অশ্রুবিন্দু ও অগি্নকণায়...

গত ২৩ মার্চ বৃহত্তর বরিশালের ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর গ্রামে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর এলিট ফোর্স 'র‌্যাব' কর্তৃক বিনা দোষে ও বিনা বিচারে গুলিবিদ্ধ হয়ে ষোলো বছরের দরিদ্র, শ্রমজীবী কিশোর ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী লিমন হোসেনের পা হারানোর ঘটনাটি ইতিমধ্যেই গোটা বাংলাদেশের সকল সাধারণ নাগরিকের তীব্র ক্ষোভ, শোক ও প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট 'র‌্যাব'-এর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দু'ঘণ্টার ভেতর তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই লিমনকে ঢাকার শ্যামলীস্থ পঙ্গু হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নগর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সাভারের সিআরপি হাসপাতালের সহায়তায় লিমনের কর্তিত বাম পায়ে কৃত্রিম পা সংস্থাপনের আগে বেশ কিছুদিন ধরে ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। 'গণস্বাস্থ্য' কর্তৃপক্ষ লিমনকে এই ফিজিওথেরাপি, ওষুধ ও চিকিৎসা পরামর্শের সেবা বিনা পয়সায় দিতে সম্মত হয়েছে। লিমনের দরিদ্র পরিবারকে শুধু স্বল্পমূল্যে তিন বেলা খাবারের ব্যয়ভার বহন করতে হবে। এ ছাড়াও সংবাদপত্র, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সচেতন ছাত্রসমাজ, কবি-লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল হিসেবেই লিমনের এ ঘটনা দেশের হাজারো অন্যায়-অবিচারের ঘটনার মতো পর্দার আড়ালে হারিয়ে যায়নি। দেশের বামপন্থি বিভিন্ন মোর্চা ও সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন লিমনের জন্য 'মানববন্ধন'সহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। 'লিমনের জন্য, জীবনের জন্য' নামে আমাদের এই নিতান্ত অরাজনৈতিক ও ফেসবুকনির্ভর সংগঠন গত ১৩ মে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সফল মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। পরবর্তী উদ্যোগ হিসেবে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপে আমরা লিমনের জন্য একটি গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। ১৫ জুন থেকে ৩০ জুন দু'সপ্তাহ ধরে ঢাকা নগরীর বিভিন্ন স্থানে এই গণস্বাক্ষর সংগ্রহ চলবে। এ ছাড়া ১৫ জুন থেকে ইন্টারনেটেও আমাদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চলবে।
আমাদের দাবি
১. লিমনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।
২. দোষী র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। গোটা ঘটনায় নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হোক।
৩. রাষ্ট্রকে গোটা ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও পঙ্গু হয়ে যাওয়া কিশোর লিমন হোসেনের চিকিৎসা ও পড়াশোনার সামগ্রিক ব্যয়ভার বহন করতে হবে।
৪. বিনা বিচারে সব মৃত্যুর ঘটনার স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হোক।
লেখকবৃন্দ : সঙ্গীতশিল্পী, তথ্যচিত্র নির্মাতা, সাহিত্যকর্মী ও সমাজকর্মী
 

No comments

Powered by Blogger.