ভারতের সঙ্গে নৌ-প্রটোকল-দেশের স্বার্থরক্ষাই প্রধান বিবেচ্য

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা নৌ-প্রটোকলের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মতিপত্র সই হয়েছে। ঢাকায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর জানানো হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই নবায়ন করা প্রটোকল সই হবে।


বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচটি প্রস্তাবের একটি ছিল উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করা প্রসঙ্গে। এতে ভারত আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারেরও সুযোগ পাবে। ভারতও বিষয়টি বিবেচনা করতে রাজি হয়েছে। অন্যদিকে ভারত যে আটটি প্রস্তাব দিয়েছে, তার মধ্যে আছে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে ট্রান্সশিপমেন্ট চালু, মংলায় স্থলবন্দর ও সুরমা নদীর মধ্য দিয়ে ছাতকে নতুন পোর্ট অব কল চালু করা। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত উপকূলীয় জাহাজ চলাচল প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা কিছু ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। কারো কারো মতে, এটি হবে দেশের স্বার্থ না দেখেই ভারতকে ঢালাও ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ারই নামান্তর।
বাংলাদেশ ও ভারত নিকটতম দুই প্রতিবেশী দেশ। স্বাভাবিকভাবেই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সুসম্পর্কই আমাদের কাম্য। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘ শীতলতা বিদ্যমান থাকার পর বর্তমান মহাজোট সরকারের সময় আবার সম্পর্ক উষ্ণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মানুষের মধ্যে নানামুখী প্রত্যাশার জন্ম হয়েছিল। ভারতীয় জনগণের আশা ছিল, তাদের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পণ্য পরিবহনসহ সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলায় অগ্রগতি হবে। বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল, অভিন্ন নদীগুলো থেকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ যেভাবে মরতে বসেছে, তা থেকে এবার হয়তো রক্ষা পাওয়া যাবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার মাধ্যমে তারও কিছুটা সুরাহা হয়তো করা যাবে। বিশেষ সুবিধার আওতায় ভারতকে বেশ কিছু ট্রানজিট সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। যেমন ত্রিপুরার পালটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিনা মাশুলে বিপুল পরিমাণ পণ্য ও সরঞ্জাম নেওয়া হয়েছে আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে। এর ফলে তিতাস নদীর গতিপথ বন্ধ করার পাশাপাশি অবকাঠামোগত প্রস্তুতি না থাকায় আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়কের অনেক সেতু ও কালভার্টের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীকালে ট্রান্সশিপমেন্ট চালুর লক্ষ্যে আরো তিনবার পণ্য পরিবহন করা হয়। ২০১০ সালে ভারতের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়টিও অনেকটা ঝুলে গেছে। এরপর উপযাজক হয়ে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার জন্য আমরাই যদি বেশি উদগ্রীব হয়ে পড়ি, তাহলে আমাদের অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান কি উপেক্ষিতই থেকে যাবে না? তার পরও যদি কোনো প্রটোকল সই করতেই হয়, তাহলে অনেক বেশি সাবধানতার সঙ্গে সেগুলো পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার পরই কেবল করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ জাতীয় উদ্যোগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিতে কী কী থাকছে, তা দেশের মানুষকে জানতে দিতে হবে। কারণ বর্তমান সরকার দীর্ঘমেয়াদি না-ও হতে পারে; কিন্তু চূড়ান্তভাবে এসব চুক্তির ফলাফল দেশের মানুষকেই ভোগ করতে হবে।
প্রতিবেশীর সঙ্গে আমরা অবশ্যই সুসম্পর্ক চাই। কিন্তু তা হতে হবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে এবং পারস্পরিক স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে।

No comments

Powered by Blogger.