ভৈরবনগরে অরাজকতা



স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে: ঘরের বেড়া-চালা নেই, ঘরের ভেতরও ফাঁকা। নেই কোন কিছুই। লুট হয়ে গেছে সব। বাড়িতে পুরুষ নেই। আতঙ্কে মেয়েছেলেরা। তাদেরও দেয়া হচ্ছে বাড়ি ছাড়ার হুমকি। অরাজক অবস্থার এ চিত্র নবীনগরের ভৈরবনগর গ্রামের। দু-মাস ধরেই চলছে এখানে লুটপাট। গ্রামে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প আছে। কিন্তু তারপরও বন্ধ নেই বাড়িঘরে হামলা। সবকিছু লুট করে নেয়ার পর এখন রান্না করে খাওয়ার হাঁড়িপাতিল পর্যন্ত লুটে  নেয়া হচ্ছে। লুট করে নেয়া হয়েছে বাড়িতে থাকা মহিলাদের কাছ থেকে এক-দেড়শ’ মোবাইল ফোন। দাড়িয়াবান্দা খেলাকে কেন্দ্র করে গত ৪ঠা মার্চ খুন হয় ইয়াছিন নামের এক যুবক। এরপরই পালিয়ে যায় একপক্ষের পুরুষরা। ঘটনার পর থেকেই তাদের বাড়িঘরে লুটপাট শুরু হয়। যা এখন এক অমানবিক অবস্থায় এসে ঠেকেছে। ভৈরবনগর পশ্চিমপাড়ার মমতাজ বেগম জানান, দু’দিন আগে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা করে। ধানকাটার কামলাদের জন্য রান্না করা ভাত-তরকারি মাটিতে ফেলে সব হাঁড়িপাতিল নিয়ে যায়। কুলসুম নামে আরেক গৃহবধূ জানান, হাঁড়িপাতিল নিয়েই তারা ক্ষান্ত হয় না। মারধরও করে। পাশের রাজাপুর গ্রামে পালিয়ে থাকা হানিফ মিয়া জানান, তার মুদি দোকানে হামলা করে দু-আড়াই লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। তার দুটি টিনের ঘর, একটি পাকা বিল্ডিংয়ে যা ছিল সবই লুট হয়েছে। আবদুল মজিদ জানান, লুটপাট করা হয়েছে তার ৪টি ঘর। সরজমিনে ভৈরবনগর গ্রাম ঘুরে একটি পক্ষের কোন বাড়িঘরই আস্ত দেখা যায়নি। মন্নাফ, হারুন মিয়া, মলাই মিয়া, হাসু মিয়া, মোকাদ্দেস, মোবারক, শিশু মিয়া, ইসমাইল, ইব্রাহিম, ইউসুফ, হানিফ, বশু মিয়া, মোজাম্মেল, বিল্লাল, আবদুর রহমান, ফুল মিয়া, নাজির মিয়া, আবদুল আলিম, আবু কালাম, খলিল, জসিম, জাহার মিয়ার ঘরের কোন বেড়া-চালা নেই। ঘরের ভেতরও নেই কোন কিছু। অর্ধ শতাধিক বাড়িঘরে চালানো হয় ভাঙচুর আর লুটপাট। মদন মিয়ার পক্ষের এসব লোকজন ধান কাটারও সুযোগ পাচ্ছে না। বাড়িতে থাকা বউ-ঝি’রা জানান, অলেক মিয়া, তিতন মিয়া, আবু তাহের, নাছির, বশির ও সংগ্রামের নেতৃত্বেই ঘরে ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে প্রতিদিন। সরজমিন গ্রাম ঘুরার সময় ছুটে আসেন তিতন মিয়া। তিনি সাংবাদিকদের সামনেই লুটপাট করার অভিযোগ আনায় ধমকাতে থাকেন মমতাজ বেগমকে। তিতন মিয়া জানান, লুটপাট, ভাঙচুর হয়েছে মার্ডারের দিনই। এরপর আর কিছু হয়নি। তার দাবি তিনি হামলাকারীদের দমন করতেই কাজ করছেন। ঘটনার পরই গ্রামের পূর্বপ্রান্তে ভৈরবনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী একটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। ক্যাম্পটির অবস্থান  হামলাকারীদের এলাকায়। তাই সেখান থেকে বেড়িয়ে গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে কি ঘটছে না ঘটছে পুলিশ সে খবর নেয় না। তবে ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা এসআই শফিকুল ইসলাম গ্রামের পরিস্থিতি ভাল বলেই দাবি করেন। এর বাইরে থানা বা জেলার পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি কেউই যাননি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ গ্রামটিতে। স্থানীয় মহিলা মেম্বার জ্যোস্না বেগম বলেন মার্ডারের পর আমি ওই গ্রামে ২/৩ বার গেছি। তখন দেখেছি ছেলেপুলেরা বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। লুটপাট করছে। পুলিশ একদিকে আর তারা আরেকদিকে এসব করছে। আমি বাধা দিলে তারা আমাকেও অপমান করে। নবীনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান এখন বলেছেন শিগগির ভৈরবনগর গ্রামের লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হবে। পুলিশ সুপার মো. জামিল আহমেদ জানান ভৈরবনগরে আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে নবীনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এলাকার সংসদ সদস্য শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন জানিয়েছেন তিনি আইন-শৃঙ্খলা যেন কেউ নিজের হাতে তুলে না নেন সেজন্য ভৈরবনগর গ্রামে গিয়ে একটি সভা করবেন।

No comments

Powered by Blogger.