগুলো পুরনো চালে অনেকাংশেই পূর্ণ। তাছাড়া সরকার ভিয়েতনাম থেকে যে চাল আমদানি করছে তা এখনও গুদামে ওঠেনি। এমতাবস্থায় সরকার এ মৌসুমে কী পরিমাণ ধান ক্রয় করতে পারবে বা করবে তা দেখার বিষয়।
আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকার কর্তৃক ঘোষিত ধানের ক্রয়মূল্য। বিগত দিনে দেখা গেছে, সরকার ধানের যে ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কারণ কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তা অনেক ক্ষেত্রেই সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। গত বোরো মৌসুমে দেখা গেছে, সরকার ধানের যে মূল্য নির্ধারণ করেছিল বাজারে তার চেয়ে বেশি মূল্যে ধান ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। আবার তার আগের বছর দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে কৃষককে ধান বিক্রি করতে হয়েছে। কাজেই সরকার নির্ধারিত মূল্য যদিও খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না, তবুও তা সত্যিকার উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া অত্যাবশ্যক। এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক ব্যবহৃত ফরমেট ব্যবহার করে ঝিনাইদহ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে, বোরো ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে মণপ্রতি গড়ে ৮২০ টাকা (কৃষকের নিজস্ব পারিবারিক শ্রম ও জমির ভাড়াসহ) চলতি মূলধনের সুদ বিবেচনায় না নিয়েই। সে হিসেবে অন্তত ২০ শতাংশ লাভ ধরে ধানের মূল্য হওয়া উচিত মণপ্রতি গড়ে ৯৮৪ টাকা। অথচ ঝিনাইদহ এলাকায় যেখানে কিছুদিন আগেও বাজারে ধানের মূল্য ছিল মণপ্রতি ৯৫০-১০০০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা ক্রমেই কমতির দিকে এবং এখনই তা ৮৫০-৯০০ টাকায় নেমে এসেছে। সব কৃষকের ধান যখন বাজারে উঠবে তখন এ মূল্য কততে এসে দাঁড়াবে তা নিয়ে কৃষকরা অত্যন্ত আশঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। এদিকে শোনা যাচ্ছে যে, সরকার অতিদ্রুত বোরো ধানের ক্রয়মূল্য ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারের কাছে প্রত্যাশা, সরকার নির্ধারিত মূল্য যাতে মণপ্রতি ৯৫০ টাকার কম না হয়।
হ মাগুরা রোড, ঝিনাইদহ

No comments

Powered by Blogger.