সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার

১২ মার্চ ভারতের রাজধানী নয়াদিলি্লতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মধ্যে পাঁচ দিনব্যাপী বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যে ঘোষণা এসেছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিক বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।


প্রথমে সীমান্তের স্পর্শকাতর কিছু স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে তারা এ কার্যক্রম শুরু করবে। যদি এ উদ্যোগ সফল হয়, তবে উভয় দেশের পুরো সীমান্তে এ কার্যক্রম শুরু হবে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যতবার বৈঠক হয়েছে ততবারই অনিবার্যভাবে এসেছে সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের নিহত হওয়ার বিষয়টি। দীর্ঘদিন যাবৎ এ নিয়ে আলোচনাক্রমে যৌথভাবে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দিক থেকে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। নিকট অতীতে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে এক কিশোরীর (যার নাম ফেলানী) প্রাণহানির পর বিষয়টি পুনর্বার জোরেশোরে সামনে আসে।
গত ৭ জানুয়ারি ফেলানীর মৃত্যুর ১২ দিন পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয় এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাই (গোপাল কৃষ্ণ পিল্লাই) সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, ওই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে এবং তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা মনে করি, এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রের দায় ও কর্তব্য রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বিস্তৃত সীমান্ত অঞ্চল। তা ছাড়া ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম বৃহৎ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এ রকম সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় কিছু দুষ্কৃতকারীর অপতৎপরতা ও অনুপ্রবেশের ঘটনা বিস্ময়কর নয়। এসব অবৈধ অপতৎপরতা ঠেকাতেই সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কিন্তু এ অজুহাতে ইতিমধ্যে অনেক বাংলাদেশির প্রাণ হরণ করা হয়েছে। তার পরও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গভীরভাবে বিষয়টি অনুধাবন করে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে_এটি সবার জন্যই সুখবর।
উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ধৈর্য ধারণ করে সীমান্তে অপরাধ দমনে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে অবশ্যই এর সুফল মিলবে বলে আমরা মনে করি। তা ছাড়া সীমান্তের আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা তো সত্য_জঙ্গি, বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসী বা দুষ্কৃতকারীদের নির্দিষ্ট কোনো দেশ নেই, সব দেশের জন্যই তারা হুমকি ও ক্ষতির কারণ। আমরা মনে করি, দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সদিচ্ছা এবং অঙ্গীকারও কাজে আসবে না, যদি সীমান্তে শান্তি বজায় না থাকে। তা ছাড়া পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বাড়ানো ছাড়া নিরাপত্তা সমস্যা লাঘবের কোনো সুযোগ নেই। উভয় দেশের দায়িত্বশীলদের মধ্যে আলোচনার পর যে ঘোষণা এসেছে এর পূর্ণ বাস্তবায়ন কাম্য। এতে সম্পর্কের ভিত অবশ্যই মজবুত হবে, সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.