নারীর প্রতি সহিংসতা-আর কতদিন?

কেবল শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থানই যে নারীকে পারিবারিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারে না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের ওপর নৃশংস নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তা আরেকবার প্রমাণ হলো। নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে 'জিরো টরালেন্স'ই নারীর প্রতি পারিবারিক বৈরিতা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে।


কিন্তু বিষয়টি যে সহজ নয়, মেধাবী শিক্ষকের ওপর তার স্বামীর পৈশাচিক হামলা-পরবর্তী ঘটনার মধ্য দিয়ে সেটাও স্পষ্ট। আমরা দেখলাম, অভিযুক্ত হাসান সাইদকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি_ এ ব্যাপারে হাইকোর্টের রুল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আলটিমেটামের পরই কেবল তিনি আটক হলেন। রুমানা মঞ্জুর নির্যাতিত হওয়ার পর ১০ দিন ধরে পুলিশ ও প্রশাসন কী করেছে, সে প্রশ্ন আমরা তুলতে চাই। আসামি 'পলাতক' বলেই কি পুলিশ দায়িত্ব এড়াতে পারে? অভিযোগ রয়েছে যে, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের জনপ্রিয় ওই শিক্ষকের বেকার ও বিকারগ্রস্ত স্বামীর আত্মীয়-স্বজন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তাদের দাপটই কি হাসান সাইদের রক্ষাকবজ হয়ে উঠতে চায়? তাকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন করে আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার সুযোগ কিসের আলামত? এক্ষেত্রে আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই, তার ভদ্রবেশের অন্তরালে যে পশুপ্রবৃত্তি রয়েছে, সেটাকে অনুকম্পার সুযোগ সামান্যই। বরং এক্ষেত্রে ওই প্রভাবশালীদের কারও ইন্ধন রয়েছে কি-না গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হোক। সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে বলতে চাই, রুমানা মঞ্জুরের অমানুষিক নির্যাতনের এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যে কোনো অপচেষ্টাই আত্মঘাতী হতে বাধ্য। নির্যাতনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই প্রাপ্য। একই সঙ্গে আমরা কামনা করছি, রুমানা যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা। আমরা বলছি না যে, দেশে কেবল রুমানা মঞ্জুরই প্রথম ও একমাত্র নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা কত ভয়ানক হতে পারে। হাসান সাইদের উপযুক্ত শাস্তি আরও অনেক নারী নির্যাতনকারীকে খামোশ করে দিতে সহায়ক হবে। নারীবান্ধব যে সমাজের স্বপ্ন আমরা দেখি, রুমানা মঞ্জুরের সুবিচারপ্রাপ্তির মধ্য দিয়েই তার সূচনা হোক।

No comments

Powered by Blogger.