কণ্ঠস্বর-হরতাল এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা by রাহাত খান

আমি তাকে জানতাম একজন খুব নম্র, বিনয়ী এবং সৎলোক হিসেবে। তিনি তখন মন্ত্রী। তার গুলশানের বাসায় আমাকে চা পানের দাওয়াতও দিয়েছিলেন। কেন যাওয়া হয়নি সেটা এখন আর মনে পড়ে না। মনে পড়ে শুধু অভিজাত চালচলনের একজন ভদ্র ও নম্র স্বভাবের মন্ত্রীকে।


স্বীকার করি, আমার রাজনৈতিক ধারার বিপরীত অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হলেও তিনি মানুষ হিসেবে আমার সমীহ এবং সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছেন।
ধারণা করি, মানুষ হিসেবে আজও তিনি নম্র, ভদ্র, অভিজাত চালচলনের অধিকারীই আছেন। এসব গুণ তো পারিবারিক পরিবেশে ছোটবেলা থেকে রপ্ত করা। রক্তে ও স্বভাবে মিশে যায় এসব বৈশিষ্ট্য। সহজে মুছে যাওয়ার নয়।
কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই, তার রাজনৈতিক স্বভাবের আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। যেনবা বাংলাদেশের নতুন চে গুয়েভারা হতে চাইছেন। আগে একদিনের হরতাল ডেকেছিলেন। ১৩ জুন। নতুন করে ডাকা একটানা ৩৬ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন। সমকালের জন্য লিখতে বসে তার কথা ভেবে একটু তাজ্জবই বনে যাচ্ছি। সন্ত্রাস ঘটিয়ে এবং হরতালের দিন মারদাঙ্গা পিকেটিং করে হরতাল সফল করাই যায়। এর আগে আওয়ামী লীগও অরাজক রাজনীতির 'মহাজ্ঞানী, মহাজনের' পন্থা অনুসরণ করে দেশব্যাপী বিভিন্ন সময় হরতাল ডেকেছে। আওয়ামী লীগের (বিরোধী দল) হরতাল শতভাগ সফল হতো। আর সরকার (বিএনপি) বলত হরতাল হয়নি।
দুই দলের কথাই হয়তো ঠিক। ডাকলে হরতাল হয়। আবার হরতাল হয় না। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে শুধু যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণ থাকেন সাইড লাইনে। হরতাল সফল করতে জনগণের সহযোগিতা না হলেও চলে। হরতালের আগের রাতে পাঁচ-দশটা বাস পুড়িয়ে দিতে পারলে, শহরের কয়েকটি স্পটে সশস্ত্র পিকেটিং করতে থাকলে হরতাল সফল হবে না মানে? হরতালের বাপ হবে।
আবার হরতাল হয়ও না। পুলিশ দিয়ে পিকেটারদের পিটিয়ে দিলে, কয়েক ডজন পিকেটার ধরতে পারলে, অনুগত ছাত্র ও ক্যাডারদের রাস্তায় নামিয়ে দিতে পারলে হরতালের রঙ ও ছবি কিছুটা বিবর্ণ হয়ে পড়ে বৈকি। বেবিট্যাক্সি, রিকশার চলাচল ভালোই হয়। সংখ্যায় একটু কম হলেও শহরে পাবলিক এমনকি প্রাইভেট বাসও চলাচল করে।
এ জন্য বলছিলাম হরতাল সফল হয়। হরতাল সফল হয় না। সবই দাবি_ বিরোধী ও সরকারি দলের পক্ষ থেকে। আর সম্পূর্ণ সাইড লাইনে থাকা জনগণ? স্বৈরাচার পতনের পর 'গণতান্ত্রিক যুগে' দেওয়া এ ধরনের সন্ত্রাসী হরতাল জনগণ কোনো দিন চায়নি। কোনোদিন না। হরতালে মানুষের কর্মঘণ্টা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের যে বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয় এর কোনো যুক্তি নেই, কোনো অর্থ নেই। খেটে খাওয়া লোকদের ভোগান্তি তো চরমে পেঁৗছে। হরতাল ডেকে সন্ত্রাসী কায়দায় হরতাল না করে পদযাত্রা করলেও তো রাজনীতির উদ্দেশ্য সিদ্ধ হতে পারে। সন্ত্রাস না ঘটিয়ে রাস্তায় হাজার হাজার লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে অধিকের চেয়ে অধিক রাজনৈতিক ইমপ্যাক্ট সৃষ্টি করা যায়। ভারতের ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধি সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়াকে এখন পর্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলই বলা চলে। ক্ষমতার অপব্যবহারে নাভিশ্বাস ওঠা দারিদ্র্য, দুর্নীতি আর অধিক জনঅধ্যুষিত এই অঞ্চলটি ছাড়া এ ধরনের হরতাল আর কোথায় হয় না। আবার বলি হরতালের পর হরতাল দিয়ে অর্থনীতির বিপর্যয় এবং জনগণের ভোগান্তি একশেষ এভাবে দুনিয়ার আর কোথায় হয় না।
কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিকে কে বোঝাবে এই কথা? দুনিয়ার এমন কোনো মধ্যস্থতাকারী দেশ বা শক্তি কোথায় আছে, যারা দুই প্রধান দল এবং দুই দলের দুই নেত্রীর জেদ ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকে বাংলাদেশের প্রায় নিঃশ্বাস নিতে না পারা রাজনীতিকে বাঁচায়? না, এমন দেশ বা ব্যক্তি কোথাও নেই।
হরতালের প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। হরতাল না করে, হরতালের যে দাবি তা মীমাংসা করতে সংসদে আসুন না। আপনারা যে ধরনের তত্ত্বাবধায়ক চান, তা নিয়ে আসুন, আলোচনা বৈঠকে বসি দুই পক্ষ। সংসদে যাওয়া, আলোচনা করা এবং মীমাংসার কথা এসব বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও আলোচনায় বসতে বিরোধী দলকে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানিয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতা।
সরকারি দলের বিএনপিকে সংসদে ডাকা, আলোচনায় বসে বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুর সমাধান করার আহ্বান বিএনপিকে রাগে ক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। বিরোধী চিফ হুইপ জয়নুল আবদিনের ক্রোধে অগি্নশর্মা মুখের দিকে তো তাকানোই যায় না। এমন রূপবান ব্যক্তি। কিন্তু ইদানীং তাকে দেখে এবং বক্তৃতা শুনে মনে হয় হাসি আর খুশি এই দুই বোন যেন তাকে চিরদিনের জন্য আল-বিদা জানিয়ে চলে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল যার কথা শুরুতেই উল্লেখ করেছিলাম, তাকে কখনও কখনও অগি্নমূর্তি ধারণ করা সত্ত্বেও চেনা যায়। তবে আজকাল যে রকম এবং যেসব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন তাতে মনে হয় বিএনপির রাজনীতিতে নিতান্তই বেমানান বিপ্লবী ভূমিকায় তিনি যেন অবতীর্ণ হয়েছেন। সংসদে যাওয়ার আহ্বান শুনে রাগে আগুন হয়ে যান। আর আলোচনা? কার সঙ্গে আলোচনা? 'ভারতের সঙ্গে দোস্তি পাতানো', 'কুচক্রী' আওয়ামী লীগের সঙ্গে? ইয়ে কভি নেহি হো সাক্তা। পাকিস্তানি জবান সঙ্গে সঙ্গে বুঝি এসে যায়। আপস-মীমাংসা নয়, সরকারকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে। আলোচনার প্রশ্ন এর পরে। এই হলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের শেষ কথা। খতমে বয়ান।
সেই ভদ্র, নম্র, অভিজাত আচরণের লোকটি। হালে ঘোষণা দিয়েছেন, ৩৬ ঘণ্টা কেন, দাবি মানা না হলে একনাগাড়ে একটানা সাতদিনের হরতাল দেওয়া হবে। জঙ্গলে বাস করা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গল-মহাল কিংবা ছত্তিশগড়ের মাওবাদীরাও বোধকরি এমনধারা জনবিরোধী কথা বলে না।
অবশ্য তার রাজনীতির ভূমিকা যে অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা, তা সবাই জানেন। এও জানেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বিএনপির মূল কর্মসূচি অন্য কিছু, যা গোপনীয়। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের আড়াই বছর যেতে না যেতে টানা হরতাল দেওয়া। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের উত্থান ও নাশকতা আসছে বলে ভয় দেখানো। কিন্তু ভূতাত্তি্বক রাজনীতির বাস্তবতার নিরিখে একদিকে জঙ্গিবাদের নবউত্থান যেমন অসম্ভব, তেমনি প্রায় অসম্ভব রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পুরনো কৌশল। বিএনপি যত হরতাল ডাকবে তত জনপ্রিয়তা হারাবে, যত জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাবে তত জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন চলে যাবে তাদের ওপর থেকে। বিএনপির আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ হচ্ছে জনগণের ভোটে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া। সেটা করতে হলে বিএনপিকে তার বর্তমান রাজনৈতিক কৌশল অবশ্যই বদলাতে হবে। নিয়মতান্ত্রিকতার পথে আসতে হবে। সেই আগের দিনের নাশকতা ও অরাজকতা সৃষ্টির পথ থেকে সরে আসতে হবে। রাজনীতিকে রাখতে হবে রাজনীতির মধ্যে। রাখাও দরকার। বিএনপি তো কোনো বিপ্লবী দল নয়।
