শাবান মাসের ফজিলত by মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী

শাবান মাস হিজরি ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ মাসের সম্পর্ক নিজের দিকে করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'শাবান আমার মাস।' -দায়লামি হজরত আনাস (রা.) বলেন, এ মাসের নাম শাবান এ জন্য রাখা হয়েছে যে, রোজাদারের নেকগুলো শাখার মতো বৃদ্ধি পায় এবং আরও বাড়তে থাকে।


বড়পীর হজরত আ. কাদির জিলানি (রহ.) বলেন, শাবান পাঁচ অক্ষরবিশিষ্ট, শিন, আইন, বা, আলিফ ও নুন। এ থেকে প্রতিটি অক্ষর এ মাসের বড়ত্ব, মহত্ত্ব ও সম্মানের ইঙ্গিত করে। যেমন শিন 'শারফুন' অর্থাৎ সম্মান ও বড়ত্ব বোঝাচ্ছে। আইন দ্বারা উলুওউন অর্থাৎ উঁচু, বা দ্বারা বিররুন অর্থাৎ নেক, আলিফ দ্বারা উদ্দেশ্য উলফত অর্থাৎ মহব্বত এবং নুন দ্বারা নূর অর্থাৎ আলোর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ পাঁচটি নিয়ামত শাবান মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের দান করা হয়। (গুনিয়াতুত তালেবিন) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, শাবান মাসের বড়ত্ব ও সম্মান অন্যান্য মাসের ওপর এরূপ, যেরূপ সব নবী-রাসূলের ওপর আমার সম্মান ও বড়ত্ব অর্জিত হয়েছে।
শাবান মাস হিজরি সনে অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত থাকা সত্ত্বেও ইসলামের চৌদ্দশ' বছরের ইতিহাসে অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এ মাসে সংঘটিত হয়েছে। হিজরি প্রথম শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করা হলো। দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে কেবলা পরিবর্তন হয়েছে, দ্বিতীয় হিজরির শাবানের শেষে রমজানের রোজা ফরজ হয়েছে, তৃতীয় হিজরির শাবান মাসে হজরত হাফসার (রা.) সঙ্গে নবী করিমের (সা.) বিবাহ হয়েছে, চতুর্থ হিজরির শাবান মাসে নবী দৌহিত্র শহীদে কারবালা ইমাম হোসাইন (রা.) জন্মগ্রহণ করেছেন ও পঞ্চম হিজরির এ মাসেই সংঘটিত হয়েছে বনু মুসতালিকের যুদ্ধ।
এ মাস অনেক মহত্ত্ব, বড়ত্ব ও ফজিলতের মাস। এ ধারাবাহিকতায় হুজুর পাক (সা.) বলেছেন 'শাবান আমার মাস এবং রমজান আল্লাহতায়ালার মাস।' নবী করিম (সা.) এ বরকতময় মাসকে নিজের দিকে সম্বন্ধ করা_ এ মাসের ফজিলত ও মহত্ত্বের উজ্জ্বল প্রমাণ।
শাবান মাস মূলত রমজানের প্রস্তুতির মাস। এ মাসের পনেরতম রজনীতে শবেবরাত। শবেবরাত শবেকদরের বরকত ও কল্যাণ গ্রহণ করার জন্য বান্দাদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলে। শবেবরাতে তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে হৃদয়কে কোমল করে যেন রমজান ও শবেকদরের আধ্যাত্মিক আলো হৃদয়ের প্রতিটি কোণে অনুপ্রবেশ ঘটে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শাবান ব্যতীত (রমজান ছাড়া) আর অন্য কোনো মাসে নবী করিমকে (সা.) বেশি রোজা রাখতে দেখিনি। শাবানের রোজা রাখতে রাখতে রমজানের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া তার খুব প্রিয় ছিল। (বায়হাকি)
ibsiraji@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.