এক মাসের মধ্যে ফেরত না দিলে ব্যবস্থা-আইডিয়াল, ভিকারুননিসা ও মনিপুর অতিরিক্ত নয় কোটি টাকা নিয়েছে by মোশতাক আহমেদ

রাজধানীর তিনটি নামকরা স্কুল ভর্তির সময় অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত নয় কোটি ৩১ লাখ ২৮ হাজার ১০০ টাকা আদায় করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত একটি কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদনে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।


শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী এক মাসের মধ্যে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) দেওয়া এক চিঠিতে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয় বলেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালা-২০১১-এর ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। উল্লেখ্য, ১০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ভর্তির ফরম এবং ভর্তির ফি বাবদ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না, করলে সরকার এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
অতিরিক্ত টাকা নেওয়া তিনটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মিরপুরের মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ।
মনিপুর স্কুলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ১০০ টাকা। এই বিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসসহ কয়েকটি শাখায় তিন হাজার ৫৪ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিন কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৯০০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়। বিদ্যালয়টি মূল ক্যাম্পাসসহ এর কয়েকটি শাখায় তিন হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এই বিদ্যালয়ের মুগদা শাখা অনুদান নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
ভিকারুননিসা স্কুলে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ১০০ টাকা।
গতকাল মাউশিকে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত টাকা ফেরত বা সমন্বয়ের জন্য এক মাসের সময় দিয়ে নোটিশ প্রদান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক নোমান উর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত বিষয় প্রতিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবশ্যই আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়ের ভর্তিতে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত বা সমন্বয় করার কথা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে এই আহ্বান জানালেও সিদ্ধান্তের পাঁচ মাসের বেশি সময় পরও তাতে কেউ সাড়া দেয়নি। এ জন্য মন্ত্রণালয়ও এ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
জানতে চাইলে আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, নোটিশ পেলে পরিচালনা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, পরিচালনা কমিটিই করণীয় ঠিক করবে। উল্লেখ্য, এই কমিটির প্রধান হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনও বলেন, পরিচালনা কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। উল্লেখ্য, পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সরকারদলীয় স্থানীয় সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, মামলা থাকায় প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পরিচালনা কমিটি নেই। এ জন্য নোটিশ পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কাছে সময় চাওয়া হবে। উল্লেখ্য, এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন ঢাকার জেলা প্রশাসক মহিবুল হক।
অন্যান্য বিদ্যালয়ের অবস্থা: সরেজমিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএএফ শাহীন কলেজে মোট ৭৮ হাজার ৬০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হলেও তা মাসিক বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজও সমন্বয় করেছে।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে ২৭ হাজার ৯২ হাজার টাকা বেশি নেওয়া হলেও তা সমন্বয় করা হয়নি। এই স্কুল সেনাসদরের অনুমতিক্রমে পরবর্তী বছরের সেশন চার্জের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছে।
হলিক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে মোট ১২ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও অন্য আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের এই ফি ধার্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে ছাত্রীদের কোনো টাকা বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, বনানী বিদ্যানিকেতন, সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুলে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.