সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরি-ইউজিসির প্রতিবেদন

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি তাদের সর্বশেষ যে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে, সেখানে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মূল্যায়নের পাশাপাশি বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। আমরা এ ধরনের মূল্যায়ন ও সুপারিশগুলোকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি,


কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি ও বাস্তবতার পরিবর্তন হয়, কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা যেমন দেখা দেয় তেমনি অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সম্ভাবনার পরিস্থিতিও তৈরি হয়। ফলে মূল্যায়ন ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি খুবই জরুরি। ইউজিসি সেই মূল্যায়ন ও সুপারিশ দেওয়ার কাজটি করেছে, এখন এসব বিবেচনায় নিয়ে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, সেটাই দেখার বিষয়।
সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন নির্বাচিত উপাচার্য নেই, তেমনি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ আছে। যে দলই ক্ষমতায় থাক, দেখা যায় নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজেদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, শিক্ষা বা শিক্ষার পরিবেশের চেয়ে এই বিষয়গুলো সরকারের কাছে বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই গেছে।
ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলীয় রাজনীতির প্রভাব ও নানা কারণে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সন্দেহ নেই প্রতিবেদনে উল্লিখিত ‘ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া’ শিক্ষার মানের অবনতির অন্যতম কারণ। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির প্রতিবেদনে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষজ্ঞ পুল গঠন করে একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য পরীক্ষা ও ক্লাস ডেমনেস্ট্রেশনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান ভর্তি-প্রক্রিয়া একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি জটিলও। এই প্রক্রিয়াকে কীভাবে শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলা যায়, সে ব্যাপারে সংস্কারেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য ’৭৩ সালের অধ্যাদেশ পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যথাযথ পরিচালনা নিশ্চিত করার স্বার্থে যেকোনো ধরনের পরিবর্তন বা সংশোধনের বিষয়টি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে যেসব পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে, সেগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শুধু বাণিজ্যিক বিবেচনায় কিছু বিষয় ঠিক করে পড়ানো হবে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এসব প্রতিষ্ঠানে আয় ও ব্যয়সংক্রান্ত কোনো স্পষ্ট নীতি নেই। ফলে ভর্তি ফি, টিউশন ফি বা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা—সব ক্ষেত্রেই একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে।
আমরা আশা করব, ইউজিসি যে সংস্কার প্রস্তাব ও সুপারিশ করেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি সামগ্রিক অবস্থান থেকে উচ্চশিক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টদের পরামর্শও নেওয়া যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.