পবিত্র শবেবরাত-সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় হোক

আজ পবিত্র শবেবরাত। মহিমান্বিত ভাগ্যরজনী, পরম সৌভাগ্যের রাত। আজকের রাতটি মুসলমানদের জীবনে সৌভাগ্যরজনী হিসেবে পরিচিত। এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, পরবর্তী বছরের হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত, আমল ইত্যাদির আদেশ-নিষেধ এ রাতেই ফয়সালা করা হয়।


এ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মুসলমানরা পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে তাঁদের আকুতি জানান। সারা রাত ইবাদতে মগ্ন থাকেন। বিধাতার রহমত, বরকত ও মাগফিরাত কামনা করেন। দুঃখ, বঞ্চনা, ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্তির জন্য সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পা চান। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। মানুষের মধ্যে শুভ চিন্তা, সৎ কর্মের আদর্শ নতুন করে উজ্জীবিত হয়। শুধু ব্যক্তিগত জীবন নয়, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যা কিছু শুভ ও সুন্দর তার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা হয়। সমাজের অন্যায়-অবিচার-অনাচার, সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুঃখ লাঘবের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে আকুতি জানানো হয়।
হিজরি ক্যালেন্ডার অনুসারে শাবান মাসের ১৫ তারিখ দিবাগত রাতটিকেই শবেবরাত বা মুক্তির রাত হিসেবে গণ্য করা হয়। আরবিতে এ রাতকে বলা হয় লাইলাতুল বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী। পাপকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে গুনাহ থেকে মুক্তিলাভ ও আগামীর সৌভাগ্যময় প্রস্তুতি, উভয়ের জন্যই এ রাত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। রমজান মাসের আগের মাস শাবান। রমজানের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসকেও বরকতময় মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে হাদিস শরিফে। মহান আল্লাহ চান, মানুষ পাপ-তাপ থেকে মুক্ত হয়ে সুখে-সমৃদ্ধিতে জীবন যাপন করুক। তিনি চান মানুষ সৌভাগ্য লাভ করুক।
তাৎপর্যপূর্ণ এ রাতের বিশেষ বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায় রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার, মিলাদ মাহফিল, নফল নামাজ আদায় ও কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকে। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, বরকতময় এ রজনীতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয় মানুষের আমলনামা। নির্ধারিত হয় তাবৎ মানুষের আগামী এক বছরের রিজিক। শবেবরাতের মূল করণীয় হচ্ছে, একান্তে ও নীরবে ইবাদত করা। সেই সঙ্গে নফল রোজা রাখা, সারা রাত নামাজ-বন্দেগি ও জিকিরে মশগুল থাকা।
এবারের শবেবরাত আমাদের সবার ব্যক্তিগত জীবনে মুক্তি ও সৌভাগ্যের বারতা বয়ে আনুক। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনেও দুঃখ ও দুর্ভোগ লাঘব করে আমাদের জন্য শান্তিময় ভবিষ্যৎ আনুক, এ প্রার্থনা। পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার ভিত্তিতে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সেটাই হোক পবিত্র শবেবরাতের শিক্ষা। এবারের শবেবরাত সবার জীবনে মুক্তি ও সৌভাগ্যের অপূর্ব সুযোগ এনে দিক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।

No comments

Powered by Blogger.