আওয়ামী লীগ দেশ খুব একটা খারাপ চালাচ্ছে না। কিছু ব্যর্থতা আছে। আবার বড় বড় অর্জনও আছে। তবে সাংগঠনিক দুর্বলতায় দারুণভাবে ভুগছে দলটি। গত পৌরসভা নির্বাচন, বর্তমানে হতে থাকা উপজেলা ও ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হারাতে থাকা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা ভালোভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির জয়ের হার ছিল ৫৫-৪৫। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০-৩৫ শতাংশের বেশি জয় পেয়েছে কি-না সন্দেহ।
আওয়ামী লীগের অপ্রত্যাশিত এই দুরবস্থার জন্য দায়ী তিনটি কারণ আমি নির্ণয় করেছি। এক. দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা দলে উপেক্ষিত। তারা দলকে এনে দিতে পারেন দলের ভেঙে যাওয়া সংহতি। জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে উজ্জীবিত করতে পারেন নেতাকর্মীদের। সেই অভিজ্ঞতা, দক্ষতা তাদের কিন্তু আছে। কিন্তু না কেবিনেটে থাকা, না দলের মূল সাংগঠনিক ধারায় থাকা এই জ্যেষ্ঠ নেতারা, ওবায়দুল কাদের এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো দু'একজন ছাড়া, প্রায় সবাই উদাসীন এবং উপেক্ষার অভিমানে প্রায় নিষ্ক্রিয়। জেলা পর্যায়ের নেতারা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতারা ক্ষমতা লাভের পর রাজনীতির চেয়ে মুজিব কোট চড়িয়ে তদবিরবাজি করতে বেশি ব্যস্ত। বেশিরভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং এমপি প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশে শুক্র এবং শনিবার নির্বাচনী এলাকায় যান বটে। তবে তাদের অধিকাংশই দল সংগঠন, দল জোরদার করার চেয়ে বেশি উৎসাহী এলাকার সব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হতে এবং যার যার প্রটোকল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। এ রকম চলতে থাকলে আওয়ামী লীগ নোঙরহারা একটা নৌকার মতো উদ্দেশ্যহীন হয়ে ভাসতে থাকবে। গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জোয়ার ওঠায় যারা পাস করেছিলেন, শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন_ সাংগঠনিক দুর্বলতার বর্তমান ধারা চলতে থাকলে তাদের অনেকেরই নির্বাচনী ভরাডুবি কেউ রুখতে পারবে না। এ রকম একটা ওয়ার্নিংই পাওয়া গেছে উপজেলা ও ইউনিয়ন স্তরের নির্বাচন থেকে।
দলের ওপর স্থানীয় নেতৃত্বের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। প্রধানত এই কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন স্তরের নির্বাচনে একই আসনে আওয়ামী লীগের চার-পাঁচজন প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখি। সে ক্ষেত্রে বেশিরভাগ নির্বাচনী আসনে বিএনপি দিয়েছে একক প্রার্থী। কোথাও কোথাও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও দাঁড়িয়েছেন। তবে অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী যে নিজেদের ভোট ভাগাভাগির কারণে হেরেছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।
