ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতা by এডওয়ার্ড প্রবীর মণ্ডল

বাংলাদেশের সামাজিক দায়বদ্ধতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশে অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রথম প্রজন্মের ব্যবসায়ী রয়েছেন। সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, জনহিতকর কাজে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না। দেখা যায়, কোনো আর্থিক প্রত্যাশা ছাড়াই দায়সারাভাবে বিভিন্ন দাতব্য ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে দান করা হয়।

বেশিরভাগ এসএমই ইনফরমাল সেক্টরে নিম্নমানের সম্পদ ও পরিবেশগত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। এই সীমাবদ্ধতার জন্য স্থানীয় কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুধু প্রতিষ্ঠানের লাভের দিক দেখে থাকেন। ট্রিপল বটম লাইন হচ্ছে—‘লাভ, মানুষ ও পৃথিবী’ (সিএসআর সংজ্ঞা, লোটাস হোল্ডিং)।
ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতা বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন গ্লোবাল বিষয়, যদিওবা বিষয়বস্তুর দিক থেকে এটা নতুন নয়। কেননা গ্লোবাল মার্কেটের অংশ হিসেবে রফতানি বাণিজ্যে ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতাকে (সিএসআর) অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সাধারণভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শ্রম অধিকার, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, কর্পোরেট গভর্নেন্স এবং স্বচ্ছতা আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বর্তমানে আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে না। সুশীল সমাজ থেকে চাপ এবং ভোক্তা ফোরাম থেকে চাপ নিয়মিত আসে।
আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ব্যবসা-বাণিজ্যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে এবং এটা মুক্ত বাজারের পূর্বশর্ত। স্থানীয় গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে এটা সমভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি ইনডেক্সের সঙ্গে জড়িত এসআরআই’র (সোশ্যালি রেসপনসিবল ইনভেস্টিং) মাধ্যমে সিএসআর এবং কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি আন্দোলন বর্তমানে সরকারের সহযোগিতা ও সমাজে বিনিয়োগের মাধ্যমে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে চলে গেছে। এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক দায়িত্ববোধ, পরিবেশগত প্রভাব কমানো, নৈতিক বিষয় সংরক্ষণ, সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং স্টেকহোল্ডারদের কাছে বেশি দায়িত্ববান হওয়ার মাধ্যমে সাসটেইনেবিলিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
তদুপরি, এসব উন্নতির পরও সিএসআর এবং কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি ব্যবহার ও প্রয়োগ অপেক্ষাকৃত নতুন বিষয় এবং গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান দ্বারা গ্রহণযোগ্য এবং যা এক প্রশ্নবিদ্ধ প্রভাব। ইতিবাচক দিকে দেখতে হলে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন এসআরআই ইনডেক্সে তালিকার শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে আশাতীত ফলাফল অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
সিএসআর এবং কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি করার পেছনে যে উদ্দীপনা কাজ করে তা ব্যাপকভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে লাভজনক আয় করা যেতে পারে। তবে আর্থিক পারফরমেন্সের বিষয় বিবেচনায় না রেখে অন্তর্গত ব্যবস্থায় কোম্পানির উদ্দেশ্য ও সুনাম বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এখানে মূল ব্যবসায়িক চালিকাশক্তি হচ্ছে—
ক. সুদৃঢ় ব্র্যান্ড ও সুনাম,
খ. নিয়োগদাতার মনোনয়ন,
গ. মার্কেটে অবস্থান,
ঘ. আর্থিক মার্কেটের প্রতি আস্থা এবং শেয়ারহোল্ডাদের মূল্যবোধের উন্নয়ন.
ঙ. মার্কেটে নতুন সবুজ প্রডাক্ট ও সার্ভিস।
এটা সুস্পষ্ট যে, অগ্রসরমান কোম্পানি ভবিষ্যতে শেয়ারহোল্ডাদের মূল্যবোধ বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের লক্ষ্য ও স্ট্রাটেজি অনবরত পরিবর্তন করবে।
কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটি এবং সাসটেইনেবিলিটি ব্যবস্থাপনা যেভাবে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে, সেভাবে ব্যবসার মূল প্রয়োগ করতে আরও সময়ের প্রয়োজন। এটা সর্বজনস্বীকৃত যে, কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটি এবং সাসটেইনেবিলিটি পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এটা নির্ভর করে নেতৃত্ব, প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সাংগঠনিক ক্ষমতার ওপর।
সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্ববান ব্যবহার বিভিন্ন দিকে অনেক কার্যক্রমের ওপর যেমন কোম্পানির সিদ্ধান্ত ও প্রসেসের ওপর নির্ভর করে। কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটি এবং সাসটেইনেবিলিটি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে দীর্ঘকালীন প্রতিজ্ঞা প্রয়োজন সঠিক গুণাগুণ অর্জন করার জন্য।
‘কোম্পানির পরীক্ষিত প্রতীজ্ঞা যা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে সংরক্ষণ করে এবং যা স্টেকহোল্ডারদের স্বচ্ছভাবে সন্তুষ্ট করে। স্টেকহোল্ডার বলতে বোঝায় বিনিয়োগকারী, ক্রেতা, কর্মচারী, ব্যবসায়িক অংশীদার, স্থানীয় জনসাধারণ, পরিবেশ এবং সমাজ। এখানে গুরুত্ব দেয়া হয় স্বচ্ছ এবং পরীক্ষিত স্টেকহোল্ডারের জন্য নিয়োজিত ব্যবসা কার্যক্রম।’
সাসটেইনেবল ব্যবসা কার্যক্রম মানে হচ্ছে, বর্তমান স্টেকহোল্ডারদের প্রয়োজন ও চাহিদা মেটানো।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, সিএসআর বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সাসটেইনেবিলিটি লিডারশিপ,
ই-মেইল : epmondol@csrhangladesh.org

No comments

Powered by Blogger.