নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মিশন by রুহিনা তাসকিন

কেক কেটে— মোমবাতিতে ফুঁ দিয়ে নয়, ৩ জুলাই ৫০তম জন্মদিনটা একাই পালন করতে হলো টম ক্রুজকে। বরং এখন তাঁকে ভাবতে হচ্ছে, একমাত্র মেয়ে সুরির দেখাশোনার অধিকার কীভাবে পাওয়া যায়। টমক্যাটের পাঁচ বছরের বিয়ের ইতি ঘটল কয়েক দিন আগে।


কেটি হোমস বিয়ে বিচ্ছেদের সঙ্গে চেয়েছেন একমাত্র মেয়ে সুরির দেখাশোনার অধিকারও। কিন্তু টম নাকি বুঝতেই পারেননি, কেটি এমন পা ফেলবেন। নিজের তো বটেই, সন্তানের জীবন থেকেও তাঁকে দূর করে দিতে চাইবেন। টমের ধর্মবিশ্বাস নাকি ফাটল ধরিয়েছে দুজনের মধ্যে। ক্যাথলিক কেটি আর মানতে পারছিলেন না টমের সাইন্টোলজির বিশ্বাস। সুরির দেখাশোনা নিয়েও ছিল দ্বন্দ্ব। বিশেষ করে টমের দত্তক নেওয়া দুই সন্তান ইসাবেলা ও কনরের চালচলন দেখে কেটি আর ভরসা রাখতে পারেননি টমের বিবেচনাবোধের ওপর। আগের স্ত্রী নিকোল কিডম্যানের সঙ্গেও টমের লেগেছিল এই নিয়ে।
বিয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটা কেটির হলেও সবাই তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ডসনস ক্রিক টিভি সিরিয়ালের জোয়ি পটারকে যে আর চেনাই যাচ্ছিল না বিয়ের পর থেকে। সাজসজ্জা, পোশাক তো বটেই, ক্যাথলিজম থেকে সাইন্টোলজি ধর্মেও দীক্ষিত হতে হয়েছিল কেটি হোমসকে। তাঁদের প্রেম আর বিয়েটা হয়েছিল ঠিক হলিউডি সিনেমার কায়দাতেই। অথচ রূপকথার ইতি ঘটল পাঁচ বছরেই।
ছোটবেলা থেকে মেয়েটি স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে টম ক্রুজকেই বিয়ে করবেন। হলিউডে পা রাখার পর, এমনকি এক সাক্ষাৎকারে বলেও ফেলেছিলেন। এর কয়েক মাস পরেই ২০০৫ সালে একসঙ্গে দেখা যায় টম ক্রুজ ও কেটি হোমসকে।
প্রথম তাঁরা দেখা করেন টমের নিজস্ব বিমানে—এক ডিনারে। ১৬ বছরের বয়সের ব্যবধানটা বাধা হয়নি মোটেও। আইফেল টাওয়ারের নিচে বিশাল এক হীরার আংটি হাতে ছোটবেলার স্বপ্নের মানুষটি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলে আর কী করতে পারে ২৭ বছরের মেয়েটি? পরের বছরই নভেম্বরে বিয়ে ইতালির এক প্রাসাদে। জর্জিও আরমানির নকশা করা পোশাক পরে স্বপ্নের মতোই এক বিয়ের অনুষ্ঠান। তাতে উপস্থিত ছিলেন উইল স্মিথ-জাডা পিংকেট স্মিথ, ডেভিড ও ভিক্টোরিয়া বেকহাম, জেনিফার লোপেজ-মার্ক অ্যান্থনি প্রমুখ তারকা। বিয়ের অনুষ্ঠানের কয়েক মাস আগে জন্ম নেয় তাঁদের একমাত্র সন্তান সুরি।
কেটির মা-বাবা তাঁর ধর্ম পরিবর্তন নিয়ে সে সময় খোলাখুলি অসন্তোষ জানিয়েছিলেন। টম চাইছিলেন, এমনকি কেটি তাঁর নাম পরিবর্তন করে কেটি ক্রুজ রাখুক। বোধহয় কেটির জীবন সম্পূর্ণ দখল চাইছিলেন টম। বিয়ের অনুষ্ঠানের সব খুঁটিনাটি তো বটেই, কেটির পোশাকটা কেমন হবে, তা-ও বলে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অনুরোধেই খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে হয়েছিল কেটিকে।
বিয়ের পরপর কেটির ফ্যাশনেও আসে আমূল পরিবর্তন। বন্ধু ভিক্টোরিয়া বেকহামের পরামর্শে লম্বা চুলগুলো কেটে ববকাট করে ফেলেন তিনি। আর সুরি একটু বড় হওয়ার পর তো তার সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় তুলনা। তিন বছর বয়সেই সুরিকে দেখা যায় হিলস জুতা পরতে—লিপস্টিক আর নেইল আর্ট তো আছেই। প্রায় চার মিলিয়ন ডলারের পোশাক আর অনুষঙ্গ আছে সুরির। আর এসবই পছন্দ হয়নি কেটির। সায়েন্টোলজির বিশ্বাস অনুযায়ী, শিশুদের ঠিক বড়দের মতোই পূর্ণাঙ্গ একজন মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। তার মতামতের সমান মূল্য দিতে হবে। টম সেভাবেই চলছিলেন। আর কেটি চাইছিলেন, সুরি আর দশটা শিশুর মতো আদর আর শাসনে বেড়ে উঠুক, স্কুলে যাক। সুরিকে সায়েন্টোলজি থেকে সরিয়ে আনার জন্যই নাকি কেটির এই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।
পঞ্চাশে পা রেখেও টম ক্রুজের ক্যারিয়ার মোড় নিচ্ছে নতুন দিকে। অভিনয়ে তো আছেনই, প্রয়োজক হিসেবেও টম পেয়েছেন বিশাল সাফল্য। মিশন ইমপসিবল সিরিজের আকাশছোঁয়া সাফল্যই এর প্রমাণ। ওদিকে কেটি হোমসের অভিনয়জীবন বিয়ের পর রীতিমতো বাক্সবন্দী। দ্য ডার্ক নাইট-এ থাকলেও এর সিক্যুয়েল ছবি ব্যাটম্যান বিগিনস-এ আর দেখা যায়নি তাঁকে। এ বড় অভিনেতা বা প্রযোজকের স্ত্রী হয়েও কেটি পাননি বিশেষ কোনো সুবিধা। হয়তো টমই চাননি।
কেটি এখন চাইছেন, অভিনয়ে নতুনভাবে ফিরে আসতে। জীবন নতুন করে সাজাতে। কিন্তু পুরোনো জীবনকে পেছনে ফেলতে চাইলেও তাঁর সুযোগ-সুবিধা থাকবেই। প্রতিবছর তিন মিলিয়ন ডলার আর ক্যালিফোর্নিয়ায় বিশাল এক বাড়ি এমনিতে টমের কাছ থেকে পাবেন তিনি। সুরির ভার পেলে পাবেন তার খরচও।

No comments

Powered by Blogger.