দুই. আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনগুলো তৃণমূল পর্যায়ে পেঁৗছে দেওয়ার বাহন হতে পারত যে মিডিয়া, সেই মিডিয়া শক্তিতে আওয়ামী লীগ শুধু দুর্বলই নয়, মিডিয়া শক্তিকে তারা তেমন গুরুত্বই দেয় না। তথ্য মাধ্যমকে নিজেদের পক্ষে ধরে রাখাও তো রাজনীতির জন্য অশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই ব্যাপারে যেন গুরুত্ব দিতেই নারাজ। এ জন্য দেখি যে মিডিয়া এই কিছুকাল আগেও আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী জয়ে এবং দেশ পরিচালনায় প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত ছিল, সেই মিডিয়া আজ ত্রিধাবিভক্ত। কোনো কোনো মিডিয়া সরাসরি সরকারের বিপক্ষে চলে গেছে, কোনো মিডিয়া এদিকে আছে, ওদিকেও আছে। আবার কোনো কোনো মিডিয়া সরকারকে ওঠাতে গিয়ে হয় সরকারকে ডুবিয়ে দেয় নতুবা অযোগ্যতা ও দক্ষতার অভাবে প্রচার-প্রভাবে নিজেরাই মার খেয়ে লাট হয়ে পড়ে। মিডিয়াকে আওয়ামী লীগ এমনই উপেক্ষার চোখে দেখে যে, মিডিয়া পরিচালনায় যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জনবিচ্ছিন্ন কিংবা যারা শুধু সরকার মিডিয়াকে সর্বাত্মক স্বাধীনতা দিয়েছে বলে বক্তৃতা দিয়েই নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য শেষ করে তাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। জনবিচ্ছিন্ন সাবেক আমলারা দেশ শাসনের কী বোঝেন? মিডিয়া পরিচালনার কলাকৌশল কতটা বোঝেন? এই প্রশ্ন নিশ্চয়ই অপ্রাসঙ্গিক নয়।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের বিশেষ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। বঙ্গবল্পুব্দর নেতৃত্ব এবং মুজিবনগর সরকারের কৃতিত্ব ছিল সুবিশাল। হক কথা নামে একটা পত্রিকা এবং হলিডে নামের ইংরেজি সাপ্তাহিকটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন, নেতিবাচক সব খবর ছাপিয়ে গর্তে লুকিয়ে থাকা আলবদর, রাজাকার, আলশামসদের কীভাবে জাগিয়েছিল, কীভাবে দুটি পত্রিকা সদ্য জন্ম নেওয়া জাসদ এবং জাসদের হঠকারিতাকে পরিপুষ্টি জুগিয়েছিল, সেই বৃত্তান্ত আওয়ামী লীগের অত সহজে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
তিন. সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করা এবং এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা কে কী করছেন_ এসব পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সর্বদাই তার দলের সাবেক ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতেন। এর ফল পাওয়া যেত চমৎকার। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাকি চাটুকারবর্গ ও সাবেক আমলাদের দ্বারা এমনই পরিবেষ্টিত হয়ে থাকেন যে, সাবেক ছাত্রনেতাদের পক্ষে সেই বূ্যহ ভেদ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং দেশের প্রচারমাধ্যমের কখনও কিছুটা, কখনও অনেকটা সরকারের বিপক্ষে চলে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত সহসাই। জনবিচ্ছিন্ন সাবেক আমলা এবং আনাড়ি মন্ত্রীদের দিয়ে সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব নয় কোনোক্রমেই। বর্তমানে উপেক্ষিত এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের দলের সাংগঠনিক কাজে এবং কেবিনেটে স্থান দিয়ে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা এবং দেশ পরিচালনায় নতুন জোয়ার সৃষ্টি করার সুযোগ-অবকাশ অনেকটাই আছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বকে অবশ্যই বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে হবে, যদি দল ও সরকার আরও সুষ্ঠুভাবে তারা চালাতে চান।

রাহাত খান : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
 

No comments

Powered by Blogger.