কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না-হাসপাতালে শিশু চুরি

শিশু চুরি যাওয়ার পর হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার করা রোগী মারা যাওয়ার পর বাড়িতে চিকিত্সক পাঠানোরই শামিল। যে মায়ের বুক খালি হয়ে গেছে, এখন কোনো ব্যবস্থাই তাঁকে আশ্বস্ত করতে পারবে না। গত সোমবার হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে (বেবি কেয়ার ইউনিট, সিজার ওটি ও লেবার রুম) সালমা আক্তার নামের এক মায়ের নবজাতক ছেলে চুরি হয়ে যায়।


এ ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা বলছেন, চুরির পেছনে মায়ের হাত থাকতে পারে। অন্যদিকে সালমা আক্তার নিজেই পুলিশের কাছে নবজাতক চুরি যাওয়ার অভিযোগ এনেছেন। মা নিজের সন্তানকে চুরি করবেন, সেটি কখনো বিশ্বাসযোগ্য নয়। অপরিচিত নারীকে তাঁর বিছানায় এনে রাখার কথা বলেছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
প্রশ্ন হলো, এটি তো সরকারি হাসপাতাল। এখানে দর্শনার্থী আসার ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা আছে। সে নীতিমালা অনুযায়ী কি কোনো অপরিচিত নারী বেবি কেয়ার ইউনিটে যেতে পারে? নিরাপত্তাকর্মীরা কি তার নাম-ঠিকানা লিখে রেখেছেন কিংবা তাকে খুঁজে বের করতে চেষ্টা চালিয়েছেন? পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মীরা হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত। সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তাকর্মীদের সবাই কি পরীক্ষিত? কেবল বেসরকারি কোম্পানির ওপর দেশের বৃহত্তম হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায় না। দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তাব্যবস্থা নাজুক। প্রায়ই রোগীদের মূল্যবান জিনিসপত্রও খোয়া যায় বলে অভিযোগ আছে। শিশু চুরির ঘটনাও এটি প্রথম নয়। এসব অপকর্ম রোধে কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিলে হয়তো বারবার শিশু চুরির ঘটনা ঘটত না। অতীতে দেখা গেছে, কোনো অঘটন ঘটার পর কিছুদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তত্পর হয়ে ওঠে এবং কিছুদিন না যেতেই আবার সবকিছু ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। এবারও যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়।
যেহেতু হাসপাতাল থেকে শিশুটি চুরি হয়েছে, সে কারণে এর দায়ও কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে একটি সংঘবদ্ধ চোর ও সন্ত্রাসী চক্র গড়ে উঠেছে; যার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মীদের যোগসাজশ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। এ চক্রের মূলোত্পাটন ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু চুরি বন্ধ হবে না। আশা করি, চুরি যাওয়া শিশুটি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.